‘আমি কি কুমিল্লায় হজ করতে আসছি’: অতিরিক্ত পুলিশ সুপার শামীম

কুমিল্লার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. শামিম কুদ্দুছ ভূঁইয়ার চাঁদাবাজির একটি অডিও দেশের একটি প্রভাবশালী দৈনিকের প্রতিনিধির কাছে আসে। অডিওতে বলতে শোনা যায়, এখন থেকে বাসস্ট্যান্ড থেকে কোনো টাকা সার্জন বা টিআইকে দিবেন না। আমার লোক আসবে তার কাছে দিবেন।‌

ওই অডিওতে ভুক্তভোগীকে বলতে শোনা যায়। একজন এএসপি সরাসরি টাকার জন্য আসে জীবনে প্রথম দেখলাম।‌ সব কাউন্টার থেকেই সরাসরি গিয়ে চাঁদা চেয়েছেন এএসপি। সরাসরি পুলিশের পোশাকেই এসেছিলেন এএসপি মো. শামিম কুদ্দুছ ভূঁইয়া। অডিওতে বলতে শোনা যায়। বাস মালিক একজন বলছেন ৩৮ বছরের বয়সে এই প্রথম দেখলাম কোনো এএসপি সরাসরি এসে টাকা চাইতে।

কুমিল্লা নগরীতে সার্জেন্ট এবং টিএসআই মিলে ১১ জন। পুরো জেলায় আছে ১৭ জন। ট্রাফিক সদস্য আছে ৮৯ জন।‌ প্রতি সার্জেন্টকে মাসে ২০ হাজার টাকা চাঁদা দেয়ার নির্দেশ দিয়েছে এএসপি শামিম।‌ এই বিষয় নিয়ে সার্জেন্টের মধ্যে তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখা গেলেও তারা কিছুই বলতে পারেনি।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন সার্জেন্ট ওই দৈনিককে বলেন, একটি বৈঠকে এএসপি মো. শামিম কুদ্দুছ ভূঁইয়া স্যার আমাদের বলেছিলেন। আমি ২০টি পরিবহনের নাম দিব। এগুলোর প্রত্যেকটি থেকে একটি করে গাড়ি ডাম্পিং করে রাখবেন। প্রতি গাড়ি মাসে ৫০০ টাকা করে দিবে। আমি কি এখানে হজ করতে আসছি, আমার তো সংসার আছে।

জেলায় ১০ হাজার অটো সিএনজির জায়গায় চলছে ৪০ হাজার অটোরিকশা ও সিএনজি। এছাড়াও কুমিল্লা নগরীতে রয়েছে তিনটি বাস স্ট্যান্ড। যত বেশি বাস, সিএনজি ও অটোরিকশা রাস্তায় চলে তত বেশি আয় কুমিল্লা ট্রাফিক পুলিশ অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. শামিম কুদ্দুছ ভূঁইয়ার।

বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের স্বৈরাচার শেখ হাসিনা সরকার পালিয়ে যাওয়ার পর কিছুদিন বন্ধ ছিল নগরীর বাস স্ট্যান্ড, সিএনজি এবং অটো রিক্সা থেকে চাঁদা আদায়। গত কয়েক মাস ধরে চাঁদা আদায় চলছে প্রতিযোগিতার মাধ্যমে।

কুমিল্লায় তিনটি জোন আছে। লাকসাম জোন ২০ হাজার, দাউদকান্দি ও দেবিদ্বার ৩০ হাজার টাকা করে প্রতিমাসে আদায় করে এএসপি মো. শামিম কুদ্দুছ ভূঁইয়া। এছাড়াও কুমিল্লায় ৫ হাজার সিএনজি চলাচল করে। প্রতিটি সিএনজি থেকে মাসে ৫০০ টাকা আদায় করা হয়।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, পুলিশ সুপারের সাথে গুরুত্বপূর্ণ বৈঠকের অনেক তথ্য আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের কাছে ফাঁস করেন এএসপি মো. শামিম কুদ্দুছ ভূঁইয়া। এমন একটি ঘটনা ও ঘটেছে কিছুদিন আগে‌। ডিএসবিতে চাঁদাবাজির অভিযোগে তাকে ট্রাফিক পুলিশের এএসপি হিসেবে বদলি করা হয়।

একজন বাস মালিক বলেন, একদিন পুলিশের পোশাকে এএসপি মো. শামিম কুদ্দুছ ভূঁইয়া জাঙ্গালিয়া বাসস্ট্যান্ডে এসেছেন। গাড়ি থেকে নেমে এসে বলেছেন যোগাযোগ আমার সাথে করবা, আমি ট্রাফিক ইনচার্জ।

এ বিষয়ে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ট্রাফিক মো. শামিম কুদ্দুছ ভূঁইয়া বলেন, টি আই ও সার্জেন্টরা এগুলো করে। আমার বিরুদ্ধে প্রোপাগান্ডা ছড়ানো হচ্ছে। প্রতিমাসে সার্জনদের থেকে বিশ হাজার টাকা করে নিচ্ছেন এ বিষয়ে তিনি বলেন, এগুলো মিথ্যা কথা। সার্জেন্ট ও টিআইরা এগুলো করছে আপনি ওদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়েছেন কিনা এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, চাঁদা আদায়ের সাথে সিটি কর্পোরেশনের লোক ব্যবসায়ী এবং কিছু কিছু সাংবাদিক জড়িত। সার্জেন্ট এমদাদ নামে একজন আছে সেগুলোর সাথে জড়িত। আরো কয়েকজন আছে। টিআই এডমিন সারোয়ার এরা জড়িত।

কুমিল্লা পুলিশ সুপার মো. নাজির আহমদ খাঁন বলেন, এএসপি সরাসরি টাকা চাইবে এ রকম হবার কথা না। এখনো পর্যন্ত আমি কোনো অভিযোগ পাইনি। বাস স্ট্যান্ডের মালিক বা সাধারণ মানুষ যদি কোনো অভিযোগ করে। আমি অবশ্যই আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নিব।

আরো পড়ুন