স্ত্রীর কথা বলতেই কেঁদে ফেললেন আসিফ নজরুল
স্ত্রীর কথা বলতেই কেঁদে ফেললেন আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল। শনিবার সন্ধ্যায় রাজধানীর জাতীয় যাদুঘর মিলনায়তনে নিজের লেখা উপন্যাস ‘আমি আবু বকর’ নিয়ে অনুষ্ঠিত আলোচনা সভায় বক্তব্য রাখেন।
এ সময় স্ত্রীর কথা বলতে গিয়ে আসিফ নজরুল বলেন, আমি কিন্তু মাঝেমাঝে মন খারাপ করে আমার স্ত্রীকে বলি, আমার কি কোনদিন এই জীবন আসবে কিছু করতে হবে না আমার কিছুই চিন্তা করতে হবে না আমার। আমি শুধু ঘুমাবো আর লিখব আর লিখব। তো আমার স্ত্রী বলছে অবশ্যই আসবে। শখ করে কফি বানানো শিখছে বলে উল্লেখ করে তিনি বলেন, বলছে আমি কফির দোকান দেব তুমি শুধু লিখবা আর লিখবা।
তিনি বলেন, আমার লেখালেখির মাঝখানে প্রায় ১৫ বছর গ্যাপ ছিল। আমি যে ১৫ বছর পর লিখতে পেরেছি এটা আমার স্ত্রীর জন্য। আমি ওর প্রতি খুবই কৃতজ্ঞ। সবার সামনে বললাম ধন্যবাদ।
এমন একটা দেশে বসবাস করতেন উল্লেখ করে আসিফ নজরুল বলেন, আমার দুঃখ লাগে আমার বিশ্ববিদ্যালয়ে সবচেয়ে ঘনিষ্ট বন্ধু সে একজন বড় সরকারি কমকর্তা হওয়ার পর, সে আমাকে বলল আমি আর তোকে ফোন করব না তুইও আর আমাকে ফোন করবি না। এমনকি তার মেয়ের বিয়েতে, যে মেয়েকে আমি ছোট বেলায় কোলে নিয়েছি তার বিয়েতে আমাকে দাওয়াত দিল না।
ছাত্রলীগ নেতার কথা উল্লেখ করে আসিফ নজরুল আরও বলেন, দাওয়াত দিল আমাদের ক্লাসমেট এক ছাত্রলীগ নেতাকে। যার সঙ্গে কোনোদিন আমাদের কোনো রকম ফ্রেন্ডশিপ ছিল না। আমার কাছে তখন মনে হতো আমাকে যদি তার বিয়েতে দাওয়াত দিত তাহলে কি তার চাকরি চলে যেত?
তিনি আরও বলেন, শিবির ট্যাগ লিখতে পারে এই ভয়ে কেউ প্রোগ্রামে আসত না। একমাত্র আমি আসতাম। এমনকি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের যারা শিবিরের টিচার ছিল তারাও আসত না। একজনও আসত না। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে জামায়াতপন্থি হওয়ার কারণে যারা ভিসি হয়েছেন তারাও একজন আসতেন না, প্রত্যেকের নাম জানি।
আসিফ নজরুল বলেন, সর্বশেষ ঘটনা। রোজার মধ্যে কোরআন শরীফ পড়ানোর অপরাধে কতগুলো ছাত্রকে টেনে নিয়ে পিটালো ছাত্রলীগ। আমি একমাত্র শিক্ষক তাদের পাশে দাঁড়িয়ে ছিলাম।
নিজের লেখা উপন্যাসটি রচনার প্রেক্ষাপট ও প্রতিবন্ধকতা তুলে ধরতে গিয়ে ড. আসিফ নজরুল বলেন, ‘গত ১৫ বছরে আমরা যে নারকীয় শাসন সহ্য করেছি, এটার পেছনে আমাদের ‘কালেক্টিভ’ কাপুরুষতা ছিল। জানি না, আমরা কি পাপ করেছিলাম, যে দেশে শেখ হাসিনার মতো একটা শাসক পেয়েছিলাম। তিনি আমাদের সমস্ত সামাজিক সম্পর্ক নষ্ট করে দিয়েছিলেন। ট্যাগের রাজনীতি দিয়ে মানুষকে ভিক্টিমাইজ করার আওয়ামী লীগের রাজনীতিকে আমরা ঘৃণা করতাম। সেটা আমরা এখনো করে চলেছি।’
তিনি বলেন, বিগত সরকারের আমলে বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে সন্দেহ করে নয়, বরং নিশ্চিতভাবে জেনে বুঝেই অনেক ছাত্রকে মিথ্যাভাবে শিবির ট্যাগ দেওয়া হতো। তিনি বলেন, তারা জানতো এ ছেলেটা শিবির না, ছাত্রদল না; তা সত্ত্বেও তার ল্যাপটপটা নেওয়ার জন্য, বিনোদন করার জন্য, নিজেকে আরও বড় লিডার বানানোর জন্য বিভিন্ন ট্যাগ দিয়ে নির্যাতন করা হতো। গত ১৫ বছরের এই সমস্ত ব্যাধি থেকে আমরা এখনো মুক্ত হতে পারিনি। শেখ হাসিনার সরকারের দুঃসহ যন্ত্রণা থেকে আমরা জুলাই-আগস্টের গণঅভ্যুত্থানে মুক্তি পেয়েছি।
আইন উপদেষ্টা বলেন, আমরা গত সরকারের যে নিষ্ঠুরতা, নারকীয়তা, অনাচার, ট্যাগের রাজনীতি, অশ্লীলতা ও বৈষম্যের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়েছি, সেগুলো থেকে আমাদের অনেক ভালো হতে হবে। না হলে এতো ছাত্র-তরুণ মারা গেল, এতো মানুষের অঙ্গ হানি হলো, তাদের প্রতি চরম অশ্রদ্ধা হবে।
আসিফ নজরুল বলেন, বিগত সরকারের আমলে অলিখিত নিয়ম হয়েছিল বাংলাদেশে – তিনটা বিষয়ে কথা বলা যাবেনা। এর একটা হলো শেখ হাসিনা সম্পর্কে। দ্বিতীয়টা হলো ভারত সম্পর্কে। আসিফ নজরুল বলেন, সর্বশেষ ঘটনা। রোজার মধ্যে কোরআন শরীফ পড়ানোর অপরাধে কতগুলো ছাত্রকে টেনে নিয়ে পিটালো ছাত্রলীগ। আমি একমাত্র শিক্ষক তাদের পাশে দাঁড়িয়ে ছিলাম।