কুমিল্লার খাদি কাপড়ের বিক্রি নেমে গেছে ৫০ শতাংশের নিচে

কুমিল্লার ঐতিহ্যের স্মারক খাদি কাপড়। দেশজুড়ে এই কাপড়ের ব্যাপক চাহিদা থাকলেও করোনার কারণে এর চাহিদা অর্ধেকের নিচে নেমে এসেছে। গত ৫ মাসে ১৮০ কোটি টাকার খাদি কাপড় কম বিক্রি হয়েছে কুমিল্লায়। এতে লোকসানের মুখে পড়ে অনেক প্রতিষ্ঠান তাদের প্রায় ১ হাজার কর্মচারী ছাঁটাই করেছেন বলে খবর পাওয়া গেছে। এছাড়া নগরীর দোকানগুলোতে বিক্রি কম হওয়ায় কাপড়ের উৎপাদনও কমে গেছে প্রায় অর্ধেক।

জানা গেছে, কুমিল্লা জেলায় খাদি কাপড় বিক্রির অন্তত চার শতাধিক দোকান রয়েছে। করোনার কারণে গত এপ্রিল-মে এসব দোকান পুরোপুরি দোকান ছিল। জুন থেকে সীমিত পরিসরে দোকান খুললেও বিক্রি কমে যায়।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ১৯২১ সালে মহাত্মা গান্ধীর আহ্বানে সমগ্র ভারতবর্ষে অসহযোগ আন্দোলনের সময় কুমিল্লায় খাদি শিল্প প্রতিষ্ঠা লাভ করে। সেই সময় বিদেশি পণ্য বর্জন করার জন্য ডাক ওঠে। সর্বত্র এক আওয়াজ ‘মোটা কাপড়-মোটা ভাত’। সেই মোটা কাপড় এখন মিহি হয়েছে। কাপড়ে লেগেছে নান্দনিকতার ছোঁয়া। বর্তমান খাদির পাঞ্জাবি, শার্ট, প্যান্ট, ফতুয়া, চাদর ও থ্রিপিস বিক্রি হচ্ছে পুরো দেশেই।

কুমিল্লা নগরীর দোকানিরা জানান, শুধুমাত্র রমজানের ঈদেই কুমিল্লায় ১২০ কোটি টাকার মতো খাদি কাপড় বিক্রি হতো। পুরো বছরের ঘাটতি পুষিয়ে যেতো রোজার ঈদে। স্বভাবিক সময়ে প্রতিমাসে ২৪ কোটি টাকার কাপড় বিক্রি করেন তারা। করোনার কারণে এবারের রমজানের ঈদ পড়ে যায় সাধারণ ছুটির কবলে। সাধারণ ছুটি শুরু হওয়ার পর প্রথম দুই মাসে ১৪৪ কোটি টাকার খাদি কাপড় কম বিক্রি হয়। ছুটি শেষ হওয়ার পর ধীরে ধীরে ক্রেতা বাড়তে থাকলেও বিক্রি কমে যায় প্রায় অর্ধেক। বিভিন্ন জেলা-উপজেলায় পাইকারিতে প্রচুর খাদি কাপড় বিক্রি হলেও এখন তা কমে গেছে ৮০ ভাগ। জুন থেকে সেপ্টেম্বরের ১৫ তারিখ পর্যন্ত আরও ৩৬ কোটি টাকার খাদি কাপড় কম বিক্রি হয়েছে। বর্তমানে খাদি কাপড়ের বিক্রি ৫০ শতাংশের কাছাকাছি। এর মধ্যে ১৫ শতাংশ বিক্রি হচ্ছে অনলাইনে। কিছু প্রতিষ্ঠান অনলাইন ব্যবসা চালু রেখেছে। আবার অনেকে পণ্য ছেড়ে দিচ্ছেন মধ্যস্বত্বভোগীদের হাতে।

এদিকে, টানা দুই মাস দোকান বন্ধ ও দোকান খোলার পর বিক্রি কমে যাওয়ায় অনেক প্রতিষ্ঠানে প্রায় এক হাজার কর্মচারী ছাঁটাই করেছে বলে খবর পাওয়া গেছে। এসব কর্মচারীরা জীবন বাঁচানোর তাগিদে অনেকে অটোরিকশার চালক, ভ্রাম্যমাণ সবজি ও ফল বিক্রেতাসহ নানা পেশা বেছে নিয়েছেন বলে জানা গেছে।

গত প্রায় ৫০ বছর ধরে জেলার দেবিদ্বার উপজেলার বরকামতায় খাদি কাপড় উৎপাদন করেন সীতাহরণ দেবনাথ। তিনি জানান, এ কাপড় উৎপাদনের সাথে বেশকিছু বিষয় জড়িত আছে। তা হচ্ছে তাঁতি, সুতা কাটুনী, ব্লক কাটার ও রঙের কারিগর। বংশ পরম্পরায় তাঁতির কাজ করা লোকের অভাব কয়েক বছর ধরে। করোনায় উৎপাদন কম হওয়ায় তাঁতির সংখ্যা আরও কমেছে।

নগরীর মনোহরপুরের খাদি ভূষণের ব্যবস্থাপক স্বপন ভট্টচার্য বলেন, আমার দোকানে প্রতিদিন গড়ে ৩০ হাজার টাকার খাদি কাপড় বিক্রি হতো। কুমিল্লায় বেড়াতে আসা পর্যটকরা খাদি কাপড় নিয়ে যেতেন। অন্যান্য জেলার খুচরা দোকানদাররাও খাদি কাপড় কিনতেন কুমিল্লা থেকে। করোনার কারণে ভ্রমণ ও চলাচলে সীমাবদ্ধতার কারণে খাদি কাপড়ের বিক্রি অনেক কমে গেছে।

নগরীর কান্দিরপাড়ের খাদি কুটির শিল্প ভবনের স্বত্বাধিকারী তপন ভট্টচার্য জানান, ১৯৩১ সাল থেকে বংশ পরম্পরায় তাঁরা খাদি কাপড়ের ব্যবসা করছেন। করোনায় বিক্রি নেমে গেছে ৫০ শতাংশের নিচে।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে কুমিল্লার দোকান মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আতিক উল্লাহ খোকন বলেন, করোনার প্রভাবে বেশিরভাগ ব্যবসাতেই ধস নেমেছে। খাদি যেহেতু আমাদের ঐতিহ্যের ধারক, সেহেতু এর সংকট কাটানোর জন্য কী করণীয় তা আগে নির্ধারণ করা হবে বলে জানান তিনি।

আরো পড়ুন