কুমিল্লার তরুণরা ঝুঁকছে জিমে
ডেস্ক রিপোর্টঃ কথায় আছে ‘স্বাস্থ্যই সকল সুখের মূল’। ছোট বেলায় এই কথাটি বই-পুস্তকে পড়েনি এমন লোকের সংখ্যা খুঁজে পাওয়াটা কষ্টকর হবে। তবে বাস্তবতা হলো নাগরিক জীবনে চিরচেনা এই কথাটি বর্তমানে বইতেই আবদ্ধ হয়ে আছে।
মাদকের ভয়াবহ ছোবলে যুব সমাজ ও তরুণরা আজ ধ্বংসের পথে। তবে বর্তমানে কুমিল্লাতে দেখা যাচ্ছে কিছু ব্যতিক্রমী চিত্র। তারুণ্যের উচ্ছ্বাস তাদের দেহমনে। আর সেটাকে আরো অটুট এবং সতেজ রাখতে শরীর চর্চায় মনোযোগী হয়ে উঠছেন তাঁরা। যার অন্যতম মাধ্যম জিমের যন্ত্রপাতি নিয়ে তরুণের দল ব্যস্ত ব্যায়ামে। পেছন ফিরে তাকানোর ফুসরৎ নেই কারো। ঘাম ঝরছে শরীরের। নিয়ম মেনেই চলছে একের পর অনুশীলন, খানিকটা বিরতি দিয়ে। নগরীর জিমগুলোর ভিতরে গেলে এরকম দৃশ্যই এখন চখে পড়ে। চারপাশটাও বেশ খোলামেলা। মৃদু যন্ত্রসঙ্গীতের (মিউজিক) সুর ভেসে আসছে। এর মধ্যেই চলছে প্রশিক্ষণ। থরে থরে সাজানো রয়েছে জিমের যন্ত্রপাতি। যে যার প্রয়োজন মতো ব্যবহার করছেন সেগুলো।
সরেজমিনে ঘুরে জানা গেছে, সীমান্তবর্তী কুমিল্লায় মাদকের আগ্রাসন থাকলেও কুমিল্লার বেশ কিছু তরুণরা মাদককে এক কথায় ‘না’ বলছে। আর তা ভালোভাবে বুঝা যায় নগরীতে গড়ে উঠা ৬টি জিমে গিয়ে। নিয়মিত শারিরীক ব্যায়ামের পাশাপাশি বডি বিল্ডিয়েংও নজর দিচ্ছেন তারা। জিম মালিকদের সাথে কথা বলে জানা যায় প্রতিদিন নিয়মিত ব্যায়াম করছেন প্রায় ৪’শ জন তরুণ-তরুণী। একটি জিমের সদস্য কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজের অনার্স ২য় বর্ষের শিক্ষার্থী রাফসান বললেন, ‘শরীর ফিট রাখতেই আমি জিমে ভর্তি হয়েছি। খালি হাতে এক্সারসাইজের চাইতে ইনস্ট্রুমেন্টাল এক্সারসাইজই আমার কাছে ভালো লাগে। জিমে সেই সুযোগ রয়েছে বলে এখানে আসা।’ একই কথা বলেছেন জিমের সদস্য আলী নেওয়াজ। তিনি পড়াশোনা করছেন কুমিল্লা কলেজের বিবিএ তৃতীয় বর্ষে। শরীরের যত্ন নেয়া, শরীর ভালো রাখার তাগিদেই জিমে ভর্তি হয়েছেন বলে জানালেন তিনি।
জানা গেছে, জিমগুলোতে অত্যাধুনিক যন্ত্রপাতির মধ্যে রয়েছে মাল্টিপারপাস মেশিন, চেস্ট প্রেস, রানিং মেশিন, স্মিথ মেশিন, বাটারফ্লাই, ক্রস বার, কুল ডাউন, ইলেকট্রিক কেব্ল রো, লেগ কার্ল প্রভৃতি।
নগরীর সাত্তার খান কমপ্লেক্সে প্রতিষ্ঠিত এস কে জিমের প্রশিক্ষক জাবেদ হাসমি জানান, এক সময় কুমিল্লার জিমগুলোর বেহাল অবস্থা থাকলেও বর্তমানে জিমগুলোতে অত্যাধুনিক যন্ত্রপাতির সমস্বয়ে নতুন অঙ্গিকে সাজানো হয়েছে। তিনি বলেন, বর্তমানে প্রতিদিন এক শ’ থেকে দেড় শ’ জন জিম করতে আসেন নিয়মিত।
নগরীর ইস্টার্ন এয়াকুব প্লাজায় জিমের স্বত্বাধিকারী বাপ্পি পারভেজ জানান, মাদকমুক্ত সমাজ গঠনের লক্ষ্যে আমি এই উদ্যোগ গ্রহণ করি। আপনারা জানেন শাসনগাছা এলাকাটি কুমিল্লার একটি চিহিৃত মাদকের স্পট। যার কারণে আমি চ্যালেঞ্জ নিয়ে এই এলাকার মধ্যেই ইস্টার্ন এয়াকুব প্লাজার ৬ষ্ঠ তলায় আমার প্রতিষ্ঠানটি স্থাপন করি। শুরুর ২ বছর আমাকে অনেক লোকসান দিয়ে প্রতিষ্ঠান চালাতে হয়েছে। তবে বর্তমানে আমার জিমে প্রায় ১ হাজার ৫’শ সদস্য রয়েছে। এরা নিয়মিত জিম করছে। এছাড়া বর্তমানে তরুণরাও জিমের প্রতি আগ্রহী হয়ে উঠছে বলে জানান তিনি। নগরীর কান্দিরপাড় আনন্দ সিটি সেন্টারে অবস্থিত বডি মেকার জিমের স্বত্বাধিকারী জোবায়ের জানান, আমাদের জিমটি নতুন দিয়েছি। ইতিমধ্যে ব্যাপক সাড়া পেয়েছি। বিশেষ করে তরুণদের। ভালোভাবে প্রশিক্ষণ দিচ্ছি । আশা করি তরুণরা আরো আসবে। নগরীর নজরুল এভিনিউতে অবস্থিত মার্সেল ফিটনেস জিমে সেন্টারের প্রশিক্ষক সাকিব আশরাফি জানান, তরুণদের অংশগ্রহণ ব্যাপক। বর্তমানে আমাদের জিমে অত্যাধুনিক সব যন্ত্রপাতির সমন্বয়ে সাজানো হয়েছে। তরুণরা এতে আরো উৎসাহিত হয়েছে। নগরীর নজরুল এভিনিউতে অবস্থিত রাশ ফিটনেস জিমের স্বত্বাধিকারী রোবেল জানান, আমাদের জিমটি নতুন। সেই হিসেবে অনেক সদস্য আছে। কুমিল্লার তরুণরা জিমে আগ্রহী। সব বয়সী মানুষই এখানে আসে তবে তরুণদের আগ্রহটা একটু বেশি। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, জিমগুলোতে নতুন কোন সদস্য ভর্তি হলে তাকে অন্তত ৫দিন খালি হাতে অথবা ফ্রি হ্যান্ড এক্সাসাইজ করতে হয়। এরপর থিউরি অনুযায়ী এক্সাসাইজ করানো হয়। এটা যার যার পারমঙ্গতার ওপর নির্ভর করে অর্থাৎ যে যতদিনে একটি ব্যয়াম আয়ত্ত করতে পারেন সে হিসেবে চলে তার প্রশিক্ষণ। জিমে ফিজিওথেরাপিস্ট নিয়োজিত রয়েছেন বিভিন্ন শারীরিক সমস্যার সমাধানের জন্য।
জানা গেছে, নগরীর জিমগুলোর সদস্য হতে হলে ভর্তির জন্য ফি এক হাজার টাকা এবং মাসিক ফি ৭ শ’ টাকা দিতে হয়। এছাড়া ভর্তির আবেদনের সঙ্গে দুই কপি পাসপোর্ট সাইজের ছবি এবং জাতীয় পরিচয়পত্রের ফটোকপি সংযুক্ত করতে। অন্যান্য জিমগুলোতেও প্রায় একই নিয়মে সদস্য হচ্ছে তরুণরা।