কুমিল্লায় ইচ্ছামতো ফি আদায় করছেন চিকিৎসকরা

ডেস্ক রিপোর্টঃ কুমিল্লায় কর্মরত চিকিৎসকরা মাত্রাতিরিক্ত ব্যবস্থাপত্র ফি নিচ্ছেন। সরকারি নীতিমালা না থাকার সুযোগে ইচ্ছামতো ব্যবস্থাপত্র (প্রেসক্রিপশন) ফি নেওয়ার কারণে স্বল্প আয়ের রোগীরা এর ভুক্তভোগী হচ্ছেন। এমনকি এ মানবিক পেশাজীবীদের অনেকের বিরুদ্ধে অমানবিক অনেক অভিযোগও রয়েছে। এ ক্ষেত্রে কমিশন পাওয়ার লোভে অপ্রয়োজনীয় পরীক্ষা-নিরীক্ষা দিয়ে সাধারণ রোগীদের হয়রানি, অভিজ্ঞতার কথা বলে, আবার কোনো কোনো ক্ষেত্রে বিদেশ ভ্রমণ শেষে দেশে ফিরেই ফি বাড়িয়ে দেওয়া, রোগীকে পর্যাপ্ত সময় না দেওয়ার মতো অভিযোগ রয়েছে অনেক চিকিৎসকের বিরুদ্ধে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ব্যবস্থাপত্র ফি বাবদ কোনো কোনো চিকিৎসক মাসে অন্তত ৩০ লাখ টাকার বেশি আয় করেন। কিন্তু এ ক্ষেত্রে যথাযথ ট্যাক্স তাঁরা সরকারকে দেন না।

অনুসন্ধানে দেখা গেছে, কুমিল্লার ডা. ম্রুনালিনী শর্মার কাছে চিকিৎসা নিলে ব্যবস্থাপত্র ফি দিতে হয় এক হাজার টাকা। শর্মা কেয়ার নামের একটি ক্লিনিকে তিনি চিকিৎসাসেবা দেন। প্রতিদিন তিনি শতাধিক রোগী দেখেন। কুমিল্লার বেশির ভাগ চিকিৎসকের ফি ৮০০ টাকা। তাঁদের মধ্যে রয়েছেন সান মেডিক্যাল সার্ভিসেসের অধ্যাপক মো. আবদুল লতিফ, আজিজুল হক, শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ কে এ মান্নান, ইউরোলজিস্ট অধ্যাপক এইচ আর হারুন প্রমুখ। ৭০০ টাকা ব্যবস্থাপত্র ফি নেন বোরহান উদ্দিন আহমদ শাহিন, প্রসূতি ও স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক শামছুন নাহার, শিশু ও হূদরোগ বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক মুহাম্মদ জাহিদ হোসেন, কুমিল্লা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের অর্থোসার্জারির অধ্যাপক ও বিভাগীয় প্রধান মো. আনোয়ারুল আজিম, মনোরোগ বিশেষজ্ঞ মো. সাহেদুল ইসলাম, শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ মহিউদ্দিন দীপু, মো. ইকবাল আনোয়ার, মেডিসিন ও ডায়াবেটিস রোগ বিশেষজ্ঞ তারেক আহম্মেদ, বক্ষব্যাধি বিশেষজ্ঞ মো. জহিরুল হক, স্নায়ু ও মেডিসিন বিশেষজ্ঞ পঞ্চানন দাশ প্রমুখ চিকিৎসক।

৬০০ টাকা করে ব্যবস্থাপত্র ফি নেন প্রসূতি ও স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞ মলিনী রানী কুণ্ডু, নুরুন নাহার, তাসলিমা বেগম, মিজানুর রহমান, মুক্তি হাসপাতালের ডা. দিলরুবা, নাক, কান ও গলারোগ বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক মো. হারুন অর রশীদ ভূঁইয়া, জেনারেল ও ল্যাপারোস্কোপিক সার্জারি বিশেষজ্ঞ মোহাম্মদ আলী, কুমিল্লা মেডিক্যাল সেন্টারের নাসির উদ্দিন মাহমুদ, স্পাইন অ্যান্ড ট্রমাটোলজি রোগ বিশেষজ্ঞ মো. সাফিউল ইমাম রাজীব, মেডিকেয়ার হাসপাতালের ইউরোলজি রোগ বিশেষজ্ঞ এম এম হাসান, অধ্যাপক মো. সিরাজুল হক, কুমিল্লা মেডিক্যাল সেন্টারের বেনালুল ইসলাম, নিউরোসার্জারি বিশেষজ্ঞ মো. তোফায়েল হোসেন ভূঁইয়া, কিডনি রোগ বিশেষজ্ঞ মেসবাহ উদ্দিন নোমান প্রমুখ।

এ ছাড়া ৫০০ টাকা করে ফি নেন ডা. পারভিন মুজিব, কামাল হোসেন, কামরুন নাহার, ফারজানা খন্দকার ঈশান, কানিজ ফারহানা, খালেদা আক্তার লাকী, ত্রিদিব কুমার কর, অধ্যাপক গোলাম মোস্তফা, মো. আনোয়ারুল আলম, মেডিসিন ও ডায়াবেটিস রোগ বিশেষজ্ঞ তারেক আহম্মেদ, ওরাল ও ম্যাক্সিলোফেসিয়াল সার্জারি বিশেষজ্ঞ মো. কামরুজ্জামান, ফ্যামিলি মেডিসিন কনসালট্যান্ট আশরাফ আলী খন্দকার, ইউরোলজিস্ট অধ্যাপক এইচ আর হারুন, সার্জারি বিশেষজ্ঞ আ ন ম জানে আলম, ডায়াবেটিস রোগ বিশেষজ্ঞ এ কে এম শামীম, শিশু ও কিডনি রোগ বিশেষজ্ঞ আবু নাসের মো. জোবায়ের প্রমুখ চিকিৎসক।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, কুমিল্লার বেশির ভাগ চিকিৎসক দিনে শতাধিক রোগী দেখেন। কারো কারো ক্ষেত্রে এটি কমবেশি। এ ক্ষেত্রে দেখা গেছে, কোনো কোনো চিকিৎসক মাসে অন্তত ৩০ লাখ টাকা আয় করে থাকেন। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক রোগী বলেন, ‘মানবিকতার নামে চিকিৎসকরা অমানবিক কাজ করছেন। ওনারা টাকার মেশিন হয়ে গেছেন।’

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, কোন চিকিৎসক কত টাকা প্রেসক্রিপশন ফি নেবেন এ বিষয়ে সরকারি কোনো নীতিমালা নেই। ১৯৮৪ সালে একটি নীতিমালা প্রণীত হয়েছিল। তাতে বিশেষজ্ঞ ৬০ টাকা ও সাধারণ এমবিবিএস চিকিৎসক ৪০ টাকা ফি নিতে পারবেন বলে নির্ধারণ করা হয়। কিন্তু এরপর দীর্ঘদিনেও ওই নীতিমালা হালনাগাদ না করায় চিকিৎসকরা ইচ্ছামতো ফি আদায় করছেন। শুধু তা-ই নয়, কোনো কোনো চিকিৎসকের বিরুদ্ধে কমিশন পাওয়ার লোভে অপ্রয়োজনীয় পরীক্ষা-নিরীক্ষা দিয়ে সাধারণ রোগীদের হয়রানির অভিযোগও রয়েছে।

অভিযোগ রয়েছে, সরকারি চিকিৎসকদের কেউ কেউ হাসপাতালে রোগী না দেখে প্রাইভেট ক্লিনিকে রোগী দেখেন। এ ক্ষেত্রে রোগীরা হাসপাতালে গেলে তাদের ক্লিনিকে যাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়। কুমিল্লার নুরপুরের বাসিন্দা নাসির উদ্দিন জানান, কুমিল্লা বক্ষব্যাধি ক্লিনিকে রোগী নিয়ে যাওয়ার পর সেখানকার অফিসার আজিমুর রহমান তাঁকে বলেন, কুমিল্লা ট্রমা সেন্টার ও গোমতী হাসপাতালে তাঁদের চিকিৎসক বসেন। সেখানে বক্ষব্যাধির চিকিৎসক ডা. ইমাম উদ্দিন ও অন্য একজন আছেন তাঁকে দেখাতে।

বক্তব্য জানতে ডা. ম্রুনালিনী শর্মাকে একাধিকবার ফোন করা হলেও তিনি তা রিসিভ করেননি।

এ প্রসঙ্গে কুমিল্লার সিভিল সার্জন ডা. মজিবুর রহমান জানান, আসলে সরকারিভাবে কোনো নীতিমালা না থাকায় যে যেভাবে পারছে তাদের ফি বাড়িয়ে নিচ্ছে। এতে রোগীরা হয়রানির শিকার হচ্ছে। কিন্তু চিকিৎসকদের উচিত, একটা নির্ধারিত মাত্রায় ফি নেওয়া। এ জন্য সরকারি একটা নীতিমালা খুব জরুরি হয়ে পড়েছে। তিনি বলেন, কোনো কোনো চিকিৎসক অপ্রয়োজনীয় পরীক্ষা-নিরীক্ষার পরামর্শ দিয়ে থাকেন, যা ঠিক নয়। রোগীদের তিনি সরকারি স্বাস্থ্যকেন্দ্রে কম খরচে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করার পরামর্শ দেন।

আরো পড়ুন