কুমিল্লায় গৃহকর্তাকে হত্যা করে আত্মহত্যা বলে প্রচারের অভিযোগ!
মাহফুজ নান্টুঃ কুমিল্লা শহরতলীর দৌলতপুর পূর্বপাড়া এলাকায় সৌদিয়া হাউজ থেকে ঘরের সিলিং ফ্যানের সাথে বাঁধা অবস্থায় গিয়াসউদ্দিন (৫০) নামের এক গৃহকর্তার ঝুলন্ত লাশ উদ্বার করেছে কোতয়ালী মডেল থানার পুলিশ। তবে এটা হত্যা না আত্মহত্যা তা নিয়ে রহস্য সৃষ্টি হয়েছে। নিহতের স্বজনদের দাবী স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে পারিবারিক কলহের জেরে স্ত্রীর স্বজনরা হত্যা করে ফ্যানের সাথে ঝুলিয়ে আত্মহত্যা বলে প্রচার করেছে। এ নিয়ে ওই এলাকায় স্থানীয়দের মাঝে ধ্রুমজাল তৈরী হয়।
নিহত গিয়াউস উদ্দিনের স্বজনদের অভিযোগ, গিয়াস উদ্দিনের স্ত্রী সাজেদা বেগম এবং তার বড় ভাই পুলিশ কর্মকর্তা মাহে আলম গিয়াসউদ্দিনকে হত্যা করে লাশ ঝুলিয়ে রেখে আত্মহত্যা করেছে বলে অপপ্রচার চালায়। অপর দিকে স্ত্রীর স্বজনদের ভাষায় গিয়াসউদ্দিন মানসিক ভারসাম্যহীন ছিল। আর এ কারনে সে আত্মহত্যা করে।
জানা যায়, নিহত গিয়াসউদ্দিনের পৈত্রিকবাড়ী বাড়ি জেলার বুড়িচং উপজেলার কাবিলা এলাকার দুর্গাপুর (নোয়াপাড়া) গ্রামের তোফায়েল আহম্মেদের ছেলে। বেশ কয়েক বছর আগে গিয়াস উদ্দিন দৌলতপুর ছায়া বিতান রেল-লাইনের পশ্চিম পাশে ‘সৌদিয়া হাউজ’ নামক তিন তলা বাড়ি নির্মাণ করে বসবাস করে আসছে। সে ওই বাড়ির নিচতলায় ‘সৌদিয়া টেইলার্স’ নামের দোকান খুলে টেইলারী কাজ করত। তার বাড়ির পশ্চিম পার্শ্ব ঘেষে যৌথ সিঁড়িতে রয়েছে স্ত্রী’র বড় ভাই পুলিশ কর্মকর্তা মাহে আলমের চার তলা ‘মোল্লা হাউজ’ নামের বাড়ি। মাহে আলমের পৈত্রিক নিবাস জেলার সদর উপজেলার জগন্নাথপুর ইউনিয়নের হরিপুর গ্রামে। সে ওই গ্রামের মৃত আবদুল মালেকের ছেলে। পেুলিশ কর্মকর্তা মাহে আলম বর্তমানে লক্ষীপুর জেলার একটি ফাঁড়ির ইনচার্জের দায়িত্বে রয়েছেন বলে জানান তার স্ত্রী খোদেজা আলম।
স্থানীয়রা জানান, দীর্ঘ দিন ধরে গিয়াসউদ্দিন ও তার স্ত্রী সাজেদা বেগমের সাথে পারিবারিক কলহ চলে আসছিল। মঙ্গলবার সকালে স্বামী-স্ত্রী ঝগড়ার জের ধরে স্ত্রী ও তার বড় ভাই পুলিশ কর্মকর্তা মাহে আলম সহ মিলে গিয়াসকে মারধর করে হাত বেঁধে বাসার সামনে ডোবার মধ্যে ফেলে রাখে। ঘটনার পরে দুপুরে খবর পেয়ে কোতয়ালী থানার পুলিশ বাড়ির নিচতলায়‘সৌদিয়া টেইলার্স’ থেকে হাত বাঁধা অবস্থায় সিলিং ফ্যানের সাথে ঝুলন্ত গিয়াসউদ্দিনের লাশ উদ্ধার করে। নিহত গিয়াস উদ্দিনের এক ছেলে এক মেয়ে রয়েছে। মেয়ে বিবাহিত ও শিশু পুত্র স্থানীয় অশোকতলা ইকরা স্কুলে পড়াশুনা করে।
অপরদিকে পুলিশ কর্মকর্তা মাহে আলমের স্ত্রী খোদেজা আলম জানান, গিয়াসউদ্দিন মানসিক ভারসাম্যহীন ছিল। সে প্রায়ই স্ত্রীর সাথে ঝগড়া-বিবাদ করত। আজ (মঙ্গলবার) সকালে তারা আবারো ঝগড়া করে। সে আমার ননদকে (সাজেদা বেগম) মারধর করে। আমার স্বামী তার বোনকে উদ্বার করে হাসপাতালে নিয়ে চিকিৎসা দেয়। পরে ৯৯৯ এ খবর পেয়ে পুলিশ এসে ঝুলন্ত লাশ উদ্বার করে। তিনি আরো জানান, ঝগড়ার জের ধরে স্ত্রী তাকে মারধর করে হাত বেধে ডোবার ফেলে রাখায় রাগে-ক্ষোভে গিয়াসউদ্দিন সিলিং ফ্যানের সাথে ঝুলে আত্মহত্যা করেছে।
নিহতের ভাই কবির হোসেন জানান, আমার ভাইকে হত্যা করেছে তার স্ত্রী ও তার ভাই। গত কিছু দিন আগে বোনের স্বামী গিয়াস উদ্দিনের কাছ থেকে পুলিশ কর্মকর্তা মাহে আলম বাড়ির জায়গা ক্রয় করে। দীর্ঘদিন হয়ে গেলও সম্পত্তির কোন টাকা দেয়নি। সকালে তাকে মারধর করে হাত-পা বেঁধে রাখে। তারপর তাকে হত্যা করে সিলিং ফ্যানের সাথে ঝুলিয়ে রাখে। আমি মামলা করতে গেলে পুলিশ মামলা নেয়নি। তারা নাকি অভিযুক্ত পুলিশ কর্মকর্তার স্ত্রীর সাথে কথা বলেছে।
কোতয়ালী মডেল থানার পরিদর্শক তদন্ত সালাউদ্দিন জানান, দুপুরে কুমিল্লা দৌলতপুর রেলওয়ে রোড এলাকা একটি বাসা থেকে এক গৃহকর্তার ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। আত্মহত্যা না হত্যা ময়নাতদন্তের রিপোর্ট হাতে ফেলে মৃত্যুর সঠিক কারণ জানা যাবে। তবে এই ঘটনায় মৃত গৃহকর্তার স্ত্রীকে আটক করা হয়েছে।