কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস স্থানান্তর নিয়ে গুঞ্জন, ফেসবুকে শিক্ষার্থীদের প্রতিবাদ
ডেস্ক রিপোর্টঃ ইতিপূর্বে একাধিকবার কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম পরিবর্তনের চেষ্টা করা হয়েছে।কিন্তু শিক্ষার্থীদের প্রতিবাদের মুখে তা সম্ভব হয়নি। এবার ক্যাম্পাস স্থানান্তরের গুঞ্জন উঠেছে। প্রশাসন বলছে, ক্বেযাম্পাস স্থানান্তরিত হবে না। ক্যাম্পাস স্থানান্তরিত না হলেও সম্প্রসারণের নামে অন্য আর একটি ক্যাম্পাস যে করার পরিকল্পনা প্রশাসনের রয়েছে তার ইঙ্গিত মিলেছে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার ড. মো. অাবু তাহেরের কথায়।
আজ এক সংবাদ সম্মেলনে ক্যাম্পাস স্থানান্তরিত হবে না জানিয়ে তিনি বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয় মূল ক্যাম্পাস এখানেই থাকবে। এখান থেকেই ক্যাম্পাস সম্প্রসারণ করা হবে। তবে এই ক্যাম্পাসের পাশে পর্যাপ্ত ভূমি না থাকায় ক্যাম্পাস সম্প্রসারণ বিশ্ববিদ্যালয়ের দক্ষিণ-পশ্চিমে এক কিলোমিটার দূরে হবে। যেটা শিক্ষার্থীদের তেমন কোন সমস্যার কারন হবে না বলে মনে করছি। এখানেই কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়কে অাধুনিক বিশ্ববিদ্যালয় করা সম্ভব।’
সেই সংবাদ সম্মেলনের পর থেকেই ফেসবুকে প্রতিবাদ জানাতে শুরু করেছে বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীরা। তারা বলছে, একাধিক ক্যাম্পাস নয়, চাই অখণ্ড ক্যাম্পাস।রীতিমতো বিষয়টি নিয়ে ঝড় উঠেছে ফেসবুকে। ফেসবুকে প্রতিবাদের চিত্র তুলে ধরা হলো।
ইংরেজি বিভাগের শিক্ষার্থী হুমায়ূন তালুকদার লিখেছেন, ‘ক্যাম্পাস ফ্যাক্ট….রেজিস্ট্রার স্যার বলেছেন, “মূল ক্যাম্পাস এখানেই থাকবে। এই জায়গা পরিবর্তিত হবে না। তবে যেখানে নতুন জায়গা পাওয়া যাবে সেখানে ক্যাম্পাস সম্প্রসারিত হবে। স্যার ভালো কথা বলেছেন এইবার আমার কথা হচ্ছে যেখানে নতুন জায়গা পাওয়া যাবে সেখানে ক্যাম্পাস সম্প্রসারিত না করে বরং দয়াকরে বর্তমান ক্যাম্পাসের সাথে সম্প্রসারণ করেন।
তিনি আরো লিখেছেন, আমাদের ক্যাম্পাসের পিছনে, সামনে, ডানে,বামে, যথেষ্ট জায়গা রয়েছে। সুতরাং আমরা চাই সসম্প্রসারণ টা এই ক্যাম্পাসের পাশে হোক। এর বাহিরে কিছু করলে কুবিয়ানদের শরীরে শেষ রক্ত বিন্দু থাকা পর্যন্ত আন্দোলন করে যাবে।কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় নাম টি প্রতিটি কুবিয়ানের আত্নার সাথে জড়িত। সুতরাং আমাদের আত্মা নিয়ে টানাটানি করলে আমরা কাউকেই ছাড় দিবো না।’
প্রত্নত্ব বিভাগের শিক্ষার্থী কাজী কামরুল হাসান লিখেছেন, ‘কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় হতে যারা সম্মানের সহিত উচ্চতর ডিগ্রি নিয়ে বের হয়েছেন, এবং আমরা যারা এখনো কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আছি, আমাদের সকলের টাইম লাইন থেকে এক্টি প্রতিবাদ হয়ে উঠুক””””প্রিয় কুবি অখন্ড চাই””””ব্যক্তি স্বার্থ চরিতার্থ করতে যারা কুবিকে নিয়ে ষড়যন্ত্র করছে তাদের বিরুদ্ধে সোচ্চার হওয়ার জন্যে আগামীকাল ক্যাম্পাসে “” অখন্ড কুবি চাই””” দাবিতে বাংলাদেশ ছাত্রলীগ কুবি, এবং “কুবি সাংগঠনিক জোট ” আন্দোলনের ডাক দিবে আশা করি!! এটা আমাদের সকলের প্রাণের দাবি!!’
বাজার দরের মধ্যেই ভূমি অধিগ্রহণ করার দাবি জানিয়েছেন বাংলা বিভাগের শিক্ষার্থী রফিকুল ইসলাম ইনজামাম। তিনি ফেসবুকে লিখেছেন, ‘ভূমি অধিগ্রহণ ন্যায্য দামে করা হোক।কারণ প্রজেক্টের বিশাল একটা অংশ ভূমি অধিগ্রহণে ব্যয় হবে।শুধু ভূমি অধিগ্রহণ নয়,এর উন্নয়ন ও যাতে সদ্ব্যবহার হয় সেটা আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বোচ্চমহল আশা করি স্বচ্ছভাবে দেখবেন।
‘তিনি মনে করেন, ‘খালটা এমনভাবে কাটা উচিৎ যাতে কুমির যেন না ঢুকে পড়ে।(বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন নিয়মিত শিক্ষার্থী হিসেবে আমার এমন আলোচনা গ্রহণযোগ্যতার ভিত্তিতে দেখবেন সবাই)।’
অখণ্ড একটি ক্যাম্পাসের দাবি জানিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের লোক প্রশাসন বিভাগের শিক্ষার্থী মাহী ইসলাম লিখেছেন, আজকে ভিসি স্যারের সংবাদ সম্মেলনের পরে এটা পানির মত পরিষ্কার যে ক্যাম্পাস লালমাইতেই হচ্ছে। যত আাশ্বাস আর ভরসা দেয়া হচ্ছে সব সাজানো নাটক। কারন, আজকে যে এনিমেশনটা দেখিয়েছে তার প্রথমেই মৌজার নাম সিট নং 7, 9, 12 এবং 13 উল্লেখ করা আছে 12 ও 13 নং মৌজা হচ্ছে রাজা খোলা গ্রামের মৌজা। বিশ্ববিদ্যালয়ের এই প্রকল্পটি পাশ হওয়ার আগেই কোন জায়গা গুলো নেয়া হবে সেগুলো নির্ধারণ করা হয়েছে, প্রকল্পের ভিতরে জায়গার দাগ নাম্বার, মৌজা নম্বর, সিট নম্বর , কোন জায়গায় কতগুলো গাছ আছে কতগুলো ঘরবাড়ি আছে সবগুলোর হিসাব করেই প্রথমে ভূমি মন্ত্রণালয়, আইন মন্ত্রণালয়, পরিবেশ অধিদপ্তর, বন বিভাগ থেকে ছাড়পত্র নেয়া হয়েছে। যে জায়গার ছাড়পত্র নেয়া হয়েছে সে জায়গাগুলো প্রকল্পের ভিতর সুস্পষ্টভাবে উল্লেখ আছে এবং সে জায়গাগুলো প্রকল্প পাস হওয়ার সাথে সাথে নির্ধারণ হয়ে গিয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন আজকে যে কথা বলেছে যেখানে জায়গা খালি পাওয়া যাবে সেখানে জায়গা নেওয়া হবে এর থেকে মিথ্যা এবং বিভ্রান্তিমূলক কথা আর কোনটা হতে পারে না। জায়গা তো অলরেডি প্রকল্পের ভিতরে নিয়ে নেওয়া হয়েছে।’
তিনি আরো লিখেছেন, ‘আমি চ্যালেঞ্জ করলাম যদি বিশ্ববিদ্যালয়ের পাশে এক শতক জায়গা ও নেয়া হয় তাহলে আমার এই লেখার স্ক্রীন শর্ট রাখেন, স্ক্রিনশট দিয়ে প্রত্যেকে আমার উদ্দেশ্যে যা খুশি বলতে পারবেন। আর যদি আমার কথা সত্যি হয় তাহলে আপনারা কি করবেন। রাজা খোলা গ্রামের পাশের মৌজার 12 ও 13 নম্বর সিট কোন জায়গায় তা এলাকার মানুষকে জিজ্ঞাসা করবেন। আর আমাদের বিশ্ববিদ্যালয় ও বিশ্ববিদ্যালয়ের আশে পাশের জায়গার সিট নাম্বার হচ্ছে ৮। তার মানে হচ্ছে আমাদের ঘুম পাড়িয়ে রেখে সব কিছু করে ফেলার গভীর ষড়যন্ত্র করা হয়ে গেছে। আর উল্লেখিত জমিও একটি চক্র অনেক আগেই কিনে রেখেছে, চড়া মূল্যে বিক্রি করার জন্য।
তাই সব কুবিআনকে বলব জেগে উঠুন নিজেদের অস্তিত্ব রক্ষার লড়াইয়ে। #কর্মসূচি আসছে।#অখন্ড কুবি চাই।’
তাই সব কুবিআনকে বলব জেগে উঠুন নিজেদের অস্তিত্ব রক্ষার লড়াইয়ে। #কর্মসূচি আসছে।#অখন্ড কুবি চাই।’
ক্যাম্পাস স্থানান্তর বা আলাদা ক্যাম্পাস করা নিয়ে কোনো পরীকল্পনা যে করা হচ্ছে তার কিছু ইঙ্গিত মিলেছে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি ইলিয়াস হোসেন সবুজের ফেসবুক পোস্টে। তিনি লিখেছেন, চুপ থাকার শত ফজিলত।সুতরাং আমি চুপ (ইমো)।’ আবার ইঙরেজিতে লেখেছেন এবাউট প্রজেক্ট।
পরে নিজের অবস্থান জানানোর ঘোষণাও দিয়েছেন তিনি। একই পোস্টে তিনি লিখেছেন, ’হাজার হাজার ছাত্র-ছাত্রীর স্বার্থে প্রয়োজন হলে ২-৩ দিন পর মুখ খুলব।’
শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক মো. রেজাউল ইসলাম মাজেদ বলেছেন, চুপ থাকার অনেক ফজিলত।তিনি মুখে তালা লাগানো একটি ছবিও পোস্ট করেছে। তার ক্যাপশনে লিখেছেন, ’ক্ষমা করবেন?’
সূত্রঃ careertimes24