আজ পবিত্র শবে মেরাজ
আজ পবিত্র শবে মেরাজ। ইসলাম ধর্মে বছরে যে কয়টি রাত ফজিলতপূর্ণ এর একটি শবে মেরাজ। ২৬ রজব এই রাতটি ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্যের মধ্য দিয়ে পালিত হয়। সে হিসেবে আজ বৃহস্পতিবার দিবাগত রাতই পবিত্র শবে মেরাজ।
লায়লাতুল মেরাজ বা শবে মেরাজ প্রিয়নবী সা.-এর মেরাজের স্মৃতির সঙ্গে জড়িত। নবুওয়াত লাভের একাদশ বর্ষের রজব মাসের ২৬ তারিখ দিবাগত রাতে আমাদের প্রিয় নবী হজরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হজরত জিবরাঈল আলাহিস্সালামের সঙ্গে পবিত্র কাবা হতে ভূমধ্যসাগরের পূর্ব তীর ফিলিস্তিনে অবস্থিত পবিত্র বায়তুল মুকাদ্দাস হয়ে সপ্তাকাশের ওপর সিদরাতুল মুনতাহা হয়ে সত্তর হাজার নূরের পর্দা পেরিয়ে আরশে আজিমে মহান আল্লাহ তায়ালার দিদার লাভ করেন এবং পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের হুকুম নিয়ে দুনিয়াতে প্রত্যাবর্তন করেন। তিনি অবলোকন করেন সৃষ্টি জগতের সব কিছুর অপার রহস্য।
ফার্সি শব্দ ‘শব’ অর্থ রাত। আর আরবি ‘মেরাজ’ অর্থ ঊর্ধ্বগমন। আর তাই ‘শবে মেরাজ’ অর্থ ঊর্ধ্ব গমনের রাত। মুসলমানদের ধর্ম বিশ্বাস অনুযায়ী, ২৬ রজব দিবাগত রাতে ঊর্ধ্বাকাশে ভ্রমণ করে মহানবী হজরত মোহাম্মদ (স.) আল্লাহ তা’য়ালার সাক্ষাৎ লাভ করেছিলেন। এ বছর সেই রাতটি পড়েছে ৮ ফেব্রুয়ারি।
এই মেরাজের মধ্য দিয়েই নামাজ মুসলমানদের জন্য ফরজ করা হয়। এ রাতেই প্রতিদিন ৫ বার নামাজ আদায় করার বিধান নিয়ে আসেন মহানবী।
মেরাজ কোরআন-হাদিস ও ইজমায়ে উম্মত-এর অকাট্য দলিলের মাধ্যমে প্রমাণিত। এই রাতের গুরুত্ব ও ফজিলত নিয়ে কোনো মুসলমানের সন্দেহ নেই। এ ঘটনার পর রসুল সা. অনেক বছর সাহাবায়ে কেরামের মধ্যে উপস্থিত থাকা সত্ত্বেও শবে মেরাজকেন্দ্রিক কোনো আমলের ব্যাপারে বিশেষ হুকুম দেননি। রসুল সা. নিজেও বিশেষ আমল করেননি।
রসুল সা. এর তিরোধানের পর প্রায় ১০০ বছর সাহাবায়ে কেরাম জীবিত ছিলেন। তারা ২৭ রজবকে বিশেষভাবে উদ্যাপন করেছেন বলে একটি ঘটনাও পাওয়া যায়নি। যে কাজ রসুল সা. করেননি, সে কাজ সাহাবায়ে কেরামও পরিহার করেছেন। সুতরাং ২৭ রজবে কোনো আমলকে দীনের অংশ মনে করা, সুন্নত হিসেবে প্রতিষ্ঠা করার চেষ্টা করা হাদিস ও সুন্নতসম্মত নয়। এটাকেই বেদআত বলা হবে।
শবে মেরাজ উপলক্ষ্যে অনেককে বিশেষ নামাজ আদায়ের জন্য মসজিদে সমবেত হতে দেখা যায়। বহু নারীও সেই রাতে নামাজ আদায় করার পদ্ধতি কী জানতে চান। বহু মুসলমান এই রাত উপলক্ষ্যে মেরাজের রোজা রাখতে চান বা রাখার বিধান জানতে চান। অনেকেই শবে মেরাজের নামাজ বা রোজাকে বিশেষ ফজিলতপূর্ণ মনে করেন।
নফল নামাজ আদায় করা ও রোজা রাখা অবশ্যই পুণ্যের কাজ। কিন্তু শবে মেরাজ উপলক্ষ্যে বিশেষ কোনো নামাজ ও রোজার বিধান ইসলামি শরিয়তে নেই। এ ব্যাপারে আল্লামা ইবনে রজব হাম্বলি রহ. লাতায়েফ ও মাআরেফ গ্রন্থে বলেন, রজব মাসের সঙ্গে সম্পর্কিত বিশেষ কোনো নামাজ নেই। রজব মাসের প্রথম জুমায় সালাতুর রাগায়েব প্রসঙ্গে যে-সব হাদিস বর্ণিত হয়েছে সেগুলো ভিত্তিহীন, মিথ্যা ও বানোয়াট।
আলেমদের মতে, শবে মেরাজ উপলক্ষ্যে নামাজ বিদআত। পরবর্তী যুগের আলেমগণের মধ্যে যারা এই মত ব্যক্ত করেছেন তাদের মধ্যে রয়েছেন আবু ইসমাঈল আনসারি, আবু বকর সামআনি, আবুল ফযল ইবনে নাসির ও আবুল ফারায ইবনে জাওযি রহ.সহ আরও অনেক আলেম।
পূর্ববর্তী যুগের আলেমগণ এ ব্যাপারে আলোকপাত করেননি। কেননা এই বিদআত হিজরি চতুর্থ শতাব্দীর পর প্রকাশ পেয়েছে। নবী করিম সা. এবং সাহাবায়ে কেরাম থেকে রজব মাসের রোজা সম্পর্কেও বিশুদ্ধ কোনো হাদিস বর্ণিত নেই।
মেরাজের উদ্দেশ্য সম্পর্কে আল্লাহ তাআলা কোরআনে বলেন لِنُرِيَهُ مِنْ آيَاتِنَا (মিরাজ সংঘটিত হয়েছিল) তাকে আমার নিদর্শন দেখাবার জন্যে। (সুরা বনি ইসরাঈল-১) নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এই রাত্রিতে অসংখ্য বড় বড় নিদর্শন দেখেছেন। মানব জাতির পিতা আদম আ. কে দেখেছেন। তার ডানপাশে ছিল শহীদদের (জান্নাতিদের) রুহ এবং বামপাশে ছিল জাহান্নামিদের রুহ।
শবে মেরাজ একটি কোরআনিক মহাসত্য। এটি ইসলামের ইতিহাসে একটি অবিস্মরণীয় ঘটনা। নবী জীবনের অনন্য গৌরব ও শ্রেষ্ঠত্ব। এর বিশেষ কোনো আমল, রোজা বা ইবাদত নির্ধারিতভাবে শরীয়তে সাব্যস্ত নেই। মুমিনগণ নিজ পছন্দ অনুযায়ী যে কোনো ইবাদত বন্দেগী ও নেক আমল করতে পারেন।
রসুল সা. সে রাত্রিতে জান্নাত ও জাহান্নাম দেখেছেন। জাহান্নামের প্রহরী মালেক ফেরেশতাকে দেখেছেন। তার দিকে ফিরে তাকাতেই তিনি আমাকে প্রথমেই সালাম দিলেন। (বুখারি৩১৮২, মুসলিম ২৫১)