‘কুন সময় যে ভাইঙ্গা লইয়া পড়ে আল্লায় জানে’

মাহফুজ নান্টুঃ কুমিল্লা আদর্শ সদর উপজেলার চাঁনপুর এলাকায় গোমতী নদীর ওপর নির্মিত বেইলি সেতুটি ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে। এই সেতু দিয়ে কুমিল্লা আদর্শ সদর, বুড়িচং, ব্রাহ্মণপাড়া ও পার্শ্ববর্তী ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার অন্তত ২০ হাজার মানুষ যাতায়াত করেন।

এমন ঝুঁকিপূর্ণ সেতুতেই প্রতিদিন যানজট তৈরি হয়। সেতু দিয়ে যাতায়াকারীদের আশঙ্কা, এটি ভেঙে যেকোনো মুহূর্তে ঘটতে পারে বড় রকমের দুর্ঘটনা। তাই এর দ্রুত সংস্কার বা নতুন সেতু তৈরির দাবি জানিয়েছেন স্থানীয়রা।

সরেজমিনে দেখা যায়, অন্তত ১০ জায়গায় মরিচা পড়ে সেতুটির রেলিং ভেঙে গেছে। মাইক্রোবাস ও পিকআপ উঠলেই কেঁপে ওঠে। পিলারে মরিচা ধরে নড়বড়ে হয়ে পড়েছে। আর পাটাতনগুলো ক্ষয়ে গেছে। ঝুঁকি নিয়েই সিএনজিচালিত অটো ও প্যাডেলচালিত রিকশাসহ অন্যান্য হালকা যানবাহন এ সেতুর ওপর দিয়ে পার হচ্ছে।

কুমিল্লার বাগড়া সড়ক দিয়ে চলাচলকারীদের এই সেতুটি পার হতে হয়। অধিক ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ায় ২০২০ সালের অক্টোবরে কুমিল্লা আদর্শ সদর উপজেলা পরিষদের অর্থায়নে জরুরিভিত্তিতে সংস্কারের উদ্যোগ নেয়া হয়। সে সময় সংস্কারকাজের জন্য সেতুর ওপর দিয়ে যান চলাচল এক সপ্তাহের জন্য বন্ধ থাকে। সংস্কারের পর নিরাপত্তার কথা ভেবে সেতুটির ওপর দিয়ে ভারী যানবাহন চলাচল নিষিদ্ধ করা হয়। পণ্যবাহী ট্রাক যেন সেতুর ওপর উঠতে না পারে, সেজন্য সেতুর প্রবেশমুখে প্রতিবন্ধক তৈরি করা হয়। এরপর আর কোনো সংস্কার হয়নি সেতুটির।

সেতুর ওপর দিয়ে নিয়মিত চলাচল করেন অটোরিকশা চালক ওবায়দুর রহমান। তিনি বলেন, ‘আইজ ছয় বছর এই সড়কটি দিয়ে সিএনজি চালাই। ঈদগা থেকে বাগড়া পর্যন্ত যাইতে এক থেকে সোয়া এক ঘণ্টা লাগে। তবে যখন চাঁনপুর ব্রিজে জাম লাগে হেই সময় বাগড়া যাইতে দুই আড়াই ঘণ্টা লাগে। এরপর এই ব্রিজডা টিনের। কুন সময় যে ভাইঙ্গা লইয়া পড়ে, আল্লায় জানে।’

পিকআপ চালক ফজলুর রহমান বলেন, ‘এহন এমন ঝুঁকিপূর্ণ ব্রিজ আর কোথাও নাই। আমি দোকানের মালামাল পৌঁছে দিই। চাঁনপুর ব্রিজটার কাছে আইলে দোয়া-দুরুদ পড়ি। আল্লারে ডাকতে ডাকতে ব্রিজ পার হই।’

বেসরকারি ব্যাংকে কর্মরত আফজল হোসেন জানান, এমনিতেই সেতুটি ঝুঁকিপূর্ণ। এর ওপর প্রায় প্রতিদিনই যানজট লেগে থাকে। এই সেতুর কারণে প্রতিদিন তাদের কর্মঘণ্টা নষ্ট হয়।

কুমিল্লা আদর্শ সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আমিনুল ইসলাম বলেন, ২০১৭ ও ২০২০ সালে সেতুটি সংস্কার করা হয়। ওই সময় এটি স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) আওতায় ছিল। এখন এটি সড়ক ও জনপদ (সওজ) অধিদপ্তরের আওতাধীন। তাই সেতুর উন্নয়ন কিংবা সংস্কার নিয়ে কিছু করার ক্ষেত্রে আদর্শ সদর উপজেলার আইনগত জটিলতা আছে। সেতুটি নিয়ে কী পরিকল্পনা, তা সওজ ভালো বলতে পারবে।

কুমিল্লা সওজের নির্বাহী প্রকৌশলী সুনীতি চাকমা বলেন, ‘নতুন সেতুর জন্য কারিগরি সমীক্ষা চলছে। এরই মধ্যে সয়েল টেস্ট (মাটি পরীক্ষা) শেষ হয়েছে। আগামী বছর থেকে নতুন সেতুর কাজ শুরু হবে।’

আরো পড়ুন