কুমিল্লা নগরীতে রিকশা ভাড়ায় নৈরাজ্য

আবু সুফিয়ান রাসেলঃ কুমিল্লা নগরীতে রিক্সাভাড়া নিয়ে অরাজকতা দিন দিন প্রকট হচ্ছে। বাধ্য হয়ে অতিরিক্ত ভাড়া দিচ্ছে সাধারণ মানুষ। এতে ক্ষুব্ধ নগরবাসীসহ বিভিন্ন উপজেলা থেকে আগত যাত্রীরা। অনেক সময় অতিরিক্ত ভাড়া দাবি নিয়ে বাকবিত-া হচ্ছে চালক-যাত্রীদের মধ্যে। অনেক সময় চালকদের হাতে নাজেহাল হচ্ছেন যাত্রী সাধারণ। মান সম্মানের ভয়ে অনেক যাত্রী অতিরিক্ত ভাড়া দিতে বাধ্য হচ্ছেন। শহরের গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি সড়কে অটোবাইক, মটর চালিত রিক্সা নিষিদ্ধ করায় প্রতিনিয়ত চরম দুর্ভোগ আরো বাড়ছে। কুসিক কর্তৃপক্ষ বিকল্প হিসাবে নগরীতে মিনি বাস চালুর আশা দিলেও কোন কার্যকর ভূমিকা চোখে পড়ছে না। নগরীর অলি-গলি, পাড়া-মহল্লা কিংবা শহরের ব্যস্ত সড়কে কোথাও না কোথাও রিক্সা ভাড়া নিয়ে যাত্রী এবং চালকদের কথা কাটাকাটি এবং একপর্যায়ে হাতাহাতির ঘটনা প্রতিনিয়ত ঘটছে। বিভিন্ন ধর্মীয় উৎসবসহ বিশেষ দিনে রিক্সা চালকদের অতিরিক্ত ভাড়ার আবদার চলছে। কিন্তু প্রতিনিয়তই রিক্সা চালকদের নিজেদের ইচ্ছে মতো ভাড়া আদায় করাটা এখন কেউ মনতে পারছে না। তবে কুমিল্লা সিটি কর্পোরেশন (কুসিক) এ বিষয়ে কোন ব্যবস্থা গ্রহণ না করায় ক্ষুব্ধ নগরবাসী।

কুসিকের সর্বশেষ অনুমোদিত রিক্সা ভাড়া তালিকায় দেখা যায়, নগরীর প্রাণ কেন্দ্র কান্দির পাড়কে কেন্দ্র করে ভাড়ার হার নির্ধারণ করেছে কুসিক নীতিনির্ধারকরা। কান্দির পাড় থেকে নগর ভবন ১০, কান্দির পাড় থেকে ফৌজদারী ১০, মুন্সেফ কোয়ার্টার ১৫, জর্জকোর্ট ১২, কালিয়াজুরী ১৮, পাকার শেষ মাথা ২০, ভাটপাড়া ২০, ছোটরা ১২, পুলিশ লাইন ১০, রেইসকোর্স ১২, বাদশা মিয়ার বাজার ১৫, ঝাউতলা ১০, পানি উন্নয়ন বোর্ড ১০, ফায়ার বিগ্রেড ১২, ফুড অফিস ১২, শাসনগাছা ১৫, কৃষি অফিস ১৮, রেল ষ্টেশন ১৫, ধর্মপুর চৌমুহনী ১৫, ডিগ্রি কলেজ ১৮, বিসিক ১৫, উত্তর ঠাকুর পাড়া ১৫, অশোকতলা ১৫, রাণীর বাজার ১০, শুভপুর ব্রিজ ২০, চানপুর ব্রিজ ২০, টিক্কারচর খেয়াঘাট ২০, সংরাইশ ২০, সুজানগর ১৮, তেলিকোনা ১৫, সাহাপাড়া ১৫, পাথুরিয়া পাড়া ২০,গোধিরপুকুর পাড় ২০,বাখরাবাদ ২৫, কুচাইতুলী মেডিকেল ২৫, সদর উপজেলা অফিস ২০, দক্ষিণ চর্থা ১২,ইপিজেড ১ নং গেইট ২০, হোচ্ছামিয়া স্কুল ১০, বড় পুকুর পাড় ১৫, থিরা পুকুর পাড় ১৫, মুরাদনগর চৌমুহনী ১৫, ২য় মুরাদপুর ১৫,মৌলভীপাড়া ১৫, চকবাজার ১৫, কাটাবিল ১৫, গোল মার্কেট ২০, হযরত পাড়া ১৫, পোষ্ট অফিস ১০, গাংচর ১২, মোগলটুলী ১০, রাজগঞ্জ ১০, গোয়ালপট্টি ১০, ছাতিপট্টি ১০, চকবাজার ১৫, কাপড়িয়াপট্টি ১০, জামতলা ১০, ডিগাম্বরীতলা ১০, কোতয়ালী থানা ১০, কাপ্তানবাজার ২০, ইসলামপুর ১০,জাহান নগর ১২, রাজবাড়ী কম্পাউন্ড ১০, সদর হাসপাতাল ১০, টমছমব্রিজ ১০,নগর উদ্যান ১০, তালতলা ১০, শৈলরাণী স্কুল ১০,মহিলা কলেজ ১০, টিএন্ডটি মোড় ১০, পদুয়ার বাজার ২৫, ইয়াছিন মার্কেট ২০, ঢুলিপাড়া ২০, রাজাপাড়া ৩০, শাকতলা ১৫, হালুয়াপাড়া ১৫, জাঙ্গালিয়া বিদ্যুত অফিস ২০, কেটিসিসি এ ২০, শাকতলা র‌্যাব অফিস ২০ টাকা।

মালিকের রিক্সা ভাড়া ১২ ঘন্টায় নতুন গাড়ি ৭০ ও পুরাতন গাড়ি ৬০ টাকা। তা ছাড়া ঘন্টা হিসাবে প্রতি ঘন্টা চলমান থাকলে ৫০ ও অপেক্ষার জন্য ২০ টাকা নির্ধারণ করে ছিলো কুসিক।

কুমিল্লা নগরীর বাসিন্দা মো. আ. মালেক বলেন, এ সমস্যা মেয়র গত ৮ বছরেও সমাধান করতে পারেনি। আমরা তো রিক্সা চালক আর সিটি কর্পোরেশন সবার কাছে জিম্মি হয়ে আছি। কুসিক ড্রেন পরিষ্কার করা ছাড়া অন্য কোন কাজ করছে না। এভাবে একটা সিটি চলতে পারে না।

রিক্সা চালক মুজিব মিয়া বলেন, আমরা ভাড়ায় রিক্সা চালাই। আগে দিনে মালিককে দিতাম ৭০-৮০ টাকা, এখন দিতে হয় ১০০ টাকা। দিন দিন মালপত্রের দাম যে ভাবে বাড়তেছে, ভাড়া না বেশী নিলে তো আমরা চলতে পারবো না। আগে যে পার্টস কিনছি ১০০ টাকা এখন ১৬০ টাকা। অন্য শহর থেকে কুমিল্লা শহর থাকা খাওয়ার টাকা অনেক বেশী যায়।

কুসিক নগর পরিকল্পনাবিদ আব্দুস সালাম বলেন, সংশ্লিষ্ট যারা আছে, সবার সহযোগিতা করতে হবে। নয়তো পরিকল্পিত নগরী তৈরি করা সম্ভব নয়।
কুসিক লাইসেন্স অফিসার কাজী আতিকুর রহমানের প্রদত্ত তথ্যমতে, পৌরসভা থাকা কালীন ১০,৫০০ টি পায়ে চালিত রিক্সার অনুমতি প্রদান করা হয়েছে। সিটি কর্পোরেশন হওয়ার পর নতুন কোন যানের অনুমোদন দেয়নি কুসিক। প্রতি বছর ১৩০ টাকা, লাইসেন্স নবায়ন করেন রিক্সা মালিকরা।
একজন কুসিক কর্মকর্তা জানান, যতবার গুরুত্বপূর্ণ মোড়ে ভাড়ার তালিকা ঝুলিয়ে দেওয়া হয়েছে। ততবার রিক্সা চালকরা রাতের আধাঁরে সকল তালিকা ছিড়ে ফেলে দেয়। নাগরিক পর্যায়ে যদি সচেতনতা না আসে তবে এ সমস্যা সমাধান করা যাবে না। তবে প্রতিটি রিক্সার পেছনে এ তালিকা সুস্পষ্ট ভাবে প্রদর্শন করা বাধ্যতামূলক করা যেতে পারে, অন্যথায় জরিমানা করার বিধান রাখা হোক।

কুসিক মেয়র মনিরুল হক সাক্কু বলেন, সিটি কর্পোরেশন থেকে রিক্সা ভাড়া নির্ধারণ করে দিয়ে লাভ কী ? চালকরাও এ নিয়ম মানে না, যাত্রীরাও নিয়ম মানে না। গাড়িতে উঠার আগে কেউ ভাড়ার কথা জিজ্ঞেস করে উঠে না। নামার পরে গিয়ে ভেজাল লাগে। আমাদের ইচ্ছা আছে শহরে মিনি বাস সার্ভিস দেওয়ার জন্য। যদি এটা করতে পারি তাহলে নাগরিকদের অতিরিক্ত ভাড়া দিতে হবে না, ভোগান্তিও কমবে।

আরো পড়ুন