মনোহরগঞ্জে তরুণীকে ধর্ষণের পর হত্যার ঘটনা উদঘাটন
ডেস্ক রিপোর্টঃ কুমিল্লার মনোহরগঞ্জের তরুণী রোকসানা আক্তারকে (১৯) গণধর্ষণের পর হত্যার অভিযোগে দায়ের করা মামলার আসামী এবং ঘটনার মূলহোতা ইউনুস মিয়াকে (২৩) গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) কুমিল্লার সদস্যরা। গ্রেপ্তাররের পর ধর্ষক ইউনুস পিবিআইকে জানিয়েছে- ওই মামলার অপর দুই আসামীর করা অপমান সইতে না পেরে বিষপানে আতœহত্যা করেছে রোকসানা। গত সোমবার বিকেলে কুমিল্লার ৬ নম্বর আমলী আদালতের জৈষ্ঠ্য বিচারিক হাকিম শারমিন রীমার আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে ধর্ষক ইউনুস। সে মনোহরগঞ্জ উপজেলার বিপুলাসার ইউনিয়নের সাইকচাইল গ্রামের মাহবুবুল হকের ছেলে। গণধর্ষণের পর হত্যার শিকার ওই তরুণী একই গ্রামের ভ্যানচালক ইমান আলীর মেয়ে।
রোকসানার মা রঙ্গিলা বেগমসহ পরিবারের সদস্যরা জানায়, গত ১২ ডিসেম্বর রাতে রোকসানা আক্তারকে নিজ বাড়ির পাশের একটি পরিত্যাক্ত ঘরে নিয়ে গণধর্ষণের পর হত্যা করা হয়। ওইদিন রাতে রক্তমাখা জামাকাপড়সহ রোকসানার লাশ দেখতে পেয়ে স্থানীয়রা পুলিশকে খবর দেয়। খবর পেয়ে পুলিশ লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য মর্গে প্রেরণ করে। এ ঘটনায় পর ১৪ ডিসেম্বর রোকসানার বাবা ভ্যানচালক ইমান আলী তাঁর এক আতœীয়কে নিয়ে থানায় মামলা করতে গেলে রহস্যজনক কারনে পুলিশ মামলা নেয়নি। উল্টো তাদের গালমন্দ করে মনগড়া একটি অপমৃত্যুর মামলা নেয় তারা (পুলিশ)। সর্বশেষ নিরুপায় হয়ে চলতি বছরের ২ জানুয়ারী কুমিল্লার আদালতে রোকসানাকে গণধর্ষণের পর হত্যার অভিযোগ এনে ৩জনকে অভিযুক্ত করে একটি মামলা তায়ের করেন তার মা রঙ্গিলা বেগম। পরে আদালত মামলাটি আমলে নিয়ে এফআইআর পূর্বক মামলাটি তদন্তের জন্য পিবিআই কুমিল্লাতে প্রেরণ করার জন্য মনোহরগঞ্জ থানা নির্দেশনা প্রদান করে। আদালতের নির্দেশে ৭ জানুয়ারী মনোহরগঞ্জ থানায় মামলাটি এফআইআর করে তদন্তের জন্য পিবিআইতে প্রেরণ করা হয়। মামলায় অভিযুক্ত আসামীরা হলেন; সাইকচাইল গ্রামের আবদুস সোবহানের ছেলে দাইয়া মিয়া (৪৮), মাহবুবুল হকের ছেলে ইউনুস মিয়া (২৩) এবং আইডা মিয়ার ছেলের ইউনুস (৩৫)।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) কুমিল্লার পুলিশ পরিদর্শক মো.মতিউর রহমান বলেন, আদালতের নির্দেশে আমরা গত ৯ জানুয়ারী মামলাটি তদন্ত শুরু করি। এরপর ১১ জানুয়ারী মামলার প্রথম আসামী দাইয়া মিয়াকে গ্রেপ্তার করি। পরে দুই দিন রিমান্ডে এনে জিজ্ঞাসাবাদ করলেও সে কিছুই স্বীকার করেনি। সর্বশেষ গত রবিবার (৩ ফেব্রুয়ারী) কুমিল্লা নগরীরর টমছমব্রিজ এলাকা থেকে প্রযুক্তির সাহায্যে মামলার দুই নম্বর আসামী ইউনুস মিয়াকে গ্রেপ্তারের পর জিজ্ঞাসাবাদ করলে সে ঘটনার বিস্তারিত বর্ণনা দেয়। পরে গত সোমবার বিকেলে আদালতেও স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেয় ইউনুস।
পুলিশ পরিদর্শক মো.মতিউর রহমান জানান, স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে ইউনুস দাবি করেছে- রোকসানার পিতা চট্টগ্রামে ভ্যান চালিয়ে সংসার চালাতেন। রোকসানাও চট্টগ্রাম থাকতেন। গত ৩ বছর আগে প্রতিবেশী হওয়ার সুবাদে রোকসানাদের বাসায় (চট্টগ্রাম) বেড়াতে যায় ইউনুস। সে সময় তাদের মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে উঠে। গত ৬ মাস আগে রোকসানা গ্রামের বাড়িতে চলে আসে। ঘটনার দু’দিন আগে অর্থাৎ ১০ জানুয়ারী রোকসানার মা তার আরেক সন্তানসম্ভাবা বোনকে দেখতে চট্টগ্রামে যায়। বাড়িতে কেউ না থাকার সুবাদে ঘটনার দিন (১২ ডিসেম্বর রাতে) মামলার প্রথম আসামী দাইয়া মিয়া রোকসানাদের ঘরে টিভি দেখতে যায়। এ সময় ইউনুস মোবাইল ফোনের মাধ্যমে রোকসানাকে বাড়ির পাশের একটি পরিত্যাক্ত রান্না ঘরে ডেকে নিয়ে যায়। এক পর্যায়ে ইউনুস রোকসানাকে ধর্ষণ করে। এ সময় দাউয়া মিয়া এবং মামলার অপর আসামী ইউনুস সেখানে গিয়ে উপস্থিত হলে ধর্ষক ইউনুস পালিয়ে যায়। এরপর ওইদিন রাতে রোকসানা ধর্ষক ইউনুসকে ফোনে বলে- ‘তুমি প্রেমের সম্পর্কের মাধ্যমে আমার সঙ্গে দৈহিক সম্পর্ক করেছো। এটা দাইয়া আর ইউনুস দেখে ফেলেছে। এনিয়ে তারা আমাকে অনেক অপমান করেছে। আর এখন তুমিও (ধর্ষক ইউনুস) পালিয়ে গেছো। তাই আমি বিষ খেয়ে নিজেকে শেষ করে দিলাম’।
কুমিল্লা জেলা পিবিআই প্রধান অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো.ওসমান গনি পিপিএম বলেন, আমরা পিবিআইতে আসা প্রতিটি মামলার ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠার জন্য কাজ করে যাচ্ছি। এই ঘটনাটির ক্ষেত্রেও তার ব্যতিক্রম ঘটেনি। এই মামলাটি আমাদের হাতে আসার পর আমরা ব্যাপকভাবে তদন্ত শুরু করি এবং আসামীদের গ্রেপ্তার করি। তবে এই মামলার ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন আমরা এখনো হাতে পাইনি। আর মামলার আসামী ইউনুস আদালতে যেই স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি তাও আমরা তদন্ত করে দেখছি। কারন এমনটাও হতে পারে ওই তরুণীকে ধর্ষণের পর তারাই বিষ খাইয়ে হত্যা করেছে। এছাড়া মামলার অপর আসামীকে গ্রেপ্তারে আমাদের অভিযান অব্যাহত রয়েছে।
মামলার বাদী রঙ্গিলা বেগম বলেন, পুলিশের কাছে গেলেও মামলা না নিয়ে উল্টো আমাদের হয়রানি করেছে, গালমন্দ করেছে। পুলিশের এমন আচরণ দেখে মনে করেছিলাম মনে হয় মেয়ের ইজ্জত লুন্ঠন ও হত্যাকারীদের বিচার হবে না। কিন্তু পিবিআইয়ের তদন্তে আমরা এখন আশার আলো দেখছি। এখন মনে হচ্ছে খুনিদের উপযুক্ত বিচার হবে, ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠা হবে।