কুমিল্লার নিমসারে দোকান বানাতে ভরাট হচ্ছে শতবর্ষী পুকুর

কুমিল্লার নিমসার কাঁচাবাজারের অস্তিত্ব হুমকির মুখে পড়েছে। দেশের অন্যতম বৃহৎ এই সবজি বাজারটি ঘিরে অশুভ তৎপরতা চালাচ্ছে স্থানীয় একটি প্রভাবশালী চক্র। নিজেদের ফায়দা লুটতে যত্রতত্র দোকানপাট তুলে বাজারটিকে অস্থির পরিস্থিতির মধ্যে ঠেলে দিয়েছে তারা। শুধু তাই নয়, দোকান নির্মাণের জন্য এলাকার প্রায় শত বছরের পুরোনো একটি পুকুরের অনেকখানি ভরাট করে ফেলেছে। এরই মধ্যে বিভিন্ন ব্যবসায়ীর কাছ থেকে আড়ত দেওয়ার নামে লাখ লাখ টাকাও হাতিয়ে নিয়েছে চক্রটি। পুকুরের ভরাটকৃত অংশ ও সংলগ্ন ব্যক্তি মালিকানাধীন কিছু জায়গায় স্থাপনা গড়ে তুলে ব্যবসায়ীদের মাত্র কয়েকজনকে আড়তে ওঠানো হলেও বেশিরভাগেরই স্থান সংকুলান হয়নি। এই ব্যবসায়ীরা একদিকে অগ্রিম দেওয়া টাকা ফেরত পাচ্ছেন না, আবার প্রভাবশালী চক্রের চাপের কারণে পূর্বদিকে গরুবাজার সংলগ্ন এলাকায় প্রশাসনের সবুজ সংকেত নিয়ে বৈধভাবে ব্যক্তি মালিকানার জমিতে গড়ে তোলা আড়তগুলোতেও যেতে পারছেন না। এ অবস্থায় নিমসার কাঁচাবাজারে দীর্ঘদিন ব্যবসা করে এখন তারা বড় ধরনের সংকটের মধ্যে পড়েছেন। অন্যদিকে একটি মহলের অপতৎপরতার কারণে পুরো বাজারটির অস্তিত্বও এখন হুমকির সম্মুখীন।

সম্প্রতি সরেজমিন ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কসংলগ্ন নিমসার বাজার এলাকায় শত বছরের পুরোনো পুকুরটির একাংশ ভরাট করে দোকানপাট গড়ে তুলতে দেখা যায়। এলাকার পরিবেশ সচেতন মানুষের মধ্যে এ নিয়ে তীব্র ক্ষোভ দেখা দিয়েছে। তারা ঐতিহ্যবাহী পুকুরটিকে রক্ষা করার জন্য অবিলম্বে পরিবেশ অধিদপ্তরসহ প্রশাসনের সংশ্নিষ্ট সবার হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।

স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, মহাসড়কের দু’পাশে প্রায় এক বর্গকিলোমিটার এলাকাজুড়ে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা নিমসার কাঁচাবাজারটি সম্প্রতি উচ্চ আদালতের নির্দেশনা অনুযায়ী বৈধ জায়গায় সরানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়। সেই লক্ষ্যে পুরোনো গরুর বাজারসংলগ্ন ব্যক্তি মালিকানাধীন জমি ভরাট করে শতাধিক আড়তঘর নির্মাণ করা হয়। স্থানীয় বুড়িচং উপজেলা প্রশাসন থেকে ইজারার ব্যবস্থাও করা হয়। মূলত বাজারটি ইজারার পর থেকে স্থানীয় সামসুল হক মুন্সীর নেতৃত্বে একটি চক্র ব্যবসায়ীদের সেখানে যেতে বাধা দেয়। তারা নিমসার উচ্চ বিদ্যালয় ও মসজিদের পাশের শত বছরের পুরোনো একটি পুকুর ভরাট করে সেখানে অলিখিত বাজার বসাতে শুরু করে। বিভিন্ন আড়তদারের কাছ থেকে বড় অঙ্কের টাকা নিয়ে পজেশন বিক্রি করে তারা।

হয়রানির ভয়ে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক ব্যবসায়ী অভিযোগ করেন, এলাকার পড়িহলপাড়া গ্রামের বাসিন্দা সামসুল হক মুন্সীর নেতৃত্বে স্থানীয় মোকাম ইউপি চেয়ারম্যান ফজলুল হক মুন্সীর ছেলে ইমাম হোসেন, ইকরাম, মিন্টু, পিন্টু ও জাকির মুন্সীসহ ১০-১২ জনের একটি সিন্ডিকেট পুকুর ভরাট করে সেখানে অলিখিত বাজার বসিয়ে টোল আদায় করছে। বাজারটি পাইকারি হওয়ায় রাত বাড়ার সঙ্গে এখানে ব্যস্ততা বাড়তে থাকে। দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা সবজির ট্রাক, কাভার্ডভ্যান, পিকআপ মহাসড়কের ওপর রেখেই পণ্য খালাস করা হয়। এতে প্রতিদিনই মধ্যরাত থেকে পরদিন সকাল পর্যন্ত মহাসড়কের ওই স্থানে যানবাহন আটকে পড়ে। প্রায়ই ছোট-বড় দুর্ঘটনাও ঘটে।

অভিযোগ পাওয়া গেছে, প্রভাবশালী লোকজন টোল আদায় করে নিজেরাই টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। ফলে সরকার বঞ্চিত হচ্ছে বিপুল অঙ্কের রাজস্ব থেকে। স্থানীয় ব্যবসায়ীদের আশঙ্কা, অবৈধভাবে এ রকম একটি বাজার পরিচালনা করার কারণে রাজস্ব ক্ষতি এবং মহাসড়কে যানজটসহ বিভিন্ন কারণে মূল বাজারটিই হয়তো এক সময় বন্ধ হয়ে যাবে। তারা এ বিষয়ে প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।

এদিকে সংশ্নিষ্ট সূত্র জানায়, পুকুর ভরাট করে অবৈধভাবে বাজার বসানোর ঘটনায় পড়িহলপাড়া গ্রামের আবদুল আওয়াল কুমিল্লার আদালতে ওই স্থানের মালিকানা দাবি করে একটি মামলা করেছেন। আদালত সংশ্নিষ্ট থানা পুলিশকে তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন।

বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে নিমসার বাজারের ইজারাদার আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, অবৈধভাবে অন্যত্র বাজার বসার কারণে তিনি আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। এ ব্যাপারে দ্রুত প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য তিনি প্রশাসনের কাছে আবেদন জানিয়েছেন।

জানতে চাইলে বুড়িচং থানার দেবপুর ফাঁড়ির এসআই নন্দন চন্দ্র সরকার বলেন, আদালতের নির্দেশ পেয়েছি।

শিগগির তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেব।

পুকুর ভরাট ও ইজারা ছাড়াই বাজার পরিচালনার বিষয়ে জানতে চাইলে সামসুল হক মুন্সী পুকুর ভরাটের কথা স্বীকার করেন। তিনি বলেন, এটা আমাদের নিজস্ব পুকুর। আর বাজার পরিচালনা করে আমার ভাতিজারা। মহাসড়কে ছোটখাটো যানজট সব জায়গাতেই হয় বলে দাবি করেন তিনি।

বুড়িচং উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ইমরুল হাসান বলেন, কোনোভাবেই রাজস্ব ছাড়া বাজার চলতে পারে না। কেউ অভিযোগ করলে ব্যবস্থা নেব।

সূত্রঃ সমকাল

আরো পড়ুন