কুমিল্লা দেবীদ্বারে পুত্র কর্তৃক পিতাকে কুপিয়ে হত্যার চেষ্টা
দেবীদ্বার প্রতিনিধিঃ কুমিল্লার দেবীদ্বারে জমি সংক্রান্ত বিরোধের জের ধরে পাষন্ড পুত্র কর্তৃক পিতাকে কুপিয়ে হত্যার চেষ্টার অভিযোগ পাওয়া গেছে। ঘটনাটি ঘটে রোববার ভোর পৌনে ৫টায় দেবীদ্বার পৌর এলাকার ছোট আলমপুর চৌরাস্তার মোড়ে। ছোট আলমপুর গ্রামের মৃত: আজিম উদ্দিন’র পুত্র হাজী সুলতান আহমেদ (৭০) ফররের নামাজ পড়ার জন্য দেবীদ্বার সুজাত আলী সরকারী কলেজ মসজিদে যাওয়ার পথে বাড়ির সামনেই ‘কসমিপলিটান স্কুল এন্ড কলেজ’র সামনে নিজ পুত্র মোঃ শাহজাহান(৪৫) এবং মুখোশপড়া অপর এক ব্যক্তি সহ দু’জন চাপাতি নিয়ে অতর্কিত হামলা চালায়। কুপের আঘাতে মাথার টুপিসহ মাথা কেটে যায়। উপুর্জপুরি কুপ থামাতে যেয়ে হাতের বিভিন্ন অংশ কেটে যায়। এসময় তার সূর চিৎকারে প্রতিবেশী হাসিয়া বেগম সহ অন্যান্যরা ছুটে আসলে হামলাকারীরা একটি চাপাতিও দু’টি বস্তা ফেলে পালিয়ে যায়। স্থানীয়রা মরাত্মক আহত হাজী সুলতান আহমেদকে রক্তাক্ত অবস্থায় দ্রুত দেবীদ্বার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করায়। সংবাদ পেয়ে দেবীদ্বার থানার উপ-পরিদর্শক (এস,আই) মোশাররফ হোসেন একদল পুলিশ নিয়ে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ঘুরাঘুরির সময় আহত হাজী সুলতান আহমেদ’র পুত্র মোঃ শাহজাহানকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য থানায় নিয়ে যায়। রোববার দুপুরে ওই ঘটনায় আহত হাজী সুলতান আহমেদ বাদী হয়ে নিজ পুত্র মোঃ শাহজাহান ও অজ্ঞাত অপর এক ব্যক্তি সহ দু’জনকে অভিযুক্ত করে মামলা দায়ের করেন।
স্থানীয়রা জানান, হাজী সুলতান আহমেদ’র ২ পুত্র ও ৬ কণ্যা রয়েছেন। ৬ কণ্যার বিয়ে হয়ে গেছে। পুত্র মোঃ শাহজাহান(৪৫) উপজেলা কমপ্লেক্সে চটপটি বিক্রয় করেন আর মোস্তফা(৪৩) বাড়ির পাশেই চাদোকানের ব্যবসা করেন। পুত্ররা পৃথক হয়ে যার যার সংসার পরিচালনা করে আসছেন। এরই মধ্যে কিছু সম্পত্তি পুত্ররা নিজেদের নামে লিখে নেন। পুত্রদ্বয় সম্পত্তি নিজ নামে লিখে নেয়ার পর বৃদ্ধ পিতার খাওয়া পড়ায় আর কেউ খোঁজ রাখেননা।
প্রায় ৯ মাস পূর্বে হাজী সুলতান আহমেদদের বড় পুত্র মোঃ শাহজাহান চাচা আলতব আলীর পুত্র আব্দুল কাদের থেকে দেড় শতক জমি ক্রয় করেন। জমি ক্রয় করার সময় শাজাহান তার পিতা থেকে ৪ লক্ষ টাকা ধার নেন। ওই টাকা নেয়ার সময় সালিসের মাধ্যমে পিতার মাসিক খরচ হিসাব প্রতিমাসে পাঁচ হাজার টাকা করে পত্তনে দেয়ার কথা থাকলেও মাসিক ৫ হাজার টাকা আর পরিশোধ করেননি। পরে সালিসের মাধ্যমে ৫ মাস পর ২৫ হাজার টাকা আদায় করে দেয়া হয় এবং ধারে নেয়া মূল ৪ লক্ষ টাকা পরিশোধ করার আগ পর্যন্ত প্রতি মাসে পত্তনের ৫ হাজার টাকা নিয়মিত দেয়ার শর্ত দেয়া হয়। তার পর ৩ মাস গত হয়ে গেলেও পত্তনের মাসিক ৫ হাজার টাকা দেয়া বন্ধ এবং মূল পাওনা টাকা দেয়ার ব্যপারেও আগ্রহ না দেখানোর কারনে কয়েক দফা সালিস বসলেও সমাধান হয়নি।
শনিবার বিকেলে স্থানীয় মাতব্বর আলহাজ মোঃ ছিদ্দিকুর রহমান’র এর নেতৃত্বে এক সালিস বসে। শাহজাহান সালিসে উপস্থিত না হওয়ায়, সালিস মুলতবী ঘোষনা করে আজ সোমবার সকাল ৮টায় পুন:রায় সালিস বসার কথা ছিল। সালিসের নির্ধারিত সময়ের পূর্বের অর্থাৎ রোবার ভোর পৌনে ৫টায় পিতার উপর পুত্রের ওই লোমহর্ষক হামলার ঘটনা ঘটানো হয়।
স্থানীয়রা আরো জানান, সন্তানেরা পিতা-মাতার খাওয়া-পড়ায় কোন ধরনের সহযোগীতা না করায় এবং বড় পুত্র মোঃ শাহজাহান ধার নেয়া ৪ লক্ষ টাকার পত্তনের মাসিক ৫ হাজার টাকা করে না দেয়ায় সংসার পরিচালনায় এবং কণ্যাদের খোঁজ খবর নিতে হিমসিম খেতে হচ্ছে। তাই তিনি কিছু জমি বিক্রয়ের উদ্যোগ নেন, তাতেও বড় সন্তান শাহজাহান বাঁধ সাজে।
জানান, আমার বড় ছেলে শাহজাহান আমার ছোট ভাই আলতব আলীর পুত্র আব্দুল কাদের থেকে দেড় শতক জমি ক্রয় করার সময় আমার কাছ থেকে সালিসের মাধ্যমে ৪লক্ষ টাকা ধার নেয়। ওই টাকা ৬মাসের মধ্যে পরিশোধ করার কথা ছিল। এরই মধ্যে আমার খাওয়া পড়ার জন্য পত্তন হিসেবে মাসে ৫ হাজার টাকা করে নিয়মিত পরিশোধ করার কথা ছিল। ৬ মাস গত হওয়ার পর সালিস করে ২৫হাজার টাকা পরিশোধ করে। আবারো ৩ মাস গত হলেও টাকা না দেয়ায় আমার সংসার চালানো কঠিন হয়ে পড়ে। তাই শনিবার বিকেরে সালিস ডাকা হয়, সালিসে শাহজাহান উপস্থিত না থাকায় আজ রোববার সকাল ৮টায় সালিস ডাকা হয়। সালিসের পূর্বেই (অর্থাৎ ভোর রাতে) ফজরের নামাজ পড়ার জন্য সুজাত আলী কলেজ মসজিদে যাওয়ার পথে আমার পুত্র অপর এক ব্যক্তিকে নিয়ে আমাকে হত্যার উদ্দেশ্যে চাপাতি দিয়ে এলোপাথারী কুপিয়ে হত্যার চেষ্টা করে। আমার চিৎকারে প্রতিবেশীরা এসে আমাকে প্রানে রক্ষা করে। একটি চাপাতি দিয়ে আমাকে এলোপাথারী কোপানোর সময় প্রান বাচাঁতে আমি শক্ত হাতে ধরে রেখেছিলাম। তাই ওই চাপাতিটা নিতে পারেনি।
শাহজাহান আমার একজন কুলাঙ্গার পুত্র। ছোটবেলা থেকেই শাহজাহান হিংস্র প্রকৃতির ছিল। তাকে প্রায় ১৮/২০ বছর পূর্বে ওমান পাঠিয়েছিলাম। পাঠানোর কিছুদিন পর সংবাদ পাই সে সড়ক দূর্ঘটনায় মারা গেছে। পরিবারের পক্ষ থেকে খোঁজ খরব নিয়ে তার শান্তি কামনায় জন্য দোয়া ও মিলাদ পড়াই। এমনকি ৪০শার অনুষ্ঠানও সম্পন্ন করি। ঘটনার এক বছর পর তার হাতের লিখা একটি চিঠি পাই। চিঠিতে নিশ্চিত হলাম সে মরেনাই জীবীত আছে। তার ছয় মাস পর দেশে ফিরে আসে। দেশে ফিরে আসার পর জমি বিক্রি করে টাকা দেয়ার জন্য চাঁপ দিতে থাকে। আমি রাজি না হওয়ায় আমাকে বৈদ্যুতিক শক দিয়ে হত্যার চেষ্টা করেছিল। রাতের অন্ধকারে জানালা দিয়ে আমার শোবার ঘরের বিছানায় পানি ঢেলে আর্থিং তৈরী করে মূল বৈদ্যুতিক সংযোগ থেকে তারের সাহায্যে শক দিয়ে আমাকে হত্যার চেষ্টা করেছিল। আমি পানির শিতল স্পর্শে জেগে গেলে আর হত্যা করতে পারেনি। সালিসেও তার সত্যতা স্বীকার করে।
এব্যপারে দেবীদ্বার থানার অফিসার ইনচার্জ মোঃ মিজানুর রহমান বলেন, পিতা কর্তৃক পুত্র শাহজাহান ও অজ্ঞাত অপর একজনকে অভিযুক্ত করে থানায় মামলা দায়ের করেন। অভিযুক্ত মোঃ শাহজাহানকে আটক করা হয়েছে, ঘটনার মুল কারন উদঘাটনে জিজ্ঞাসাবাদ চলছে।