ঈদের আগেই সব শেষ, বাড়ি ফেরা হলো না বিজিবি সদস্য বেলালের

ঈদে বাড়ি ফিরে মা-বাবা, স্ত্রী ও দুই কন্যাকে নিয়ে আনন্দ করার পরিকল্পনা ছিল বেলাল হাসানের। ছুটি মঞ্জুর হওয়ায় বাবাকে ফোন করে বাড়ি ফেরার খবরও জানিয়েছিলেন তিনি। কিন্তু সেই আনন্দ আর করা হলো না। গত শুক্রবার (২১ মার্চ) গভীর রাতে দায়িত্ব পালনকালে পানিতে ডুবে মারা যান বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) সদস্য বেলাল হাসান।
গতকাল রোববার (২৩ মার্চ) দুপুরে কক্সবাজারের টেকনাফের শাহপরীর দ্বীপ গোলারচর এলাকায় বঙ্গোপসাগর থেকে তার মরদেহ উদ্ধার করা হয়।
নিহত বেলাল হাসান মুরাদনগর উপজেলার দারোরা ইউনিয়নের কাজিয়াতল গ্রামের বজলুর রহমানের ছেলে। তার ১৮ মাসের শিশু আনহা বিন হাসান ও আট বছর বয়সী আন্নাফি বিন হাসান নামে আরেক কন্যা সন্তান রয়েছে।
বেলাল হাসানের মৃত্যুতে পরিবারে শোকের মাতম চলছে। তার মা-বাবা ও স্ত্রী রোকসানা বারবার মূর্ছা যাচ্ছেন। সন্তান হারা মা বাকশক্তি হারিয়ে ফেলেছেন।
নিহতের ভাই নাজমুল হাসান বলেন, শনিবার (২২ মার্চ) বিকেলে বিজিবি থেকে তাদের বাড়িতে এসে বেলাল নিখোঁজ হওয়ার খবর দেয়। পরদিন দুপুরে কুমিল্লা বিজিবি ক্যাম্পে যাওয়ার পর তারা জানতে পারেন রাখাইন এলাকায় বেলালের মরদেহ পাওয়া গেছে।
নিহতের বাবা বজলুর রহমান ছেলের মৃত্যুকে রহস্যজনক বলে দাবি করেছেন। তিনি বলেন, ‘আমার ছেলের মৃত্যুটা রহস্যজনক মনে হচ্ছে। মনে হয় কিছু গোপন করা হয়েছে।’
বজলুর রহমান আরও বলেন, ‘ঈদে বাড়ি আসবে আমার ছেলে। ফোনে আমাকে জানাল। আমি কত খুশি হয়েছিলাম। আল্লাহ আমার ছেলেকে নিয়ে গেল।’
নিহতের স্ত্রী রোকসানা কান্না করতে করতে বলেন, ‘কথা ছিল ২৫ মার্চ ছুটি নিয়ে বাড়িতে আসবে। বাড়িতে ঈদ করবে। এখন আমাকে সাগরে ভাসিয়ে সে চিরকালের জন্য ছুটি নিয়ে চলে গেছে। দুটি অবুঝ শিশু সন্তান নিয়ে আমি এখন কোথায় দাঁড়াব।’
নিহতের ভাই নাসির উদ্দিন জানান, রোববার রাত ৮টার দিকে মরদেহ কুমিল্লার উদ্দেশে রওনা হয়। আজ সোমবার দুপুরে দাফন করা হবে।
গত শুক্রবার গভীর রাতে মিয়ানমার থেকে পালিয়ে বাংলাদেশে অনুপ্রবেশের সময় টেকনাফ সমুদ্রে রোহিঙ্গাদের বহনকারী নৌকাডুবির ঘটনা ঘটে। ওই সময় নারী-শিশুসহ ২৫ জন রোহিঙ্গাকে জীবিত উদ্ধার করা হয়। তখন বিজিবি সদস্য বেলাল হাসানসহ আরও বেশ কয়েকজন রোহিঙ্গা নিখোঁজ হন।