কদর বেড়েছে মুরাদনগরের সেই দিনমজুর মতিনের

ডেস্ক রিপোর্টঃ কুমিল্লার মুরাদনগর উপজেলার মোচাগড়া গ্রামের দিনমজুর আব্দুল মতিন মিয়া ও তার বাড়ি এখন বেশ আলোচিত। বিদ্যুৎ বিভাগের শীর্ষ কর্মকর্তাদের কাছ থেকে তার মোবাইলে ফোন আসছে। বাড়িতে পেয়েছেন বিদ্যুৎ সংযোগ। পরিবারের কাউকে চাকরি দেয়ার আশ্বাসও দেয়া হয়েছে। ক্ষতিপূরণ ও ক্ষমা প্রার্থনাও তো আছেই। অনিয়ম-দুর্নীতিতে নিমজ্জিত কুমিল্লা পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-১ এর অনেক কর্মকর্তা-কর্মচারীরই এখন গলদঘর্ম অবস্থা। পরিস্থিতি সামাল দিতে অনেকেই ছুটছেন নিরপরাধ দিনমজুর মতিনের বাড়িতে।

এদিকে বাড়িতে বিদ্যুৎ সংযোগ না থাকলেও ভুয়া বকেয়া বিলের কারণে দায়েরকৃত মামলায় তার জেলে যাওয়ার ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগ তদন্তে প্রাথমিকভাবে প্রমাণিত হওয়ায় বিদ্যুৎ বিভাগের ১১ জন লাইনম্যান, লাইন নির্মাণ পরিদর্শক, ওয়্যারিং পরিদর্শক, মেসেঞ্জার, বিলিং সহকারী ও জুনিয়র ইঞ্জিনিয়ারকে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করেছে বাংলাদেশ পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড (আরইবি)।

শনিবার আরইবির চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল মুঈন উদ্দিন ফোনে আব্দুল মতিনের সঙ্গে কথা বলে দুঃখ প্রকাশ করেন। মুঈন উদ্দিন জানান, এই ধরনের ঘটনা যাতে আর না ঘটে, সে জন্য সংশ্লিষ্ট সবাইকে সতর্ক করতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে।

এছাড়াও এরই মধ্যে কুমিল্লা পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি ১-এর জেনারেল ম্যানেজারও দিনমজুর মতিনের বাড়িতে গিয়ে দুঃখ প্রকাশ করে ক্ষমা প্রার্থনা করেছেন। মতিনকে আর্থিকভাবে ক্ষতিপূরণ দিয়েছে আরইবি। মতিনের বাড়িতেও তাৎক্ষণিকভাবে বিদ্যুৎ সংযোগ দেয়া হয়েছে।

এর আগে দিনমজুর আব্দুল মতিনকে নিয়ে গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশের পর এ ঘটনায় জেলার দেবিদ্বার জোনাল অফিসের ডিজিএম মৃণাল কান্তিকে প্রধান করে দুই সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়। তাদের প্রাথমিক তদন্তে সংশ্লিষ্ট ১১ জনকে বরখাস্ত করার সুপারিশ করা হয়।

এদিকে সমিতির একাধিক সূত্র জানায়, ভুয়া বিলে মতিনের জেলে যাওয়ার ঘটনায় কোম্পানীগঞ্জ জোনাল অফিসের ডিজিএম মো. হাবিবুর রহমানের বিষয়ে তদন্ত করা হচ্ছে। সংশ্লিষ্টতা পাওয়া গেলে তার বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেয়া হবে।

কুমিল্লা পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-১ এর জেনারেল ম্যানেজার প্রকৌশলী মো. মোস্তাফিজুর রহমান জানান, ঘটনায় সংশ্লিষ্ট লাইনম্যান, লাইন নির্মাণ পরিদর্শক, ওয়্যারিং পরিদর্শক, মেসেঞ্জার, বিলিং সহকারী, জুনিয়র ইঞ্জিনিয়ারসহ যারা সরাসরি জড়িত তাদের বরখাস্ত করা হয়েছে। এ ধরনের ঘটনা যাতে আর না ঘটে সেজন্য সংশ্লিষ্ট সবাইকে সতর্ক করতে আজ রোববার বিকেল ৪টায় আরইবি’র ৮০টি সমিতির সঙ্গে একযোগে ভিডিও কনফারেন্সের আয়োজন করা হয়েছে।

উল্লেখ্য, গত ২০১৫ সালের ২২ মার্চ আব্দুল মতিন মিয়ার নামে বরাদ্দকৃত মিটারটি প্রতিবেশী সফিকুল ইসলামের ঘরে সংযোগ দেয়া হয়। কিন্তু ১৭ মাস বিদ্যুৎ বিল বকেয়া রাখা হয়। এতে ১৭ মাসের বকেয়া বিদ্যুৎ বিল চার হাজার সাত টাকা আদায়ের জন্য কুমিল্লা পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-১ এর চান্দিনা অফিসের এজিএম লক্ষ্মণ চন্দ্র পাল বাদী হয়ে মামলা করেন। ওই মামলায় গত মঙ্গলবার রাতে মুরাদনগর থানার এসআই কবির হোসেনের নেতৃত্বে একদল পুলিশ আব্দুল মতিন মিয়াকে গ্রেফতার করে। বুধবার দুপুরে তাকে আদালতের মাধ্যমে কুমিল্লার কারাগারে পাঠানো হয়। এ খবর বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশের পর গত বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ লিগ্যাল এইড সার্ভিস ট্রাস্টের (ব্লাস্ট) আইনি সহায়তায় জেল থেকে জামিন লাভ করেন নিরপরাধ আব্দুল মতিন মিয়া।

আরো পড়ুন