সমাব’র্তনের উচ্ছ্বাসে মুখর কু’মিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস
সকাল থেকেই প্রিয় প্রাঙ্গণে সমবেত হচ্ছেন গ্র্যাজুয়েটরা। কালো গাউন পরে জড়িয়ে ধরছেন একে অপরকে। বাবা-মাকে নিয়ে এসেছেন অনেকেই। কেউ ছবি তুলছেন, আবার কেউ মেতে উঠেছেন উৎসবে। এত আনন্দের মাঝেও তাদের চোখে পানি। হয়তো আর আসা হবে না ক্যাম্পাসে। আজ যে আনুষ্ঠানিক বিদায় দিবে লাল পাহাড়ী কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়।
প্রতিষ্ঠার ১৩ বছর পর আজ সোমবার কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ে অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে প্রথম সমাবর্তন। সমাবর্তনকে ঘিরে শিক্ষার্থীদের পদচারণায় মুখর ক্যাম্পাস। বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় খেলার মাঠে অনুষ্ঠিত হবে সমাবর্তনের আয়োজন। এর মধ্যে প্রস্তুত হয়েছে মাঠ। প্রথম এ সমাবর্তনে প্রায় দুই হাজার ৮৮৭ জন গ্র্যাজুয়েটকে ডিগ্রি দেওয়া হবে। সমাবর্তনকে সুন্দর ও স্বার্থক করতে শেষ মুহুর্তে ব্যস্ত সময় পার করছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারীরা।
সমাবর্তন উপলক্ষে বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় খেলার মাঠে নির্মাণ করা হয়েছে প্রায় চার হাজার মানুষ ধারণ ক্ষমতার বিশাল প্যান্ডেল। বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন জায়গায় আলোকসজ্জার ব্যবস্থা করা হয়েছে। ক্যাম্পাসের বিভিন্ন স্থানে সৌন্দর্যবর্ধনে লাগানো হয়েছে বাহারি ফুল গাছ।
সমাবর্তনে সভাপতিত্ব করবেন বিশ্ববিদ্যালয়টির আচার্য রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ। সমাবর্তন বক্তা হিসাবে উপস্থিত থাকবেন বাংলাদেশ সরকারের অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল (লোটাস কামাল)। অতিথি হিসেবে আরো উপস্থিত থাকবেন বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. কাজী শহীদুল্লাহ, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চেীধুরী এমপিসহ প্রমুখ।
সমাবর্তনে নিবন্ধন করা ২ হাজার ৮৮৭ জন গ্র্যাজুয়েটদের মধ্যে স্নাতক ডিগ্রিধারী ১ হাজার ২২২ জন এবং স্নাতক ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রিধারী ১ হাজার ৬৬৫ জন। এছাড়া শিক্ষায় অসমান্য অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ ১৪জন শিক্ষার্থীকে চ্যান্সেলর স্বর্ণপদক দিবেন রাষ্ট্রপতি।
সমাবর্তনকে সামনে রেখে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মধ্যে বিরাজ করছে উৎসবের আমেজ। শুক্রবার থেকে দেওয়া শুরু হয়েছে সমাবর্তনের গিফট সামগ্রী।
অ্যাকাউন্টিং অ্যান্ড ইনফরমেশন সিস্টেম বিভাগের প্রথম ব্যাচের শিক্ষার্থী আহসান হাবীব। তিনি উপজেলা নির্বাচন অফিসার হিসেবে কর্মরত। তিনি বলেন, ‘ক্যাম্পাস জীবনে সাংবাদিকতা করেছি। সেই সুবাদে প্রিয় এ ক্যাম্পাসের প্রতিটি প্রাণের সঙ্গে যেন আমার অনন্তকালের আত্মার বন্ধন। প্রত্যাশা ও প্রাপ্তির বিস্তর ফারাককে পাশ কাটিয়ে প্রথম সমাবর্তনকে কেন্দ্র করে সহপাঠী, শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারী, জুনিয়র ভাই-বোনসহ সকলে মিলে আনন্দের হাট বসবে লাল পাহাড়ের সবুজ ক্যাম্পাসে। এ আনন্দে মনোচিত্তে আজ আনন্দ আর উচ্ছ্বাসের অভূতপূর্ব শিহরণ জাগছে।’
সমাবর্তনে রেজিস্ট্রেশন করা গ্র্যাজুয়েটদের দুপুর ১২ টা ৩০ থেকে ২ টার মধ্যে আসন গ্রহণ করতে হবে। পর্যায়ক্রমে আমন্ত্রিত অতিথিবৃন্দের আসন গ্রহণ, সমাবর্তন শোভাযাত্রা, মহামান্য রাষ্ট্রপতির আগমন ও জাতীয় সংগীত, পবিত্র ধর্মগ্রন্থসমূহ থেকে পাঠ, সমাবর্তনের অনুষ্ঠান উদ্বোধন, বিশ্ববিদ্যালয় উপাচার্যের স্বাগত বক্তব্য, মাননীয় চ্যান্সেলর কর্তৃক ডিগ্রি প্রদান, স্বর্ণপদক প্রদান, অতিথির বক্তব্য, সমাবর্তন বক্তার বক্তব্য, ক্রেস্ট বিনিময়, মহামান্য রাষ্ট্রপতি ও মাননীয় চ্যান্সেলরের ভাষণ, সমাবর্তন অনুষ্ঠানের সমাপ্তি ঘোষণা, জাতীয় সংগীত এবং মহামান্য রাষ্ট্রপতি ও মাননীয় চ্যান্সেলরের সমাবর্তন স্থল ত্যাগের মধ্যে দিয়ে সমাবর্তন অনুষ্ঠান শেষ হবে। এ ছাড়া সন্ধ্যায় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকবেন জয়প্রিয় শিল্পী জেমস, সংগীত ব্র্যান্ডদল এনকোরসহ প্রমুখ।
সমাবর্তনের সার্বিক প্রস্তুতির বিষয়ে উপাচার্য অধ্যাপক এমরান কবির চৌধুরী বলেন, সাবেক শিক্ষার্থীদের একান্ত প্রত্যাশার বিষয় সমাবর্তন। প্রথমবার এত বড় আয়োজন করাটা চ্যালেঞ্জের। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থী এবং কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সহযোগিতায় ইতোমধ্যে সমাবর্তনের সার্বিক প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে।