কুমিল্লা পুলিশের নারী ও শিশু সহায়তা সেল, স্বপ্ন বাঁধলো ২শ ৬৯টি পরিবার

বিল্লাল হোসেন রাজুঃ রুমি আক্তার দুই শিশুর জননী। ছেলে শুভ আর মেয়ে খুকি। তার স্বামী সোহলে রানা মাদকাসক্ত। পারিবারিক কলহে মনোমালিন্য সৃষ্টি হয় তাদের সুখের পরিবারে। কোর্টে নারী নির্যাতন মামলা করে রুমি আক্তার। বাড়তে থাকে দূরত্ব। শিশু শুভ ও খুকি কোন কিছু না বুঝলেও, পরতে যাচ্ছিলো অভিভাবকহীন অনিশ্চিত জীবনের মধ্যে। এদিকে ফাতেমা আক্তার। স্বামী আবুল খায়ের। একমাত্র শিশু সন্তান ওমর ফারুককে নিয়ে সুখেই ছিল তাদের সংসার। পারিবারিক কলহের জের ধরে মামলা হয় কোর্টে। এ পরিবারটিও বিচ্ছেদের পর্যায় চলে যায়। ঠিক একই কারণে আনোয়ারা বেগমের সুখের সংসার বিচ্ছেদের উপক্রম। নিতে যাচ্ছিলো অমানবিক সিদ্ধান্ত। রুমি, ফাতেমা ও আনোয়ারার মতো ২শ ৬৯টি পরিবার বিচ্ছেদের মতো সিদ্ধান্ত থেকে ফিরে এসেছে। ঘর বেঁধেছে নতুন স্বপ্নে। যা সম্ভব হয়েছে কুমিল্লা জেলা পুলিশের নারী ও শিশু সহায়তা সেলের মাধ্যমে। কুমিল্লা জেলা পুলিশ সুপার মোঃ শাহ্ আবিদ হোসনের যোগদানের পর ১৬ সালের এপ্রিল মাসে শুরু হয় এ সেলের কার্যক্রম।

‘‘নারী ও শিশু সহায়তা সেলের মাধ্যমে অনেক শিশু ফিরে পেলো তাদের অভিভাবকের পরিচয়। মিটলো অনেক পরিবারের কলহ। নতুন করে স্বপ্ন বাঁধলো ২শ ৬৯টি পরিবার। এই সেলে কাজ করতে পেরে আমার ভীষণ ভালো লাগছে। আমি আনন্দের সাথে তাদের বুঝাই। আমাদের স্যারেরাও তাদের বুঝায়। এই সেলের মাধ্যমে নিষ্পাপ অনেক শিশু তাদের বাবা মায়ের অধিকার ফিরে পেয়েছে। অনেক শিশু ও পরিবারের মুখে হাসি ফুটেছে’’। কুমিল্লা জেলা পুলিশ সুপার কার্যালয়ে তৃপ্ত সুখে এসব কথা বলছিলেন কুমিল্লা জেলা নারী ও শিশু সহায়তা সেলের শুরু থেকে কাজ করে আসা পুলিশ পরিদর্শক পলি রাণী বর্ধন।

২০১৬ সালের এপ্রিল ১৭ সালের নভেম্বর পর্যন্ত নারী ও শিশু সহায়তা সেল তথ্য থেকে জানা যায়, এ পর্যন্ত মোট ৩শ ০৬টি অভিযোগ জমা পড়েছে। এদের মধ্যে যৌতুকের অভিযোগ ২শ ৬৩টি, ধর্ষণের চেষ্টা ২৫টি, ধর্ষণ ৭টি, অপহরণ ৩টি, শ্লীলতাহানী ৭টি ও অন্যান্য অভিযোগ ১টি জমা পড়েছে। মোট একটি ৩শ ০৬টি অভিযোগের মধ্যে একত্রে বসবাস করছে ১শ ৪৭জন। বিবাহ বিচ্ছেদ হয়েছে ৬২জন। থানায় দায়ের ২টি মামলা। বিজ্ঞ আদালতে শরনাপন্ন হওয়ার পরামর্শ ১৪টি। মোট অভিযোগ নিষ্পত্তি ১শ ২৫টি। মোট নিষ্পত্তি ২শ ৬৯টি অভিযোগ। মূলতবী হয়েছে ৩৭টি অভিযোগ। কোর্ট থেকে বিভিন্ন অভিযোগে নারী ও শিশু সহায়তা সেলে ১শ ৭২টি অভিযোগের মধ্যে একত্রে বসবাস করছে ৭১টি পরিবার। অন্যদিকে নারী ও শিশু সহায়তা সেলে সরাসরি ১শ ৩৪টি অভিযোগের মধ্যে ৭৬টি পরিবার একত্রে বসবাস করছে।

অভিজ্ঞতা ব্যক্ত করতে গিয়ে পুলিশ পরিদর্শক পলি রাণী বর্ধন আরো বলেন, এ সেলে যে সব অভিযোগ জমা পড়ে এদের মধ্যে বেশির ভাগ অভিযোগই মধ্যবিত্ত ও নিম্নবিত্ত পরিবারের। বেশির ভাগ অভিযোগকারীরাই বিচ্ছেদ চায়। আমরা সব অভিযোগকে সমানভাবে গুরুত্ব দিয়ে বাদী বিবাদীদের কাউন্সিলিং করি। আমাদের চেষ্টা থাকে বিচ্ছেদের মতো অমানবিক সিদ্ধান্ত থেকে ফিরিয়ে আনা।

এ ব্যাপারে কুমিল্লা জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (দক্ষিণ) মোঃ আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, ‘পুলিশ সুপারের নির্দেশে আদালতে মামলার জট কমাতে এবং পারিবারিক বিচ্ছেদ কমাতে নারী ও শিশু সহায়তা সেল গঠন করা হয়। পরিবারের ছোট খাটো বিষয় বেশির ভাগ নারী নির্যাতন মামলা হয়ে থাকে। মামলার ফলে বাড়তে থাকে পারিবারিক দূরত্ব। পুলিশ জনগনের বন্ধু। তাছাড়া কমিউনিটি পুলিশিং দর্শন প্রচারের মাধ্যমে মানুষে মানুষে বন্ধন দৃঢ় করার প্রচেষ্টা। তিনি আরো বলেন, আমরা বিশ্বাস করি নারী ও শিশু সহায়তা সেলের মাধ্যমে পারিবারিক বিচ্ছেদ অনেকটা কমিয়ে আনতে পারবো। জনগণের মধ্যে সচেতনতা তৈরি করতে পারবো।
উল্লেখ্য, স্বামী বা স্বামীর পরিবারের লোকজন কর্তৃক যৌতুকের জন্য নির্যাতন, স্বামী কর্তৃক শারীরিক বা মানসিক নির্যাতন, নারী ও শিশুদের পারিবারিক, শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন, নারীদের বা মেয়েদের ইভটিজিং সংক্রান্ত সমস্যা, পারিবারিক কলহ ও বিরোধ, ভুল বোঝাবুঝির প্রেক্ষিতে সৃষ্ট দাম্পত্য সমস্যা, স্ত্রী ও সন্তানদের খোঁজ খবর না রাখা বা খোরপোষ না দেওয়া সংক্রান্ত সমস্যা, নারী ও শিশুদের সামাজিক যে কোন সমস্যা ও নারী বা শিশুদের নিরাপত্তা ও অন্যান্য যে কোন পুলিশিং সেবা।

আরো পড়ুন