কুমিল্লায় বাহার-সাক্কুর বাগযুদ্ধ ভাইরাল
এক সময়ের ঘনিষ্ঠতা বিষাদে পরিণত
একজন আওয়ামী লীগের সংসদ-সদস্য। আরেকজন বিএনপিদলীয় সাবেক সিটি মেয়র। এক সময় নানা বিতর্ক পাশ কাটিয়ে তাদের দুজনের সম্পর্ক ছিল মধুর। গত সিটি নির্বাচনের পর থেকে তাদের সম্পর্ক বিষাদে রূপ নিয়েছে। প্রায় প্রতিদিনই তারা নিজ নিজ দলীয় সভা-সমাবেশে একে অপরের বিরুদ্ধে বক্তব্য দিচ্ছেন। তারা হলেন-কুমিল্লা সদর আসনের এমপি ও মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি আ ক ম বাহাউদ্দিন বাহার এবং বিএনপিদলীয় সাবেক মেয়র মনিরুল হক সাক্কু। সম্প্রতি এমপি বাহার সাবেক মেয়র সাক্কুকে ‘ডাকাত’ আখ্যায়িত করে তার সম্পদ নিয়ে প্রশ্ন তোলেন এবং মোটা অঙ্কের ঘুসের বিনিময়ে ভবনের নকশা অনুমোদন দেওয়ার অভিযোগ করেন। এদিকে একাধিক সভায় এমপি বাহারকে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়ে পালটা বিভিন্ন অভিযোগ করেন সাক্কু। তাদের এই বাগযুদ্ধ এখন নেট দুনিয়ায় ভাইরাল। এ নিয়ে নগরজুড়ে চলছে আলোচনার ঝড়।
জানা যায়, ২০১২ ও ২০১৭ সালে কুমিল্লা সিটি নির্বাচনে মেয়র পদে আওয়ামী লীগের প্রার্থীদের পরাজিত করে সাক্কু মেয়র নির্বাচিত হন। এ সময় নানা উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ড পরিচালনা করতে গিয়ে এমপি বাহার ও সাক্কুর মধ্যে সখ্য গড়ে উঠে। এতে সাক্কু নিজ দলের অভ্যন্তরে ব্যাপক তোপের মুখেও পড়েন। ২০২২ সালের নির্বাচনে বাহারের অনুসারী মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আরফানুল হক মেয়র নির্বাচিত হন। এরপর থেকেই বাহার-সাক্কুর সম্পর্ক সাপে নেউলে।
৫ সেপ্টেম্বর কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া সরকারি কলেজ মাঠে মহানগর আওয়ামী লীগের ১১ নম্বর ওয়ার্ডের সম্মেলনে এমপি বাহার বলেন, ‘সাক্কু ছিল ডাকাত, কুমিল্লার মানুষের টাকা লুট করে সে কানাডায় ব্যবসা করে।’ এরপর ৭ সেপ্টেম্বর ১৩ নম্বর ওয়ার্ডের সম্মেলনে তিনি বলেন, ‘সাক্কু তিন টার্ম কুমিল্লার মেয়র ছিলেন। কিন্তু কোনো উন্নয়ন হয়নি। সাক্কু মেয়র ছিলেন, আকবর হোসেন মন্ত্রী ছিলেন। তারপরও কোনো উন্নয়ন হয়নি। কিন্তু আমি যখন এমপি হলাম, আমি টাকা এনে দিয়েছি, সাক্কু সাহেব লুটপাট করে নিয়ে গেছেন। কুমিল্লার মানুষের রক্ত বেচা টাকা দিয়ে তিনি ৭৮টি ফ্ল্যাট করেছেন। এই ৭৮টি ফ্ল্যাট কোথা থেকে এলো? সারা শহরে টাকা নিয়ে অপরিকল্পিতভাবে ভবনের প্ল্যান পাশ করেছেন।’ সর্বশেষ মঙ্গলবার রাতে নগরীর মুরাদপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ১৪ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সম্মেলনেও সাক্কুর বিরুদ্ধে একই অভিযোগ তোলেন তিনি।
এদিকে ৮ সেপ্টেম্বর নানুয়াদিঘির পাড়ে নিজ বাসভবনে ১৬ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির মতবিনিময় সভায় সাক্কু এমপি বাহারকে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়ে বলেন, ‘উনার (বাহার) জিদ হলো-আমি কেন নির্বাচন করলাম। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও আমি বিএনপির মনোনয়ন চাইব। দল মনোনয়ন না দিলে স্বতন্ত্র থেকে নির্বাচন করব। আমি মানুষের ভালোবাসা চাই। জনগণ যাকে খুশি তাকে ভোট দেবে।’
সাবেক এই মেয়র বলেন, ‘১২ বছর আমি ভালো ছিলাম। এখন খারাপ হয়ে গেছি। একযুগ সংসার করেছি। কাজের স্বার্থে উনার সঙ্গে আমার আন্তরিক সম্পর্ক ছিল। এখন আমি খারাপ। উনি এমপি, সরকার উনার। দেশে আইন আছে, প্রশাসন আছে। বিচার করবে সরকার, প্রশাসন। সিটি করপোরেশনে সব ফাইল আছে। উনাকে (এমপি) বলেন আমার বিরুদ্ধে মামলা দিতে।’ সাক্কু আরও বলেন, ‘আমি যদি চুরি করে থাকি? মামলা দেন। আপনি (এমপি) যদি বাঘের বাচ্চা হয়ে থাকেন আমার অনিয়ম বের করে মামলা দেন। ইনকাম ট্যাক্স অফিস আছে। তারা তদন্ত করবে। আমি ফেস করব।’
সাক্কু বলেন, ‘নির্বাচনের তফশিল ঘোষণা হউক আমি সব বলব। এখন বলার সময় হয়নি। এক হাতে তালি বাজে না। ভাই, এক হাতে কখনো তালি বাজে না। আমি চোর, উনি কিছু না। আমি ডাকাত, উনি কিছু না।’
দুই নেতার এই বাগযুদ্ধ এখন টক অব দ্য টাউন। নগরীর আনাচে-কানাচে চলছে আলোচনা-সমালোচনা। ফেসবুক ও ইউটিউবে মানুষ এসব বক্তব্য শুনছেন। তবে নির্বাচন ঘনিয়ে আসায় দুজন এ আসনে প্রার্থী হবেন এমনটা থেকেই পরস্পরের মধ্যে বিরোধ শুরু হয়েছে বলে মনে করছেন অনেকে।
এ বিষয়ে মনিরুল হক সাক্কু যুগান্তরকে বলেন, এমপি বাহাউদ্দিন আমার বিরুদ্ধে পরিকল্পিতভাবে অপপ্রচার চালাচ্ছেন। তিনি গায়ের জোরে ক্ষমতার প্রভাবে এসব বলছেন। যার কোনো ভিত্তি নেই। নগরীতে আমার নিজস্ব জমিতে একটি ডেভেলপার ভবন নির্মাণ করে। এতে শতাংশ হিসাবে আমি অনেক ফ্ল্যাট ভাগে পেয়েছি। আর শহরে কীভাবে ভবনের প্ল্যান পাশ হয়েছে, তিনি (এমপি) সবই জানেন। ১২ বছর তার সঙ্গে মিলে আমি সিটি করপোরেশন চালিয়েছি।
এদিকে মঙ্গলবার রাতে ১৪ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সম্মেলনে এমপি বাহাউদ্দিন বলেন, আমি কুমিল্লা পৌরসভাকে সিটি করপোরেশনে রূপান্তর করেছি। কুমিল্লার ব্যাপক উন্নয়ন করেছি। অথচ মেয়র (সাক্কু) বলছেন, আমি কী উন্নয়ন করেছি। তাকেও অনেক টাকার বরাদ্দ এনে দিয়েছিলাম। তিনি (সাক্কু) ১০ টাকার উন্নয়ন করে ৩ টাকা চুরি করেছেন। মোটা অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নিয়ে বড় বড় ভবনের প্ল্যান পাশ করেছেন।
সূত্রঃ যুগান্তর