কুমিল্লায় যুবদল নেতাকে কুপিয়ে হত্যা

ডেস্ক রিপোর্টঃ কুমিল্লা জেলার মনোহরগঞ্জ উপজেলার সরসপুর ইউনিয়নের ভাউপুর গ্রামে এক যুবদল নেতাকে কুপিয়ে হত্যার খবর পাওয়া গেছে।

রোববার সন্ধ্যায় সন্তানের জন্য চিপস আনতে স্থানীয় দোকানে গেলে ১০-১৫ জন দুষ্কৃতিকারী জয়নাল আবদীন হাজারী (৩৫) নামে ওই যুবদল নেতাকে পিটিয়ে ও কুপিয়ে আহত করে।

সোমবার ভোরে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়।

হামলার সময় জয়নাল আবদীন হাজারীকে বাঁচাতে এগিয়ে এলে শিউলি বেগম (২৭) নামে এক গৃহবধূ আহত হয়।

সোমবার মনোহরগঞ্জ থানা পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে।

নিহত জয়নাল উপজেলার সরসপুর ইউনিয়নের ভাউপুর পূর্বপাড়া গ্রামের মৃত আনসার আলীর ছেলে। তিনি ইউনিয়ন যুবদলের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক এবং ওই ইউনিয়নের এক নম্বর ওয়ার্ড যুবদলের সভাপতি।

নিহতের পরিবারের অভিযোগের তীর স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগের স্থানীয় নেতাদের দিকে।

স্থানীয় লোকজন ও নিহতের পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, রোববার সন্ধ্যায় মেয়েদের জন্য চিপস আনতে নিজ বাড়ির অদূরে একটি চায়ের দোকানে যায় জয়নাল। এ সময় একই গ্রামের স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা নুরুল আমিনের ছেলে আবদুল্লাহ, মৃত আবদুস সালামের ছেলে মনির, সাব্বির, বেলায়েত, আবদুল হালিম, হাবিব ও ইউপি চেয়ারম্যান আবদুল মান্নানের ছেলে জুয়েলসহ ১০-১৫ জন দুর্বৃত্ত জয়নালের ওপর হামলা চালায়।

হামলাকারীরা কালো কাপড়ে মুখ ঢেকে লাঠি-বল্লমসহ ধারালো অস্ত্র দিয়ে এলোপাতাড়ি পিটিয়ে ও কুপিয়ে তাকে আহত করে। আত্মরক্ষার্থে জয়নাল দৌঁড়ে ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি নুরুল আমিনের কুটিবাড়িতে গিয়ে আশ্রয় নিলেও দুস্কৃতিকারী পুনরায় তাকে এলোপাতাড়ি কুপিয়ে গুরুতর আহত করে।

এ সময় তাকে রক্ষার্থে ওইবাড়ির সাহাবুদ্দিনের স্ত্রী শিউলি বেগম এগিয়ে এলে তাকেও পিটিয়ে আহত করা হয়।

গুরুতর আহত জয়নালকে প্রথমে সোনাইমুড়ি সদর হাসপাতালে ও পরে কুমিল্লা হাসপাতালে নেয়া হয়। ওইদিন রাতেই আশংকাজনক অবস্থায় তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেয়া হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় সোমবার ভোরে তার মৃত্যু হয়।

নিহতের বোন নিলুফা বেগম, নেহার বেগম ও ভাতিজি হাজেরা বেগম কান্নাজড়িত কন্ঠে এ ঘটনার সুষ্ঠু বিচার দাবি করে বলেন, আহতাবস্থায় আমার ভাই স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা নুরুল আমিনের ছেলে আবদুল্লাহ, মৃত আবদুস সালামের ছেলে মনির, সাব্বির, বেলায়েত, আবদুল হালিম, হাবিব ও ইউপি চেয়ারম্যান আবদুল মান্নানের ছেলে জুয়েলসহ ১০/১৫ জন দুস্কৃতিকারী এ ঘটনায় জড়িত বলে আমাদের জানিয়েছেন।

নিহত জয়নাল হাজারীর জান্নাতুল ফেরদাউস ঝুমুর (৮), জোনাকি (৪) ও ৬ মাস বয়সী তানজির আহমেদ নামে ৩ সন্তান রয়েছে।

সরসপুর ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি আবুল কাসেম জানান, জয়নাল হাজারী একজন পরিশ্রমী রাজনৈতিক কর্মী। তাকে হয়রানির উদ্দেশ্যে এই পর্যন্ত অন্তত ১০টি মিথ্যা মামলার আসামি করা হয়েছে। সর্বশেষ গত নির্বাচনের আগের দিন স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা তাকে অস্ত্র মামলায় ফাঁসিয়ে পুলিশের মাধ্যমে জেলে পাঠায়।

ওই মামলায় দীর্ঘ ৭ মাসের বেশি জেলহাজতে থাকার পর গত প্রায় ১৫ দিন আগে জামিন পায় সে। জেল থেকে বের হয়ে ঢাকায় চলে যায় জয়নাল। গত পরশু (শনিবার) ঢাকা থেকে বাড়িতে আসে সে। বাড়িতে যাবার পর থেকেই তাকে হত্যা হুমকি দিতে থাকে এলাকার আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা।

আবুল কাসেম আরও বলেন, সর্বশেষ গত রোববার সন্ধ্যায় নিজ বাড়ির পাশে একটি চায়ের দোকানে যায় জয়নাল হাজারী। এ সময় পূর্ব থেকে উৎ পেতে থাকা স্থানীয় আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগের ১০-১৫ জন নেতাকর্মীরা তার উপর অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে সন্ত্রাসী হামলা চালায় এবং তাকে পেটাতে শুরু করে। পরে জীবন বাঁচানোর জন্য সে পাশের বাড়ি ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি নুরুল আমিনের ঘরে আশ্রয় নেই।

সেখানে গিয়ে সন্ত্রাসীরা তাকে এলোপাতাড়ি কোপাতে থাকে। সন্ত্রাসীরা পিটিয়ে জয়নালের একটি পা ভেঙে ফেলে এবং মাথাসহ পুরো শরীরে অন্তত ৫০টি কোপ দেয়। পরে আশপাশের লোকজন এসে তাকে আশংকাজনক অবস্থায় উদ্ধার করে প্রথমে সোনাইমুড়ি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেয়, সেখানে অবস্থা বেগতিক দেখে তাকে কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠায় চিকিৎসকরা।

পরে কুমিল্লা মেডিকেলে আনা হলে সেখানকার চিকিৎসকরা প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠালে ওইদিন রাতেই তার মৃত্যু হয়।

তবে ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি নুরুল আমিন এসব অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, আমার বাড়িতে ওই যুবদল নেতাকে হত্যা করার কথা সম্পূর্ণ মিথ্যা ও বানোয়াট। তাকে কে বা কারা হত্যা করেছে আমি বলতে পারবো না। তবে লোকমুখে শুনেছি তার বাড়ির সামনের চায়ের দোকানে বসে থাকা অবস্থায় সিএনজিযোগে আসা কয়েকজন মুখোশধারী দুর্বৃত্ত তার উপর হামলা চালিয়েছে।

সরসপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আবদুল মান্নান বলেন, ঘটনাটি শুনেছি। তবে কে-বা কারা ঘটিয়েছে তা জানি না। আমার ছেলে ঘটনার সঙ্গে জড়িত ছিল এটা সম্পূর্ণ মিথ্যা। ওইদিন আসর থেকেই আমার ছেলে জুয়েল লাকসামে ছিল।

এ বিষয়ে মনোহরগঞ্জ থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মাহবুল হক জানান, ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছি। ঘটনাটি তদন্ত করে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে।

সূত্রঃ যুগান্তর

আরো পড়ুন