কুমিল্লায় ২ বছরেও শনাক্ত হয়নি শাবাৎ এর খুনিরা

কুমিল্লায় ২ বছর পরও শাবাৎ হত্যার রহস্য উদঘাটন হয়নি। শনাক্ত হয়নি খুনিরা। এতে ক্ষুব্ধ নিহতের পরিবার।

সন্তান হারিয়ে পাগলপ্রায় শাবাৎ এর মা রাফিয়া আক্তার ডেইজি। কুমিল্লা মহিলা কলেজের সাবেক এই অধ্যক্ষ বলেন, ‘গুনে গুনে দুই বছর পার হলেও এখনও শনাক্ত হয়নি শাবাৎ এর খুনিরা। কত তথ্য-উপাত্ত দিলাম, তবুও পুলিশ কেন খুনিদের ধরতে পারছে না। দুই বছর ধরে রাতে ঠিকমতো ঘুমোতে পারিনি। প্রতিদিন রাতে কান পেতে থাকি। মনে হয়, এই বুঝি শাবাৎ এসে ডাকল, আম্মা দরজা খোল।’

এ সময় তিনি বলেন, ‘আমার ছেলে আসবে না জেনেও প্রতীক্ষায় আছি। ওরা আমার ছেলেটাকে নির্মমভাবে মেরে ফেলল। কবে ধরা পড়বে খুনিরা। মৃত্যুর আগে যদি শুনে যেতে পারতাম আমার ছেলেকে কেন তারা খুন করেছে, তাহলে মরেও শান্তি পেতাম।’

কুমিল্লা নগরীর মুন্সেফ কোয়ার্টার এলাকার বাসিন্দা চিকিৎসক লিয়াকত আলী খান ও কুমিল্লা মহিলা মহাবিদ্যালয়ের সাবেক অধ্যক্ষ রাফিয়া আক্তার ডেইজি দম্পতির ছোট ছেলে শাবাৎ খান। ২০১৯ সালের ১ জানুয়ারি শাবাৎকে মেরে নদীতে ফেলে রাখে দুর্বৃত্তরা। দুই বছর পেরোলেও এখনও ধরাছোঁয়ার বাইরে খুনিরা।

ছেলের মৃত্যুতে শোকাহত মা ডেইজি বারবার স্মৃতিচারণা করেন সেই দিনের নানা ঘটনার। বলেন, ‘২০১৯ সালের ৩১ ডিসেম্বর রাতে বাসা থেকে বের হয়ে আর ফেরেনি শাবাৎ। বের হওয়ার সময় মোবাইল ফোন, মানিব্যাগ কিছুই নেননি। ছিল শুধু চাবির রিং। পরদিন ২০২০ সালের ১ জানুয়ারি সকালে প্রতিবেশীদের কাছ থেকে জানতে পারি, ছেলের মরদেহ ভাসছে গোমতী নদীতে।’

তিনি বলেন, ‘আমরা ভালো নেই। আমাদের ছেলেকে হারিয়েছি। আমরা জানি বিচ্ছেদের কী যন্ত্রণা। আমার ছেলে সহজ-সরল ছিল। গত এক বছরে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর দিকে চেয়ে আছি। কবে খুনিরা আটক হবে। দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হবে।’

শাবাৎ এর বড় বোন ডা. শারমিন খান বলেন, ‘আমরা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে সব রকম তথ্য-উপাত্ত দিয়েছি। তারা বলছেন কাজ করছে। কিন্তু এখনও কোনো কূলকিনারা হয়নি।’

শাবাৎ খানের বাবা ডা. লিয়াকত আলী বলেন, ‘২০২০ সালের ১২ মার্চ শাবাৎ খানের ময়নাতদন্ত রিপোর্ট আসে। যেখানে উল্লেখ আছে শ্বাসরোধে হত্যা করা হয়েছে শাবাৎকে। পুলিশকে সব ধরনের তথ্য দিয়ে সহায়তা করার পরও আসামিদের ধরতে পারছে না পুলিশ।’

দুই জানুয়ারি শাবাৎ খানের বাবা ডা. লিয়াকত আলী খান ১০ জনের নাম উল্লেখ করে কোতোয়ালি থানায় মামলা করেন। এ সময় তদন্ত কর্মকর্তা ছিলেন উপপরিদর্শক শাহীন কাদির।

১০ দিন পর মামলাটি পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনে (পিবিআই) হস্তান্তর করা হয়। এখন মামলার তদন্ত করছেন কুমিল্লা পিবিআইয়ের পরিদর্শক মতিউর রহমান।

বিষয়টি নিয়ে তদন্ত কর্মকর্তা মতিউর রহমান বলেন, ‘তদন্ত চলছে। নির্ভরযোগ্য ক্লু না পাওয়ায় রহস্য উদঘাটনে দেরি হচ্ছে। প্রযুক্তির ব্যবহার করছি। আমরা সর্বোচ্চ চেষ্টা করছি।’

আরো পড়ুন