কুমিল্লায় ফার্মেসি থেকে উধাও স্যালাইন
কুমিল্লায় ডেঙ্গু পরিস্থিতি ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। মৃতের সংখ্যা নেই কিন্তু আক্রান্তের তালিকাটা লম্বা হচ্ছে। ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীর পানিশূন্যতা ও রক্তের ঘনত্ব স্বাভাবিক রাখতে তাদের শিরায় স্যালাইন দিতে হয়।
আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় স্যালাইনের চাহিদা কয়েক গুণ বেড়ে গেছে। এর ফলে ডেঙ্গু চিকিৎসায় ব্যবহৃত পণ্যটির সংকট দেখা দিয়েছে।
বিশেষত কুমিল্লার ফার্মেসিগুলো থেকে এক প্রকার ‘উধাও’ হয়ে গেছে স্যালাইন। তবে হাসপাতালে কোনো সংকট নেই বলে জানিয়েছে কর্তৃপক্ষ।
রোগীরা আশঙ্কা করছেন, যেভাবে রোগী বাড়ছে তাতে হাসপাতালে সরকারি খরচে দেওয়া আইভি ফ্লুইড সরবরাহ যেকোনো সময় বন্ধ হয়ে যেতে পারে। এতে ডেঙ্গুর চিকিৎসায় ব্যবহার করা স্যালাইনের সংকট তীব্র হতে পারে।
প্রধানত শিরায় চার ধরনের স্যালাইন দেওয়া হয়। এর মধ্যে রয়েছে সাধারণ পানির ঘাটতি পূরণ, গ্লুকোজ স্যালাইন, হৃদরোগীদের স্যালাইন এবং ডায়রিয়া-কলেরা রোগীদের স্যালাইন। এর মধ্যে প্রথমটি বা সাধারণ স্যালাইন ডেঙ্গু চিকিৎসায় ব্যবহৃত হয়। দেশে যে হারে ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বাড়ছে তাতে হাসপাতালগুলোতে স্যালাইন সংকটের আশঙ্কা দেখা দিতে পারে। ইতোমধ্যে ওষুধের দোকানে পাওয়া যাচ্ছে না ডেঙ্গুর চিকিৎসায় ব্যবহৃত পণ্যটির।
কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল এলাকা ও সদর হাসপাতালে, কান্দিরপাড় সহ বিভিন্ন ফার্মেসি ঘুরে স্যালাইনের তীব্র সংকটের চিত্র দেখা গেছে। বিক্রেতাদের দাবি, গত দুই সপ্তাহ ধরে তাদের কাছে স্যালাইনের সরবরাহ নেই। তবে বিভিন্ন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বলছে, বাজারে স্যালাইনের সংকট থাকলেও হাসপাতালে কোনো সংকট নেই।
কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ৮ম তলায় ডেঙ্গু কর্নারে সরজমিনে ঘুরে দেখা যায়, হাসপাতালে অবস্থান করা প্রায় প্রত্যেক রোগীকে শিরায় দেওয়া স্যালাইন দেওয়া হচ্ছে। বেশিরভাগ রোগীর সরকারি স্যালাইন চললেও অনেকে বাইরে থেকে কেনা স্যালাইন দিচ্ছেন।
রোগী স্বজনরা বলছেন, ‘সাধারণত হাসপাতাল থেকেই একটা স্যালাইন দেয়। বাকি গুলো বাইরে থেকে বেশি দামে আনতে হয়।’ ৮৫ টাকার স্যালাইন বিক্রি হচ্ছে ২৫০ – ৩০০ টাকা।
ফয়জুন্নেসা স্কুলের সামনে থেকে হাসপাতালটিতে আসা তাসলিম আক্তারের মেয়ে বলেন, তার মা গত চারদিন ধরে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত। প্রাথমিক অবস্থায় বাসায় থেকে চিকিৎসা নিলেও হঠৎ তার (তাসলিম আক্তার) প্রচণ্ড বমি হওয়ায় ডেঙ্গু শনাক্তের তৃতীয় দিনে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। হাসপাতালে আসার পর থেকে মোট দুটি স্যালাইন দেওয়া হয়েছে। হাসপাতালের পক্ষ থেকে ওষুধ এবং একটি স্যালাইন দেওয়া হলেও বাকি দুটি স্যালাইন বাইরে থেকে কিনতে হয়েছে।
কুমিল্লা ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর সহকারী পরিচালক মো. আছাদুল ইসলাম বলেন, ফার্মেসি বিভিন্ন এলাকায় অতিরিক্ত মূল্যে স্যালাইন বিক্রি ও লুকিয়ে রেখে কৃত্রিম সঙ্কট সৃষ্টির অভিযোগে ৫ ফার্মেসীকে ৩৬ হাজার টাকা জরিমানা করেছি। আমরা প্রতিদিন ফার্মেসিতে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করছি এবং কোন ধরনের অনিয়ম পেলে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে।