যে কারণে আমরা কুমিল্লা নামে বিভাগ চাই

ডেস্ক রিপোর্টঃ গোমতি নদীর তীরে কুমিল্লা শহরটি অবস্থিত। ১৮ টি ওয়ার্ড ও ৪৬ টি মহল্লা নিয়ে এ শহরটি গঠিত। ১১৪৭ বর্গ কিলোমিটারের এ শহরে ১৬৮৩৭৮ জন মানুষ বসবাস করে। এদের মধ্যে ৫৫.৫৬ ভাগ পুরুষ এবং ৪৭.৪৪ ভাগ মহিলা। শহরের অধিবাসীদের মধ্যে স্বাক্ষরতার হার ৬০.৩।

এখানে চির শান্তির ঘুমে শায়িত আছে অগণিত বীর যোদ্ধাদের সমাধি। রয়েছে কমনওয়েলথ থেকে ১ম ও ২য় ওয়ার্ল্ড ওয়ারে অংশগ্রহণ করা মার্কিন, জাপান, ও পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ থেকে আগত যোদ্ধাদের সিমেট্রি বা স্মৃতিসৌধ এবং সমাধি।

ময়নামতি ক্যান্টনমেন্ট, বাংলাদেশ পল্লী উন্নয়ন একাডেমী, ময়নামতি জাদুঘর,কুমিল্লা ক্যাডেট কলেজে, মুক্তিযোদ্ধা জাদুঘর উল্লেখযোগ্য।

কুমিল্লা শহরটি জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের উল্লেখযোগ্য মিষ্টি স্মৃতির শহর বলা হয়। কাজী নজরুল ইসলাম জীবনের দুই বার বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয়েছিলেন। একটি কুমিল্লা শহরে আর একটি এই জেলারই মুরাদনগর উপজেলার দৌলতপুরে। ঐ জায়গাগুলোকে স্মারক প্লেট দিয়ে চিহ্নিত করা রয়েছে।

কবি রবিন্দ্রনাথ ঠাকুর দুইবার এ শহরে ভ্রমণ করতে এসেছিলেন, বিশ্ব কবির রয়েছে নানান স্মৃতি কুমিল্লাতে।

বাংলাদেশে পুরা কীর্তি ও পুরাণ প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের জন্য বিখ্যাত শহরগুলির মধ্যে সবচেয়ে প্রাচীন শহর কুমিল্লা। এটিকে নদীমাতৃক শহরও বলা হয়।

এখানে অনেক নদী এবং বড় বড় ঐতিহাসিক দীঘি ও পুকুর রয়েছে যেসব দীঘি শত শত বছর আগের জমিদার এবং নবাবদের স্মৃতি নিয়ে অবস্থান করছে কুমিল্লার প্রাণকেন্দ্রে, যেখানে সর্বক্ষণ পর্যটকদের আনাগোনা লেগেই থাকে। প্রতিটি পাথরের মাঝে লুকিয়ে আছে শত শত বছরের ইতিহাস।

ভারতের সীমান্তবর্তী একটি শহর কুমিল্লা, শহরটি সপ্তাদশ শতাব্দিতে মুঘল সম্রাট এবং ঊনবিংশ শতাব্দিতে ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি দ্বারা শাসিত হয়। বিভিন্ন ধরনের মিষ্ট, বাটিক ও খাদি মুদ্রিত কাপড়ের জন্য বিখ্যাত।

সর্বকালেই কুমিল্লার শুশীল সমাজের কণ্ঠস্বর এং তাদের কার্যকলাপ এখানে বেশ শক্তিশালী, ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলন থেকে শুরু করে বাংলাদেশ স্বাধীনতা আন্দোলনে কুমিল্লার মানুষের অবদান অনস্বীকার্য।

কুমিল্লা জেলায় ১৬টি থানা রয়েছে। এগুলো হলো- কুমিল্লা সদর, কুমিল্লা সদর দক্ষিণ, হোমনা, লাকসাম, মুরাদনগর, দেবীদ্বার, দাউদকান্দি, বুড়িচং, বরুড়া, চান্দিনা, তিতাস, মেঘনা, চৌদ্দগ্রাম,
লাঙ্গলকোট, ব্রাহ্মণপাড়া এবং মনোহরগঞ্জ। এই সব কটি থানার অন্তর্গত রয়েছে শ্রেষ্ঠ সন্তানদের জন্ম ও প্রাচীন ইতিহাস।

কুমিল্লা ক্যান্টনমেন্ট প্রাচীনতম পূর্ববাংলার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সামরিক ঘাঁটি। এটি দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় ব্রিটিশ ভারতীয় সেনাবাহিনীর দ্বারা ব্যবহার করা হয়েছিল।

যোগাযোগ ক্ষেত্রেও কুমিল্লা অনেক এগিয়ে। এটি বাংলাদেশের পূর্বাঞ্চলের সড়ক যোগাযোগের প্রধান হিসাবে পরিচিত। ভারতীয় উপ-মহাদেশের ‘গ্র্যান্ড ট্রাঙ্ক রোড’ এর অন্যতম প্রাচীন সড়ক এ শহরের মধ্য দিয়ে অতিক্রম করেছে।

কুমিল্লা বোর্ড:
কুমিল্লা মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ড কুমিল্লা শহরে অবস্থিত। এখান থেকে কয়েকটি জেলার জন্য প্রাথমিক, মাধ্যমিক, মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা সঞ্চালন হয়। পুরো চট্টগ্রাম বিভাগের শিক্ষা ব্যবস্থা পরিচালিত হত ঐতিহাসিক কুমিল্লা বোর্ডের অধিনে। কিন্তু সম্প্রতি চট্টগ্রাম ও সিলেট শিক্ষা বোর্ড আলাদা করা হয়েছে।

স্কুল এন্ড কলেজ:
কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ, কুমিল্লা ক্যাডেট কলেজ ও কুমিল্লা জিলা স্কুল, ফাতিমা গার্লস হাই স্কুল, দেবী গার্লস হাই স্কুল, নবাব ফয়জুন্নেসা গার্লস হাই স্কুল, কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়, কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজ, টিচার্স ট্রেনিং কলেজ, কুমিল্লা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট।

সমাজসেবক:
ফয়জুন্নেসা বালিকা বিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাতা,নারী শিক্ষার অগ্রদূত নবাব ফয়জুন্নেসা,মহেশচন্দ্র ভট্টাচার্য , চিকিত্সক ও শ্রীকাইল কলেজের প্রতিষ্ঠাতা নরেন্দ্র দত্ত, ক্যাপ্টেন বদান্য ও এই শহরের।

সাহিত্য:
কাল্পনিক বাংলা কবি, ঔপন্যাসিক, অনুবাদক, সম্পাদক ও প্রাবন্ধিক বুদ্ধদেব বসু, ঔপন্যাসিক এবং নাট্যকার আনিস চৌধুরী, গবেষক, কবি ও সম্পাদক জি পি জে আব্দুল কাদির, শিক্ষক ও কবি এ কে এম আলী আকবর খান এ জেলায় জন্মগ্রহণ করেন।

সঙ্গীত:
এস ডি হিসেবে স্বীকৃত বর্মণ, গায়ক, সুরকার ও সঙ্গীত পরিচালক শচীন দেব বর্মণ, তবলা বাদক জানুয়ারী-ই-আলম চৌধুরী,শাস্ত্রীয় সঙ্গীতজ্ঞ ও সুরকার মোহাম্মদ হুসাইন খসরু, সুরকার ও গীতিকার কুমার দত্ত, গীতিকার, সুরকার ও গীতিকার সুকেন্দু চক্রবর্তী, সহেলি দেবী, গায়ক রাহুল দেব বর্মণ, আর ডি বর্মণ, সঙ্গীত শিক্ষক ও রবীন্দ্র সঙ্গীত গায়ক ফজলে নিজামী, তবলা বাদক বাদল রায়ের জন্মস্থান এই কুমিল্লায়।

বর্তমান রাজনীতিবিদ
বর্তমান সরকারের উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন সংসদ সদস্যও মন্ত্রিদয়, আবু হেনা মুস্তাফা কামাল,মুজিবুল হক মুজিব, আ,ক,ম বাহাউদ্দিন বাহার, আব্দুল মতিন খসরু,তাজুল ইসলাম এবং মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতাবান উপদেষ্টা আব্দুল বাসেত মজুমদার এর বাড়ি কুমিল্লায়।

ঐতিহাসিক ১৯৪৭ এবং ১৯৭১ সালের স্বাধীনতা আন্দোলনে জনগণের অংশগ্রহণের জন্য এ শহরটি স্বীকৃতি পায়। মুক্তিযুদ্ধের সময় কুমিল্লা শহরটি মুক্তিবাহিনীর দুই নম্বর সেক্টরের অধীনে ছিল যা মেজর খালেদ মোশাররফের (বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর পরবর্তীতে মেজর জেনারেল) কমান্ডিং এ শাসিত হয়। মিত্রবাহিনীর ২৩ নম্বর মাউন্টের ডিভিশনের নেতৃত্বে আক্রমণ করে কুমিল্লা।

তথ্যসুত্রঃ উইকিপিডিয়া,সংবাদপত্র ও নিজের তথ্য অনুসার।

আরো অনেক জানা অজানা বিখ্যাত মানুষের স্মৃতি বিজড়িত কুমিল্লা।

ইতিহাস এবং বাংলাদেশের উন্নতির সোপান কুমিল্লাকে কি বিভাগীয় শহরের নামকরণ করা যায় না???

মানলাম ময়নামতি কুমিল্লার বিশেষ একটি অংশ, কিন্তু কুমিল্লা নামে বিভাগ হতে আপত্তি কাদের???
কুমিল্লা নামে বিভাগ হলে সমস্যা কোথায়?? আমরা এই সকল প্রশ্নের উত্তর চাই।

আরো পড়ুন