কুমিল্লায় ভোট দিতে পারেননি তিন ইউপি চেয়ারম্যান প্রার্থী
ডেস্ক রিপোর্টঃ কুমিল্লা জেলার চার উপজেলার ১৫টি ইউনিয়ন পরিষদে বৃহস্পতিবার (২৮ ডিসেম্বর) নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। এর মধ্যে কুমিল্লার নাঙ্গলকোট উপজেলার আদ্রা দক্ষিণ ইউনিয়নে বিএনপি মনোনীত চেয়ারম্যান প্রার্থী মোহাম্মদ মাইন উদ্দিন, জামায়াত সমর্থিত প্রার্থী মাস্টার সাইফুল্লাহ ও ইসলামী আন্দোলনের প্রার্থী নাছির উদ্দীন মামুন নিজের ভোট দিতে পারেননি বলে অভিযোগ উঠেছে। তিন চেয়ারম্যান প্রার্থী বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘চাটিতলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ভোট দিতে গিয়েছি। বহিরাগত সন্ত্রাসীরা আমাদেরকে কেন্দ্রে প্রবেশ করতে দেয়নি। তাই আমরা ভোট দিতে পারিনি।’
এদিকে ১৫টি ইউনিয়নে বিএনপি মনোনীত ১২ চেয়ারম্যান প্রার্থীসহ ১৪ জন নির্বাচন বয়কট করেছেন। সরকার দলীয় চেয়ারম্যান প্রার্থীদের কেন্দ্র দখল, এজেন্টদের মারধর, জাল ভোট এবং অধিকাংশ ভোটকেন্দ্রে রাতেই নৌকার ব্যালেটে আগাম সিল মারার অভিযোগ এনে তারা নির্বাচন বয়কট করেন। তাদের অভিযোগ বিভিন্ন কেন্দ্রে সহকারী প্রিসাইডিং কর্মকর্তারা নিজেই প্রকাশ্যে ভোট দিয়েছেন এবং জাল ভোট দেওয়ার ব্যবস্থা করেছেন।
নাঙ্গলকোট উপজেলায় বিএনপি মনোনীত ৮ চেয়ারম্যান প্রার্থী, জামায়াত সমর্থিত এক প্রার্থী (স্বতন্ত্র) ও ইসলামী আন্দোলনের প্রার্থীসহ ১০ জন প্রার্থী দুপুরে জেলার নাঙ্গলকোট প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করে ভোট বর্জনের ঘোষণা দেন। এছাড়া লাকসাম উপজেলায় তিন ও লালমাই উপজেলার এক বিএনপি প্রার্থী দুপুরে সংশ্লিষ্ট ইউনিয়নে সংবাদ সম্মেলন করে নির্বাচন বয়কট করেন।
ভোট বয়কট করা নাঙ্গলকোট উপজেলার ৮ ইউনিয়নের চেয়ারম্যান প্রার্থীরা জানান, সকাল থেকেই উপজেলার ৮টি ইউনিয়নের অধিকাংশ ভোটকেন্দ্রই দখলে নেয় সরকার দলীয় নৌকার সমর্থকরা। এর আগে রাতেই অনেক ভোট কেন্দ্রে নৌকার ব্যালটে সিল মারা হয়েছে। এছাড়া সকালে বিএনপির এজেন্টদের কেন্দ্রের গেট থেকেই বের করে দিয়ে প্রকাশ্যে নৌকার ব্যালটে সিল মেরে বাক্স ভর্তি করা হয়। বিভিন্ন কেন্দ্রে সহকারী প্রিসাইডিং কর্মকর্তারা নিজেই প্রকাশ্যে ভোট দিয়েছেন এবং জাল ভোট দেওয়ার ব্যবস্থা করেছেন। এতে প্রশাসনের কাছে অভিযোগ করেও কোন ধরনের প্রতিকার পাওয়া যায়নি বলে চেয়ারম্যান প্রার্থীদের অভিযোগ।
ভোট বর্জনকারী চেয়ারম্যান প্রার্থীরা হলো আদ্রা দক্ষিণ ইউনিয়নের বিএনপির প্রার্থী মোহাম্মদ মাইন উদ্দিন, জামায়াত সমর্থিত প্রার্থী (স্বতন্ত্র) মাস্টার সাইফুল্লাহ ও ইসলামী আন্দোলনের প্রার্থী হাত পাখার নাছির উদ্দীন মামুন। আদ্রা উত্তর ইউনিয়নে মাহবুবা আক্তার, বড়তলী ইউনিয়নে গোলাম মাওলা, দৌলখাঁড় ইউনিয়নে মো. মোশারফ হোসেন, জোড্ডা পূর্ব ইউনিয়নে শফিকুর রহমান চৌধুরী, জোড্ডা পশ্চিম ইউনিয়নে শাহজাহান মজুমদার, রায়কোট উত্তর ইউনিয়নে মো. ইদ্রিস মিয়া এবং রায়কোট দক্ষিণ ইউনিয়নে নজরুল ইসলাম ভূঁইয়া।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, ৮ ইউনিয়নের ভোট বাতিল করে পুনরায় ভোট গ্রহণের জন্য রিটার্নিং অফিসারের কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন ৮ চেয়ারম্যান প্রার্থী।
আদ্রা দক্ষিণ ইউনিয়নের জামায়াত সমর্থিত প্রার্থী মাস্টার সাইফুল্লাহ ও ইসলামী আন্দোলনের প্রার্থী নাছির উদ্দীন মামুন সকাল ১০টায় চাটিতলায় সংবাদ সম্মেলন করে ভোট বর্জনের ঘোষণা দেন। এছাড়া লাকসাম উপজেলায় তিনটি ইউনিয়নের বিএনপি মনোনীত প্রার্থী বাকই দক্ষিণ ইউনিয়নে আনোয়ার হোসেন, মুদাফরগঞ্জ উত্তর ইউনিয়নে শাহ আলম, মুদাফরগঞ্জ দক্ষিণ ইউনিয়নে মো. আবুল বাসার ও লালমাই উপজেলার বাকই উত্তর ইউনিয়নে বিএনপি প্রার্থী দেলোয়ার হোসেন দুপুরে সংবাদ সম্মেলন করে ভোট বর্জনের ঘোষণা দেন।
চাটিতলা বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রের প্রিসাইডিং অফিসার ইবাল বাহার জানান, জাল ভোট এবং অনিয়মের বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
জেলা নির্বাচন অফিসার মো. খোরশেদ আলম বলেন, ‘জাল ভোটের বিষয়ে অভিযোগ পেয়েছি। এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’