কুমিল্লা নিমসার বাজার রণক্ষেত্র, বাজার রক্ষার দাবীতে বিক্ষোভ ও মানববন্ধন
বুড়িচং (কুমিল্লা) প্রতিনিধিঃ কুমিল্লার ঐতিহ্যবাহী সর্ববৃহৎ পাইকারী কাঁচাবাজার নিমসারে ইজারাদার ও স্থানীয় ব্যাবসায়ী এলাকাবাসী সাথে সংঘর্ষ ও গোলাগুলি ঘটনায় আহত উভয়পক্ষের ৩ জন। পহেলা বৈশাখ রবিবার ভোররাত থেকে সংঘর্ষের এ ঘটনায় এলাকায় চরম উত্তেজনা বিরাজ করছে, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। সকালে কয়েকদফা সংঘর্ষ ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া ও ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ৬ রাউন্ড গুলি করে পুলিশ। এতে বাজারের ব্যাবসায়ীরা অনিশ্চয়তা ও আতংকে ভুগছেন। পরে বিকেল ৪টায় বাজারের ব্যাবসায়ী শ্রমিক সহ এলাকার সহশ্রাধিক লোক একত্রিত হয়ে নিমসার বাজার রক্ষা ও সন্ত্রাসী হামলার প্রতিবাদে মহাসড়কে মানববন্ধণ প্রতিবাদ সভা ও বিক্ষোভ মিছিল করে।
দেশের বৃহৎ পাইকারি কাঁচামালের জন্য বিখ্যাত কুমিল্লার বুড়িচং উপজেলার ঢাকা চট্রগ্রাম মহাসড়ক সংলগ্ন ভেজিটেবল সিটি হিসেবে পরিচিত নিমসার কাঁচাবাজার। প্রতিদিন ১০ থেকে ১২ কোটি টাকা লেনদেন হওয়ায় বাজারটি পরিনত হয়েছে এ অঞ্চলের অর্থনৈতিক জোনে। কুমিল্লা সহ আশেপাশের জেলার হাজার হাজার কৃষক ব্যাবসায়ী ও শ্রমিক সহ লক্ষাধিক লোকের কর্মসংস্থান এ বাজারটি। ঐতহ্যবাহী এ বাজারটি ইজারা নিয়ে বিভিন্ন পক্ষের বিবাদমান গ্রুপ ও খাঁজনা আদায় অরাজকতা সহ নানা কারনে হুমকির মুখে পরেছে। সরকার নির্ধারিত খাজনা আদায়ের রশিদ বা সাইনবোর্ড না থাকায় গত কয়েক বছর ধরেই বাজারে অনিয়ম ও জুলুম চলছে বলে অভিযোগ বাজারের ব্যাবসায়ীদের । ইজারাদারদের রেশারেশিতে দুই তিন গুন বেশী টাকায় ইজারা নিয়ে সে টাকা আদায় করা হচ্ছে ব্যাবসায়ী ও কৃষকদের কাছ থেকে। আর এ খাজনা আদায় নিয়ে প্রতিদিনই ঘটছে নানা অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা।
আরো পড়ুনঃ কুমিল্লার “মাফিয়া ডন” মামুন, ইয়াবা যার পারিবারিক ব্যবসা
সোমবার সংঘটিত ঘটনার বিষয়ে নিমসার বাজার ব্যাবসায়ী সমিতি ও ইজারাদার পাল্টাপাল্টি অভিযোগ করেছেন।
বাজারের ইজারাদার ময়নামতি ইউপি এলাকার আকাবপুর গ্রামের মামুনুর রশিদ বলেন গত বছর বাজারটি ইজারা নিয়ে তিনি ২ কোটি লস গুনেছেন। আওয়ামিলীগ নেতা ও বাজারের ব্যাবসায়ী সমিতির সভাপতি কবির মেম্বার মোকাম ইউ পি ছাত্রলীগের সভাপতি জিলানী যুবলীগ সভাপতি মাসুদ সহ স্থানীয় বেশ কয়েকজন ব্যাবসায়ী ও নেতাদের কারনে খাজনা আদায় করতে না পারায় এ লস হয়েছে। সোমবার ভোর রাতে মাছ বাজারে খাজনা আদায় করতে গেলে আমার লোকদের উপরে হামলা চালায় জিলানী, হাফেজ, আলঙ্গীর, বাবু, শাহীন, ফারুক, মারুফ, ফয়সাল সহ আরো ২০/২৫ জন। এসময় অস্ত্র স্বস্ত্র নিয়ে ময়নামতি হরিণধরা এলাকার মিন্টু (৩৫) নামে আমার এক কর্মচারীকে কুপিয়ে গুরুতর আহত করে সে বর্তমানে কুমেক হাসপাতালে ভর্তি রয়েছে ।
এবিষয়ে বাজার কমিটির সেক্রেটারি মোকাম ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সভাপতি আব্দুল কাদের জিলানী পাল্টা অভিযোগ করে বলেন, মামুন বহিরাগত সন্ত্রাসী বাহিনী এনে বাজারের শান্তি শৃঙ্খলা নষ্ট করছে। দেশের শীর্ষ ইয়াবা ও মাদক কারবারি মামুন সে এই বাজারের ব্যাবসায়ি বা এলাকার নয়। বাজারের খাজনা আদায়ের অন্তরালে ইয়াবা কারবার করতেই তিন চার গুন বেশী টাকায় বাজার ইজারা নিয়ে কৃষক ও ব্যাবসায়ীদের ওপর জোর জুলুম করে বাজার ধ্বংশের পায়তারা করছে। আমার পৈত্রিক মালিকানাধিন মার্কেট থেকে খাজনা আদায় করেতে এসে সোমবার সকালে বাজারের মাছ ব্যাবসায়ীদের মারধর করে। এতে বাজারের ব্যাবসায়ী ও এলাকাবাসী ক্ষিপ্ত হয়ে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া ও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। মামুনের বহিরাগত সন্ত্রাসী বাহিনীর মারধরে একজন আড়ৎ এর লেবার ও ব্যাবসায়ী সহ দুজন আহত হয়েছে।
আরো পড়ুনঃ কুমিল্লার ইয়াবা ডন মিজান চট্টগ্রামে গ্রেপ্তার, পড়ুন কে এই মিজান?
মোকাম যুবলীগের সভাপতি বাজারের বিশিষ্ট ব্যাবসায়ী ও সিটি ব্যাংক নিমসার এজেন্ট শাখার চেয়ারম্যান মাসুদ রানা বলেন, বহিরাগত চিহ্নিত শীর্ষ মাদক ব্যাবসায়ী মামুন বাহিনী লক্ষ লোকের কর্মসংস্থান ঐতিহ্যবাহী এ বাজারটি ধ্বংশের পায়তারা করছে। অধিক টাকায় ইজারা এনে মাদক ব্যাবসার কালো টাকা সাদা করতে প্রতিনয়ত মাদকের বড় বড় চালান এনে এলাকার যুব সমাজকে নষ্ট করছে। তার অত্যাচারের কারনে বাজারটি থেকে অনেক ব্যাবসায়ী ও কৃষক মুখ ফিরিয়ে নিতে বসেছে। আমারা এলাকাবাসী বাজারটি রক্ষার স্বার্থে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা সদয় দৃষ্টি কামনা করছি। মামুন ও তার মাদক বাহিনীর হাত থেকে পরিত্রাণ পেতে ডিসি, এসপি ও স্থানীয় উপজেলা প্রশাসন ও এমপি মহোদয়ের সহ সকলের কাছে জোরলো দাবী জানাই।
বাজারের আড়ৎ ব্যাবসায়ী ও ব্যাবসায়ী কল্যাণ সমিতির সভাপতি সাবেক মেম্বার হুমায়ুন কবির বলেন, বাজারটি বহু লোকের কর্মসংস্থান। একটি মাদক ব্যাবসায়ী ও বহিরাগত সন্ত্রাসী চক্র বিগত দুবছর ধরে বাজারে নানা অনিয়ম ও লুটপাট চালিয়ে বাজারটি ধ্বংসের পায়তারা করছে। এসব অনিয়ম ও অত্যাচার নিয়ে মাননীয় ডিসি মহোদয় সহ ইউ এন ও মহোদয়ের কাছে লিখিত অভিযোগ করা হয়েছে। অতিরিক্ত খাজনা আদায় হয় সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের কারনে বাজারটি যেন নষ্ট না হয় এবিষয়ে এলাকাবাসী ব্যাবসায়ী কৃষক শ্রমিক সকলে ঐক্যবদ্ধ হয়েছে। এ বাজার আমাদের রুজি রুটি নিয়ে কোন পায়তারা করা হলে তা মেনে নেয়া হবে না। আমি এলাকাবাসীর পক্ষ থেকে মাননীয় এমপি, জেলা প্রশাসক কুমিল্লা, কুমিল্লা পুলিশ সুপার ও ইউ এন ও মহোদয় সহ সকলের কাছে ঐতিহ্যবাহী নিমসার পাইকারি কাঁচামাল ও ফলের বাজারটি ধ্বংসের হাত থেকে রক্ষার জন্য যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণের দাবী জানাই।
এ বিষয়ে বুড়িচং থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আনোয়ারুল হক বলেন, নিমসার একটি বৃহৎ বাজার। সোমবার ভোর রাতে সংঘর্ষের খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে আমি নিজে থানা থেকে অতিরিক্ত ফোর্স ও দেবপুর ফাঁড়ী পুলিশ সহ কয়েকটি টিম ঘটনাস্থলে অবস্থান নেই। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে ৫/৬ রাউন্ড ফাঁকা গুলি করা হয়। ইজারাদার ও স্থানীয় ব্যাবসায়ী নেতাদের সাথে খাজনা আদায়ের দ্বন্দ্বের জেরে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে বলে জানতে পেরেছি। পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে। আমরা উভয় পক্ষের সাথে আলাপ করে দ্বন্দ্ব নিরসনের চেষ্টা করছি। এ ঘটনায় কাউকে আটক করা হয়নি।