কুমিল্লায় সেভেন স্টার আতঙ্ক!

ডেস্ক রিপোর্টঃ ‘সেভেন স্টার’ মানে সাত তারকা। সাধারণত আমরা তারকা বলতে আলোকিত বা খুব ভালো অর্থে কিছুর বর্ণনা করতে গিয়েই তারকা শব্দটি ব্যবহার করে থাকি। তবে তা যদি ভয়ঙ্কর অর্থে ব্যবহার করা হয়, তা হলে একটু আতকে ওঠাই স্বাভাবিক।

সম্প্রতি কুমিল্লার মুরাদনগর উপজেলার স্থানীয়দের মধ্যে আতঙ্কের প্রধান কারণ সেভেন স্টার গ্রুপ। প্রথমত, গ্রুপটি বিভিন্ন দেয়ালে চিকা মেরে ও ফেসবুকে গ্রুপের নাম ও ছবি পোস্ট করে এলাকায় আতঙ্ক ছড়ানো হয়। পরে ছাত্রীদের উত্ত্যক্ত করা, পথচারীর কাছ থেকে টাকা ও মোবাইল ফোন ছিনিয়ে নেওয়া থেকে শুরু করে বিভিন্নজনের কাছ থেকে চাঁদা আদায় এবং চাঁদা না পেলে মারধর করে আহত করাসহ অসংখ্য অভিযোগ রয়েছে গ্রুপটির বিরুদ্ধে।

সর্বশেষ এক মুক্তিযোদ্ধার নবম শ্রেণিতে পড়ুয়া ছেলেকে পিটিয়ে গুরুতর আহত করে গ্রুপটির সদস্যরা। এ ঘটনায় তার পরিবার থানায় অভিযোগ দায়ের করলে উল্টো প্রাণনাশের হুমকি দিচ্ছে গ্রুপটির সদস্যরা।

‘সেভেন স্টার গ্রুপটির অধিকাংশ সদস্য উপজেলা সদরের প্রভাবশালী পরিবারের সন্তান হওয়ায় আশপাশের ২০ গ্রামের বাসিন্দারা আতঙ্কিত। গ্রুপটির প্রধান শাওন  (২২) রহিমপুর গ্রামের জসিমের ছেলে।

অপর সদস্য রাব্বি (২১) উপজেলা সদরের বিএনপি নেতা তকদিরের ছেলে। মফিজের ছেলে শাহজালালসহ  (২৩) বেশ কয়েকজন এই গ্রুপের সক্রিয় সদস্য বলে, বিভিন্ন অভিযোগ ও স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়।

থানায় অভিযোগকারী মুক্তিযোদ্ধা মতিউর রহমান বলেন, ‘আমার ছেলে মুরাদনগর ডিআর সরকারি স্কুলে নবম শ্রেণিতে পড়ে। রহিমপুর গ্রামের কয়েকজন ছেলের সঙ্গে তাদের (সেভেন স্টার গ্রুপ) মেয়ে সংক্রান্ত বিরোধ ছিল। আমার ছেলের বাড়ি রহিমপুর মনে করে তাকে মারাত্মভাবে পিটিয়ে আহত করে তারা। আজ তিন দিন সে হাসপাতালে ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নিচ্ছে। এ ঘটনায় গত সোমবার থানায় অভিযোগ দায়ের করা হলে উল্টো গ্রুপটির সদস্যরা আমাকে ও আমার পরিবারের লোকজনকে প্রাণনাশের হুমকি দিচ্ছে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক ব্যক্তি এই প্রতিবেদককে বলেন, ধামঘর ইউপির ভুবনঘর গ্রামের নবম শ্রেণির ছাত্রী সুমি (ছদ্ম নাম) এই সেভেন স্টার গ্রুপের উত্ত্যক্ত কারণে স্কুলে আসা বন্ধ করে দিয়েছে। বাখরাবাদ গ্রামের জামালের কাছ থেকে মোবাইল ফোন ও তার পকেট থেকে ৩০০ টাকা এবং মুরাদনগরের বাবুর কাছ থেকে মোবাইল ফোন ও দুই হাজার ৫০০ টাকা ছিনিয়ে নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। তাছাড়া মধ্যনগর গ্রামের এক হিন্দু পরিবার থেকে ৩০ হাজার টাকা চাঁদা আদায় করে তারা। গ্রুপটি করিমপুর গ্রামের ব্যবসায়ী মতিনের ছেলের কাছ থেকে ৪৮ হাজার টাকা ও মোবাইল ফোন ছিনিয়ে নেয় বলে তার পরিবার সূত্র জানায়।

এই গ্রুপের বিরুদ্ধে আরো অভিযোগ রয়েছে, যদি কেউ জমি কেনাবেচা করে অথবা জমিতে মাটি ভরাট বা বাড়িতে বিল্ডিং তৈরি করে তাহলে তার চাঁদা দাবি করে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক স্থানীয় বাসিন্দা বলেন, উঠতি বয়সী বখে যাওয়া ছেলেরা প্রভাবশালী পরিবারের সন্তান হওয়ায় ভয়ে অনেকেই মুখ খোলার সাহস পায় না। তবে দিন দিন তারা বেপরোয়া হয়ে এলাকাবাসীর আতঙ্কের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

সেভেন স্টার গ্রুপটির প্রধান, শাওনের এক আত্মীয় বলেন, ‘পরিবারের আয়ত্তের বাইরে চলে গেছে সে। বাড়ি থেকে বের হয়ে গেলে কয়েকদিন তার কোনো হদিস  থাকে না। গ্রুপের অপর সদস্য রাব্বি নেশায় আশক্ত হয়ে নানান অপকর্মের সঙ্গে জড়িয়ে গেলে পরিবার তাকে বিদেশে পাঠিয়ে দেয়। কিন্ত রাব্বি দুই মাসের মাথায় বিদেশ থেকে ফিরে এসে সেভেন স্টার গ্রুপের সক্রিয় সদস্য হয়ে যায়।

মুরাদনগর থানার ওসি একেএম মনজুরুল ইসলাম বলেন, ‘অভিযোগের প্রথমিক সত্যতা মিলেছে। এই গ্রুপটির বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

সূত্রঃ কালের কণ্ঠ

আরো পড়ুন