শতবছরের পুকুর ভরাট করে নিমসারে অবৈধভাবে কাঁচাবাজার পরিচালনা

দেশের অন্যতম বৃহৎ পাইকার-খুচরা তরকারীর বাজারটি কুমিল্লার নিমসারে অবস্থিত। বাজারটি দীর্ঘদিন ধরে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের পাশে চালু ছিল। সাম্প্রতিক সময়ে প্রশাসনের নির্দেশে সরকার নির্ধারিতস্থানে স্থানান্তর করলেও একটি প্রভাবশালী সিন্ডিকেট সরকারী নির্দেশনা অমান্য করে বাজারটির পাশেই শতবছরের একটি পুকুর ভরাট করে নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় বাজার চালু করে টোল আদায়ের অভিযোগ উঠেছে। এতে সরকার প্রতিদিন একটা রাজস্ব আদায় থেকেও বি ত হচ্ছে। পাশাপাশি পুকুর ভরাট করার বিষয়ে স্থানীয় এক ব্যক্তি আদালতে মামলা করার পর সাময়িকভাবে ভরাট প্রক্রিয়া বন্ধ থাকলেও আবারো চক্রটি পুকুর ভরাট চালিয়ে যাচ্ছে। একসময় হয়তো হারিয়ে যাবে শতবর্ষী পুকুরটির অস্তিত্ব।

সরেজমিন ঘুরে স্থানীয় বিভিন্ন সুত্রে পাওয়া তথ্যে জানা যায়, ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের কুমিল্লার বুড়িচং উপজেলার মোকাম ইউনিয়নের নিমসার এলাকায় বাজারটির অবস্থান। মহাসড়কের কোলঘেষে বিগত শতাব্দির ৮০’র দশকে বাজারটি যাত্রা শুরু করে। একসময় ব্যবসার পরিধি বাড়ার সাথে সাথে ক্রেতা-বিক্রেতার সংখ্যাও বৃদ্ধি পায়। মহাসড়কের দু’পাশের প্রায় এক বর্গকিলোমিটার এলাকাজুড়ে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা বাজারটি সাম্প্রতিক সময়ে উচ্চ আদালতের নিষেধাজ্ঞার কারণে উপজেলা প্রশাসন নিমসার পুরাতন গরুর বাজারে কাচাবাজারটি স্থানান্তর করে। এজন্য স্থানীয় বুড়িচং উপজেলা প্রশাসন থেকে ইজারার ব্যবস্থাও করা হয়।

বাজারটি ইজারার পর থেকে স্থানীয় একটি প্রভাবশালী চক্র নিমসার কাচাবাজারের পাশ্ববর্তী পরিহলপাড়া গ্রামের জাকির মুন্সি, সামসুল হক মুন্সী, স্থানীয় মোকাম ইউপি চেয়ারম্যার ফজলুল হক মন্সি’র ছেলে ইমাম হোসেন মুন্সী, ইকরাম মুন্সী , পিন্টু মুন্সীসহ ১০/১৫ জনের একটি সিন্ডিকেট নির্ধারিত স্থানে ব্যবসায়ীদের যেতে বাঁধা দিয়ে নিজেরাই নিমসার উচ্চ বিদ্যালয়ের পাশের শত বছরের পুরনো একটি পুকুর ভরাট করে সেখানে অলিখিত বাজার বসিয়ে বিভিন্ন পাইকার আড়তদারদের কাছ থেকে উচ্চমূল্য নিয়ে পজেশন বিক্রি করা শুরু করে।

স্থানীয় নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক ব্যবসায়ী জানান, জাকির মুন্সীসহ ১০/১৫ জনের এই সিন্ডিকেট মহাসড়কের পাশে নিমসার উচ্চ বিদ্যালয়,নিমসার সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় ,মোকাম ইউনিয়ন পরিষদ. নিমসার জামে মসজিদের পাশে থাকা শত বছরের পুরনো একটি পুকুর বাজারটি মহাসড়কের পাশ থেকে সরিয়ে নেওয়ার পরই রাতের আধাঁরে উল্লেখিত প্রভাবশালীরা ভরাট করে সেখানে অলিখিত বাজার পরিচালনা করে টোল আদায় করে আসছে। বাজারটি পাইকারী হওয়ায় মূলত রাত বাড়ার সাথে সাথে এর ব্যস্ততা বাড়ে। দিনের আলো বাড়ার সাথে সাথে ব্যস্ততা কমে বাজারটি ক্রেতা-বিক্রেতা শূন্য হয়ে উঠে। অনির্ধারিত স্থানে বসায় বাজারটির যেমন কোন বৈধতা নেই,তেমনি সরকার এই বাজার থেকে কোন রাজস্বও পাচ্ছেনা।

পাশাপাশি বাজারটি মহাসড়কের পাশে থাকায় দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা তরকারী ভর্তি ঠ্রাক,কাভার্ডভ্যান ,পিকআপসহ বিভিন্ন যানবাহন চালকরা মহাসড়কের উপর রেখেই খালাস করছে। এতে করে এখানে প্রতিদিনই মধ্যরাত থেকে পরদিন সকাল পর্যন্ত মহাসড়কের ফোরলেনের কুমিল্লাগামী অংশে দ্রুতগতির যানবাহনগুলির চাকা ধীর হয়ে আসে। কখনো কখনো ঘটছে ছোটখাটো দুর্ঘটনা। এতে অনেক লোক আহতও হচ্ছে।

সুত্র আরো জানায়, পুকুরটি ভরাট করে অবৈধভাবে বাজার করার ঘটনায় নিমসার সংলগ্ন পরিহলপাড়ার আব্দুল আওয়াল কুমিল্লার বিজ্ঞ আদালতে ওই স্থানটির মালিকানা দাবী করে একটি মামলা করেন। আদালত সংশ্লিষ্ট থানা পুলিশকে তদন্ত পূর্বক প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহনের নির্দেশ দিলে পুলিশী হস্তক্ষেপে বেশ কিছুদিন পুকুর ভরাট কাজ বন্ধ থাকলেও করোনার সুযোগ নিয়ে গত ২/৩ দিন পূর্ব থেকে চক্রটি আবারো পুকুর ভরাট কার্যক্রম শুরু করে। এতে আবারো পুলিশের সাহায্য চাইলে সোমবার ৪ মে বিকেলে পুলিশী বাধায় পুকুর ভরাট কার্যক্রম বন্ধ হয়। এবিষয়ে জানতে চাইলে ইউপি চেয়ারম্যান এর ছেলে ইমাম হোসেন মুন্সি বলেন, আমরা আমাদের মালিকানাধীন অংশ ভরাট করছি। এটা একটা পরিত্যক্ত ডোবা।

বিষয়টি জানতে চাইলে বুড়িচং থানাধীন দেবপুর ফাঁড়ির এসআই ও মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা নন্দন চন্দ্র সরকার বলেন,খবর পেয়ে আমি ঘটনাস্থলে গিয়ে ভরাট কার্যক্রম বন্ধের নির্দেশ দেই।

বুড়িচং উপজেলা নির্বাহী অফিসার ইমরুল হাসান বলেন, কোনভাবেই রাজস্ব ছাড়া বাজার পরিচালনা সম্ভব না। সরকারীভাবে বরাদ্দকৃতস্থানে বাজারটি চালু রয়েছে।

আরো পড়ুন