কুমিল্লায় ট্রাফিক পুলিশের ভূমিকায় কলেজ ছাত্ররা

ডেস্ক রিপোর্টঃ গত দু’দিন পূর্বেও কুমিল্লার যে সকল গুরুত্বপূর্ণ স্থান যানজটে নাকাল ছিলো, সোমবার থেকে ওই সব স্থানে সামান্য পরিমাণ যানজট পরিলক্ষিত হয়নি! অগোছালো রিকশা-সিএনজি অটোরিকশায় বিবর্ণ চত্বরগুলোকে বেশ সুশ্রী,পরিপাটি দেখাচ্ছে।

কুমিল্লার বিভিন্ন কলেজের রোভার স্কাউট সদস্যদের ট্রাফিক পুলিশের ভূমিকার কারণে বদলে গেছে দৃশ্যপট। মঙ্গলবার সরেজমিনে কুমিল্লা নগরীরর কান্দিরপাড় পূবালী চত্বর, লিবার্টি মোড়, টমছমব্রিজ এবং কারাগার সড়কে রোভার সদস্যদের ট্রাফিক পুলিশের ভূমিকা পালন করতে দেখা যায়। শ্রাবণ-রোদ্দুরে মুখে হুইসেল আর হাতে লাঠি নিয়ে রাস্তায় চমৎকার ভূমিকা পালন করতে দেখা গেছে ছাত্রদের। রাস্তায় যানজট নিরসনের পাশাপাশি যেখানে সেখানে ছড়িয়ে ছিটিয়ে পার্কিং করা গাড়িগুলোকে সারিবদ্ধ করতে বাধ্য করছে ছাত্ররা।

জেলা রোভার ও কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া সরকারি কলেজ রোভার স্কাউটের নেতৃত্বে ছোট ছোট দলে বিভক্ত হয়ে যানজট নিয়ন্ত্রণ করছে তারা।শহরের যেসব কলেজে রোভার স্কাউট চালু আছে ওইসব কলেজের শিক্ষার্থীরা ট্রাফিক পুলিশের ভূমিকা পালন করছে। কুমিল্লা জেলা রোভার স্কাউট সূত্রে জানা যায়, ট্রাফিক সপ্তাহ উপলক্ষে প্রতিদিন দুই শিফটে বিভক্ত হয়ে ৪০জন রোভার স্কাউট সদস্য নিয়মিত ট্রাফিক পুলিশকে সহায়তা করবেন। কুমিল্লার গণমুখী বিভিন্ন পয়েন্টে তারা এ সেবা কার্যক্রম পরিচালনা করবেন।

রোভারের সাংগঠনিক সিদ্ধান্ত অনুযায়ী পুরো মাস ধরে এ কার্যক্রম চলতে পারে বলে কুমিল্লার রোভার স্কাউট সূত্রে জানা গেছে। সকাল ১০টা থেকে ২টা এবং ২টা থেকে বিকেল ৬টা পর্যন্ত ছাত্রদের এ কার্যক্রম চলবে। সংগঠনের ছাত্রদের স্বেচ্ছাশ্রম আর জেলা রোভার কর্তৃক সামান্য আর্থিক সহযোগিতায় এ কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে ছাত্ররা।

রাস্তায় ট্রাফিক পুলিশের ভূমিকা পালন করা রূপসী বাংলা কলেজের দুই ছাত্র জুয়েল ও আরিফ জানায়, সারাদেশে নিরাপদ সড়কের দাবিতে ছাত্ররা আন্দোলন করছে। কুমিল্লার গুরুত্বপূর্ণ স্থান সমূহকে যানজট মুক্ত রাখতে জেলা রোভারের নির্দেশনায় স্ব-প্রণোদিত হয়ে কাজ করছি।
ইবনে তাইমিয়া কলেজের দুই ছাত্র আইনুল হাসান অনিক ও কাউসার হোসেন জিহাদ জানায়, সড়ককে যানজট মুক্ত ও নিরাপদ রাখতে কাজ করছি। কুমিল্লার জন্য সামান্য ভূমিকা রাখতে পেরে আনন্দ অনুভব করছি।

কুমিল্লা জেলার সিনিয়র রোভারমেন্ট প্রতিনিধি মো. জাবেদ হোসাইন বলেন, এ কাজে আমরা জেলা প্রশাসন ও জেলা পুলিশের টেকনিক্যালি সহায়তা পাচ্ছি, অর্থের যোগান সংগঠন থেকে দিতে হচ্ছে। ট্রাফিক পুলিশ সপ্তাহে এ কার্যক্রম চলবে। আগস্ট মাস পুরোটাতেই আমরা যানজট নিরসনে কাজ করার ব্যাপারে আশাবাদী।

ছবিঃ বাহার রায়হান

ট্রফিকের ভূমিকায় থাকা রোভার স্কাউটের শিক্ষার্থীরা মূলত কমিউনিটি পুলিশের অংশ হয়ে যানজট নিরসনে কাজ করছেন । বিষয়টি অবশ্যই ইতিবাচক প্রভাব পড়েছে সড়কে চলাচলরত বাহন চালক ও সাধারণ পথচারীদের মধ্যে। এ বিষয়ে কুমিল্লা কমিউনিটি পুলিশিংয়ের সভাপতি কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া সরকারী কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ প্রফেসর আমির আলী চৌধুরী জানান, ঢাকায় শিক্ষার্থীরা ট্রাফিকিংয়ের ভূমিকায় দেখা গেলেও কুমিল্লায় অনেক পরে রোভার স্কাউটের এ শিক্ষার্থী ট্রাফিকিংয়ের কাজটি শুরু করেছে। এমন চিন্তাভাবনা আগেই দরকার ছিলো। তবুও ভালো লাগছে যে যানজট নিরসনে শিক্ষার্থীদের এমন ভূমিকা ভবিষ্যতের জন্য বেশ কার্যকর হবে বলে জানান তিনি।

এ বিষয়ে কুমিল্লা পুলিশ সুপার মো. শাহ আবিদ হোসেন বলেন, কুমিল্লা মহানগরীর মত গুরত্বপূর্ণ বিভিন্ন পয়েন্টে ট্রাফিক পুলিশের মাত্র ৪৬ সদস্য দায়িত্বপালন করে। যা প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল। যানজট নিরসনে আরো জনবল প্রয়োজন। সড়কে চলাচল করা যানবাহনের চালক ও সাধারণ পথচারীদের মাঝে ট্রাফিক আইন-ট্রাফিক সিগনাল মানার প্রবনতা মেনে চলার মানসিকতার অনেক অভাব রয়েছে।

তবে কমিউনিটি পুলিশিংয়ের অংশ হিসেবে আজ কান্দিরপাড়ের বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের রোভার স্কাউটের সদস্যরা ট্রাফিক পুলিশের সাথে সমন্বয় করে যানজট নিরসনে কাজ করেছে। বিষয়টি বাহন চালক ও সাধারণ পথচারীদের মাঝে ইতিবাচক প্রভাব ফেলেছে। এভাবে অদূর ভবিষ্যতে আমরা সচেতনতা সৃষ্টির পাশাপাশি যানজটমুক্ত সড়ক রাখতে পারবো বলে আমি বিশ্বাস করি।

আরো পড়ুন