সমকাল জীববিজ্ঞান উৎসবে জাতীয় পর্যায়ে সুযোগ পেল কুমিল্লার ১০৮ শিক্ষার্থী

সকালের ঘনকুয়াশা ভেদ করে শিক্ষার্থীরা সমবেত হতে শুরু করে কুমিল্লা জিলা স্কুলে। উৎসব শুরুর আগেই শিক্ষার্থী-অভিভাবকদের কলকাকলিতে মুখরিত হয়ে উঠে স্কুল প্রাঙ্গন। সোমবার সকাল সাড়ে আটটায় উৎসব শুরুর ঘোষণা আসে বাংলাদেশ জীববিজ্ঞান অলিম্পিয়াড (বিডিবিও) ও সমকালের যৌথ আয়োজনে জীববিজ্ঞান কুমিল্লা আ লিক উৎসবে অংশগ্রহণকারী শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন গ্রুপে সাড়িবদ্ধ হয়। শুরু হয় জাতীয় সঙ্গীত। এ সময় জাতীয় পতাকা উত্তোলন করেন উৎসবের উদ্বোধক কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর মু. রুহুল আমিন ভূইয়া। বিডিবিও’র পতাকা উত্তোলন করেন বিশেষ অতিথি কুমিল্লা শিক্ষাবোর্ডের কলেজ পরিদর্শক অধ্যাপক জহিরুল ইসলাম পাটোয়ারী ও বিডিবিও’র যুগ্ম সম্পাদক অনিরুদ্ধ প্রামানিক। সমকাল সুহৃদ সমাবেশের পতাকা উত্তোলন করেন রোকায়া পদকপ্রাপ্ত নারী নেত্রী পাপড়ি বসু ও উৎসবের আহ্বায়ক মাসুক আলতাফ চৌধুরী। উৎসব সমাবেশের উদ্বোধন ঘোষণা করেন প্রধান অতিথি প্রফেসর মু. রুহুল আমিন ভূইয়া। উদ্বোধনী অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন অধ্যক্ষ মহিউদ্দিন লিটন ও সুহৃদ সমাবেশ কুমিল্লার সভাপতি জাবেদ হোসেন।

এরপর শিক্ষার্থীরা নির্ধারিত তিনটি গ্রুপে পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে। পরীক্ষা শেষে শিক্ষার্থীরা কুমিল্লা জিলা স্কুল মিলনায়তনে প্রানবন্ত আলোচনায় মিলিত হন। মানুষের দেহে ক্লোরোফিল স্থাপন করলে উদ্ভিদের মত নিজের খাদ্য নিজে তৈরী করতে পারবে, মানুষ কি অমরত্ব অর্জন করতে পারবে, মানুষ সত্যিই বানর থেকে সৃষ্টি, মানবক্লোন নিষিদ্ধ কেন, অন্য প্রাণির গর্ভাশয়ে মানব শুক্রাণু প্রতিস্থাপন করলে সেটি সেই প্রাণি না মানুষ হবে- এমন বুদ্ধিদীপ্ত ও কৌতূহলী নানা প্রশ্নে উৎসব আলোচনা প্রানবন্ত করে তোলে শিক্ষার্থীরা। শিক্ষনীয় প্রশ্ন করে পুরস্কার হিসেবে বইও জিতে নেয় তারা। এসব নানা প্রশ্নের উত্তর দেন বিশেষজ্ঞ প্যানেল।

প্যানেলে ছিলেন- কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া সরকারি কলেজের জীববিজ্ঞান বিভাগের সহযোগি অধ্যাপক ড. মহিউদ্দিন মো: শাহজাহান ভূইয়া, একই কলেজের উদ্ভিদ বিজ্ঞান বিভাগের বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক মোশাররফ হোসেন, সরকারি বঙ্গবন্ধু কলেজের জীববিজ্ঞান বিভাগের সহকারী অধ্যাপক অলোক কুমার দাশ, কুমিল্লা ক্যাডেট কলেজের জীববিজ্ঞান বিভাগের প্রভাষক হোসেন সোহরাওয়ার্দী, ফেনী গালর্স ক্যাডেট কলেজের উদ্ভিদ বিজ্ঞান বিভাগের প্রভাষক তাহমিনা পারভিন রুমি, কুমিল্লা ক্যাডেট কলেহের প্রাণিবিজ্ঞান বিভাগের প্রভাষক মো: হিজবুল আজম, রূপসী বাংলা কলেজের জীববিজ্ঞান বিভাগের প্রভাষক সেলিনা ইসলাম, কুমিল্লা জিলা স্কুলের জীববিজ্ঞানের সহকারি শিক্ষক মোহাম্মদ জিয়াউল হক ও বাংলাদেশ জীববিজ্ঞান অলিম্পিয়াডের যুগ্ম সম্পাদক অনিরুদ্ধ প্রামানিক। এ আয়োজনে বিশেষ সহযোগী কথা প্রকাশ, প্রশিক্ষণ সহযোগী ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব বায়োটেকনোলজী ও কারিগরি সহোযাগী ল্যাববাংলা। বাংলাদেশে অলিম্পিয়াডের চূড়ান্ত পর্বে বিজয়ীরা জাপানে অনুষ্ঠেয় এবারের আন্তর্জাতিক জীব বিজ্ঞান অলিম্পিয়াডে অংশ নেবে।

সমাপনী ও পুরস্কার বিতরণ অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন কুমিল্লা শিক্ষাবোর্ডের কলেজ পরিদর্শক অধ্যাপক মো: জহিরুল ইসলাম পাটোয়ারী ও রোয়াকা পদকপ্রাপ্ত নারীনেত্রী পাপড়ি বসু। উৎসব আহ্বায়ক মাসুক আলতাফ চৌধুরীর সঞ্চালনায় কথা প্রকাশের প্রোগ্রাম কর্মকর্তা এসএম শাহরিয়ার মাসুদ ও বিডিবিও’র অনিরুদ্ধ প্রামানিকও বক্তব্য রাখেন।

কুমিল্লা অ লে উচ্চ মাধ্যমিক ক্যাটাগরি চ্যাম্পিয়ন কুমিল্লা সরকারি কলেজের রাশেদুল আলম সোহান, মাধ্যমিক ক্যাটাগরি চ্যাম্পিয়ন কুমিল্লা ক্যাডেট কলেজের আফনান ইবনে কামাল ও জুনিয়র ক্যাটাগরি চ্যাম্পিয়ন হওয়ার গৌরব অর্জন করে নোয়াখালী জিলা স্কুলের মাহমুদ রাজিব আসহাব। উচ্চ মাধ্যমিক ক্যাটাগরিতে চ্যাম্পিয়ন হয় ৬ জন- কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া সরকারি কলেজের সামিয়া জাহান, একই কলেজের মানজিদা রহমান অনি, কুমিল্লা সরকারি কলেজের নাঈমুল হাসান নাসিদ, একই কলেজের কানিজ ফাতেমা রিমি ও কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজের নুজহাত জাহান। এই ক্যাটাগরিতে ১০ জন প্রথম রানারআপ ও ১৯ জন ২য় রানারআপ হন। মাধ্যমিক ক্যাটাগরিতে চ্যাম্পিয়ন হয় ৫ জন- কুমিল্লা ক্যাডেট কলেজের আবির হোসেন খন্দকার, একই কলেজের তাহজিব আহমেদ, একই কলেজের মো: আফিফুর রহমান, কুমিল্লা জিলা স্কুলের মো: শাহদাত হোসেন ও বুড়িচং আনন্দ পাইলট সরকারি হাইস্কুলের মো: তারভীর আলম জয়। এই ক্যাটাগরিতে ১০ জন প্রথম রানারআপ ও ১৮ জন ২য় রানারআপ হন। জুনিয়র ক্যাটাগরিতে চ্যাম্পিয়ন হয় ৬ জন- কুমিল্লা ক্যাডেট কলেজের মোহাম্মদ ফাহিমুজ্জামন, ফেনী গার্লস ক্যাডেট কলেজের রাইসা আঞ্জুম সেজুতি, কুমিল্লা কালেক্টরেট স্কুল ও কলেজের অভি দেবনাথ, কুমিল্লা জিলা স্কুলের নাঈমুল ইসলাম, ফেনী গার্লস ক্যাডেট কলেজের শেখ সাবিরা ইসলাম ও কুমিল্লা জিলা স্কুলের শাহরিয়ার সাখাওয়াত ইরফান। এই ক্যাটাগরিতে ১১ জন প্রথম রানারআপ ও ২১ জন ২য় রানারআপ হন। ক্যাটাগরি চ্যাম্পিয়ন তিন শিক্ষার্থীকে ক্রেস্ট দেয়া হয়। বাকি বিজয়ীদের মেডেল প্রদান করা হয়। সকল বিজয়ীদের টি-শার্ট ও সার্টিফিকেট প্রদান করা হয়। শিক্ষার্থীদের সবাইকে অংশগ্রহণ সার্টিফিকেটও প্রদান করা হয়। বিজয়ী এই ১০৮ শিক্ষার্থী জাতীয় পর্যায়ে অলিম্পিয়াডে অংশ নেবে। পুরো উৎসব আয়োজনে সমকাল কুমিল্লার ফটোসাংবাদিক এন কে রিপন ও সমকাল সুহৃদ সমাবেশ কুমিল্লার সভাপতি জাবেদ হোসেন সার্বিক সহযোগিতায় ছিলেন। সুহৃদ সমাবেশ কুমিল্লার ৫০জন সুহৃদ এনজাইম হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
২৪ ফেব্রুয়ারী, ২০২০

আরো পড়ুন