কুমিল্লা আলেখারচর চক্ষু হাসপাতাল, চোখের সমস্যা রোগীদের কাছে তীর্থস্থান
ডেস্ক রিপোর্টঃ চোখের আলো ফিরে পাওয়া যায় বলে জায়গাটি এখন বৃহত্তর কুমিল্লাবাসীর কাছে অতি প্রিয়। বলা যায় চোখের সমস্যা রোগীদের কাছে তীর্থস্থান।
শুধু হাসপাতালে নয়, আলেখারচর চক্ষু হাসপাতালের চিকিৎসকরা সেবার মহান ব্রত নিয়ে ছুটে মানুষের ঘরের দরজায়। চোখে ছানির কারণে ঝাপসা দেখা লোকদের পৃথিবীতে স্বপ্নের আলোর রশ্নি ফিরিয়ে দিয়ে আসেন। আলেখারচর চক্ষু হাসপাতাল।
যেখান থেকে গত ২৫ বছরে সোয়া লাখ চক্ষু রোগী সেবা গ্রহণের মাধ্যমে তাদের দৃষ্টিশক্তি ফিরে পেয়েছেন। খুবই স্বল্পমূল্য কিংবা বিনামূল্যেই।
কুমিল্লা তথা পুরো বাংলাদেশের নারী অন্যতম অগ্রদূত একুশে পদক প্রাপ্ত প্রয়াত ডা:জোবায়েদা হান্নানের প্রাণন্তকর প্রচেষ্টায় ১৯৯৪ সাল থেকে চোখের সমস্যায় ভুগতে থাকা দরিদ্র মানুষদের চিকিৎসা সেবা দিয়ে আসছে। এখন হাসপাতালটি চোখের সমস্যায় ভুগতে থাকা রোগীদের আস্থা ও বিশ্বাসের জায়গা দখল করেছে। চিকিৎসকদের আন্তরিকতা-সুন্দর ব্যবস্থাপনার জন্য দিনভর রোগীদের ভিড় লেগে থাকে।
হাসপাতালটির চিকিৎসক মো: দেলোয়ার হোসেন বলেন,প্রতিদিন আমি নিজে গড়ে দেড়শ রোগী দেখি। তারা নামমাত্র মূল্য চিকিৎসা সেবা পাচ্ছেন। আমরা যারা এখানে চিকিৎসক রয়েছি আমরা চেষ্টা করি রোগীর সর্বোচ্চ সেবা প্রদানে।
সেবা নিতে আসা কুমিল্লা বুড়িচং উপজেলার বাসিন্দা আবদুল আওয়াল জানান দীর্ঘদিন চোখের ছানিপড়া সমস্যায় ছিলেন। চোখে জাপসা দেখতেন। কাছের হলে কিছুটা দেখতেন তবে সামান্য দূরের বস্তু দেখতে পারতেন না। এখন নামমাত্র মূল্য কুমিল্লা আলেখারচর চক্ষু হাসপাতালে চোখের ছানিপড়া অপারেশনের পর খুব ভালো ভাবে দেখতে পারছেন। কারো সাহায্য ছাড়া নিজেই হাটাচলা করতে পারছেন।
পড়তে বসলে মাথা ব্যাথা করতো। চোখ থেকে পানি পড়তো। মেডিসিন বিশেষজ্ঞদের কাছে গেলে আলেখারচর হাসপাতালে যেতে বলে। বলছিলেন কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজের শিক্ষার্থী রাজিয়া সুলতানা। তিনি জানান,আমি চিকিৎসকদের পরামর্শে আলেখারচর চক্ষু হাসপাতালে যাই। পরীক্ষা নিরীক্ষার পর আমাকে চশমা দেয়া হয়। এখন আমি খুব ভালো আছি। চোখ দিয়ে পানি পড়ে না।
কুমিল্লা আলেখারচর চক্ষু হাসপাতালের জনসংযোগ কর্মকর্তা কিশোর কুমার ভৌমিক বলেন, বাংলাদেশ অন্ধ কল্যাণ সমিতির অঙ্গ প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ ইনষ্টিটিউট অব কমিউনিটি অফথালমোলজী (বিকো) ও চক্ষু হাসপাতালের মাধ্যমে পরিচালিত কুমিল্লা আলেখারচর চক্ষু হাসপাতাল থেকে প্রায় ৬০ লক্ষের অধিক রোগী সেবা গ্রহণ করেছেন।
আলেখারচর চক্ষু হাসপাতালের প্রধান পৃষ্ঠপোষক কুমিল্লা সদর আসনের সাংসদ বীরমুক্তিযোদ্ধা আ.ক.ম বাহা উদ্দিন বাহার। ১৫ সদস্য বিশিষ্ট্য পরিচালনা পর্ষদের সভাপতির দায়িত্ব পালন করছেন এড.আ.হ.ম তাইফুর রহমান। হাসপাতালটিতে সেবা গ্রহীতাদের সুশৃংখল সেবা পাওয়ার নেপথ্য পরিচালনা পর্ষদের ভূমিকা রয়েছে।
আলেখারচর চক্ষু হাসপাতালের মানব সম্পদ ব্যবস্থাপক মো:সাইদুল ইসলাম ভূঁইয়া বলেন, প্রয়াত ডা:জোবায়েদা হান্নানের প্রাণের প্রতিষ্ঠান আলেখারচর চক্ষু হাসপাতাল। এই মহীয়সী নারীর জন্য বিনম্র শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করে বলি উনার এই প্রতিষ্ঠানটিতে লাখো মানুষ যেমন সেবা নিচ্ছেন তেমনি এখানে চিকিৎসক, কর্মকতা-কর্মচারী মিলিয়ে ২১২ জন লোকের কর্মসংস্থানও হয়েছে।
সেবার কথায় বলতে গেলে বাংলাদেশে এমন স্বল্পমূল্য দ্বিতীয় কোন হসপিটাল আছে কিনা জানা নাই। আর এই হাসপাতাল থেকে কুমিল্লা, ব্রাহ্মনবাড়িয়া, লক্ষ্মীপুর, নোয়াখালী,চাঁদপুর, ফেনী ও নারায়ণগঞ্জের মানুষ সেবা পান।
আবার এখানকার চিকিৎসক টিম ক্যাম্পেইনের মাধ্যমে বিভিন্ন এলাকার সাধারণ মানুষের দাড়গোড়ায় গিয়ে চোখের সমস্যা জনিত সমস্যার সমাধান করে আসেন। আমরা যারা এখানে চাকরি করি আমরা মনে করি আমরা শুধুমাত্র চাকরি করছি না একটি মহৎ কাজের সাথে সংযুক্ত আছি। যে কাজে অন্ধত্বের অন্ধকার থেকে স্বপ্নের আলোয় নিয়ে আসি। আমরা একাজে আরো এগিয়ে যেতে চাই যেখানে আর কেউ অন্ধত্বের অভিশাপে ভুগবে না।