কুমিল্লার দেবীদ্বারে মোবাইলের জন্য বন্ধুকে খুন
ডেস্ক রিপোর্টঃ কুমিল্লার দেবীদ্বারে স্কুলছাত্র জয় চন্দ্র ঘোষ (১৩) হত্যাকাণ্ডের রহস্য উদঘাটন করেছে পুলিশ।
পুলিশ জানায়, একটি মোবাইল ফোন বেচা-কেনাকে কেন্দ্র করে গত ৯ জানুয়ারি চার বন্ধু মিলে পিটিয়ে হত্যা করেছে জয়কে।
এ ঘটনায় আটক নয়ন, দূর্জয়, সুশান্ত ও দ্বীপ্তকে পুলিশ শনিবার বিকেলে কুমিল্লা বিশেষ আদালত, ৯নং (কুমিল্লা সদর দক্ষিণ) আমলী আদালতে হাজির করলে তারা বিচারক চন্দন কান্তি নাথের কাছে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দেয় ও হত্যাকাণ্ডের লোমহর্ষক বিবরণ দেয়। পরে বিচারক চন্দন কান্তি নাথ তাদের জবানবন্দি নথিভূক্ত করে জেল হাজতে পাঠানোর নির্দেশ দেন।
নিহত জয় চন্দ্র ঘোষ উপজেলার বরকামতা গ্রামের অমরচন্দ্র ঘোষের বড় ছেলে। সে চান্দিনা সরকারি মডেল পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ের অষ্টম শ্রেণির ছাত্র।
আটকদের জবানবন্দির বরাতে পুলিশ জানায়, নিহত জয়ের বাবা মিষ্টি দোকানের কর্মচারি। শখের বসে একটি স্মার্টফোন কিনেছিল জয়। কিন্তু পরিবারের অভাব অনটনের কারণে সেটি বিক্রি করার সিদ্ধান্ত নেয় সে। পরে মোবাইলের দরদাম করে বন্ধু দুর্জয় দাসের সঙ্গে। এসময় দাম নির্ধারণ হয় ১ হাজার টাকা। কিন্তু পরদিন জয় এক হাজার টাকায় মোবাইল বিক্রি করবে না বলে জানায় দুর্জয়কে। এতেই ক্ষিপ্ত হয়ে দুর্জয় জয়কে দেখে নেওয়ার হুমকি দেয়। দূর্জয় চন্দ্র দাস একই গ্রামের শীতল চন্দ্র দাসের ছেলে, সে পঞ্চম শ্রেণিতে পড়ার পর আর লেখাপড়া করেনি। স্বর্ণকারের কাজ করছিল।
পুলিশ আরও জানায়, অন্যদিকে গত ডিসেম্বর মাসের শেষ দিকে জয়ের সঙ্গে কথা কাটাকাটি হয় বন্ধু নয়ন দাসের। নয়ন দাস(১৫) একই গ্রামের ভজন চন্দ্র দাসের ছেলে। সে একই বিদ্যালয়ে ১০ শ্রেণিতে পড়ত। ওই ঘটনায় পর নয়ন ও জয়ের মধ্যে মেলামেশা বন্ধ ছিল। এ সুযোগটা কাজে লাগায় দূর্জয়। প্রতিশোধের নেশায় নয়ন দাসকে সঙ্গে নিয়ে দল ভারি করে।
পুলিশ জানায়, নিজেদের মধ্যে আলোচনা শেষে গত ৯ জানুয়ারি বিকেল থেকে সংঘবদ্ধ হয় দুর্জয়, নয়ন ও অপর দুই বন্ধু একই পাড়ার সুনীল চন্দ্র দাসের ছেলে সুশান্ত চন্দ্র দাস (১৫) , সে নবম শ্রেণির ছাত্র এবং মৃত স্বপন কুমার করের ছেলে দ্বীপ্ত কর(১৫), সে অষ্টম শ্রেণির ছাত্র। এরপর ৪ বন্ধু মিলে জয়কে হত্যার পরিকল্পনা করে। পরে রাত ৮টার দিকে দূর্জয় সিগারেট খাওয়ার কথা বলে ফোনে জয়কে ডেকে আনে বরকামতা ইউপি কার্যালয়ের সামনে। এরপর বরকামতা সূত্রধর পাড়ার কালি মন্দিরের পেছনে তারা। পূর্বপরিকল্পনানুযায়ী সেখানে উপস্থিত ছিল নয়ন দাস, সুশান্ত দাস এবং দ্বীপ্ত কর। সেখানে পৌঁছার পর হঠাৎ লাঠি দিয়ে জয়ের মাথায় আঘাত করে নয়ন দাস। পরপর এলাপাথারী পেটালে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে জয়। পরে নাকে হাত লাগিয়ে জয়ের মৃত্যু নিশ্চিত হওয়াসহ তারা মরদেহ গুম করে রাখতে মাটিচাপা দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। দূর্জয় বাড়ি থেকে কোদাল নিয়ে আসে। মরদেহ মাটি চাপা দেওয়ার পরে মন্দিরে ঢুকে সবাই শপথ করে এ ঘটনা কখনোই ফাঁস করবে না। পুলিশ যদি কাউকে আটক করে মেরেও ফেলে তখনো একে অপরের নাম প্রাশ করবে না।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা দেবীদ্বার থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) কিবরিয়া জানান, গত ১৬ জানুয়ারি জয়ের মরদেহ উদ্ধারের পর আমরা অভিযান চালিয়ে ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের গ্রেফতার করতে স্বক্ষম হয়েছি। এদের মধ্যে দুর্জয়কে শুক্রবার আদালতে হাজির করলে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তি দিয়েছে। শনিবার বাকিদের হাজির করলে তারাও একই স্বীকারোক্তি দেয়। আসামিদের কারাগারে পাঠিয়েছেন আদালত। ঘটনাটি এখনও তদন্ত চলছে। ঘটনার সাথে জড়িত অন্য কেউ থাকলে তাদেরও গ্রেফতার করা হবে।
উল্লেখ্য, গত ৯ জানুয়ারি বিকেলে খেলার কথা বলে বাড়ি থেকে বের হয় জয়। এরপর আর বাড়ি ফেরেনি। অনেক খোঁজাখুঁজির পরও তার কোন সন্ধান না পেয়ে ১১ জানুয়ারি দেবীদ্বার থানায় নিখোঁজ ডায়েরি করে তার পরিবার। পরে গত ১৬ জানুয়ারি সকালে বরকামতা সূত্রধর পাড়ার কালি মন্দিরের পেছনে এক কৃষক ধানের চারা তুলতে গিয়ে মাটির নিচে পুঁতে থাকা মরদেহের ডান হাত বের হয়ে থাকতে দেখে স্থানীয়দের খবর দেয়। খবর পেয়ে দেবীদ্বার থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে এসে মাটির নিচে পুঁতে থাকা মরদেহ উদ্ধার করে।
সূত্রঃ সমকাল