৪৮ ঘন্টা শ্রমিকদের অবরোধে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কসহ অচল কুমিল্লা
মো. জাকির হোসেনঃ সড়ক পরিবহন আইন-২০১৮ এর কয়েকটি ধারা সংশোধনসহ আট দফা দাবিতে পরিবহন শ্রমিকদের ৪৮ ঘণ্টার ধর্মঘটে এক প্রকার অচল ছিল কুমিল্লা। ঢাকা-চট্রগ্রাম মহাসড়কসহ কুমিল্লা থেকে বিভিন্ন গন্তব্যে চলাচলরত যাত্রীবাহী বাস ও পণ্যবাহী ট্রাক বন্ধ রয়েছে। এতে চরম জনদুর্ভোগের সৃষ্টি হয়েছে। অফিসগামী যাত্রী আর স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীদের যানবাহনের আশায় দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা গেছে ঢাকা-চট্রগ্রাম মহাসড়কের কুমিল্লা অংশের প্রতিটি বাসষ্ট্যান্ডে। কেউ কেউ মাইলের পর মাইল হেটে গন্তব্যে পৌঁছেছেন। মহাসড়কে লাঠি-সোটা নিয়ে অবস্থান নিলেও আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর লোকজনদের অনপুস্থিতি ছিল চোখে পড়ার মত।
সরেজমিন ঘুরে ও বিভিন্ন সুত্রে পাওয়া তথ্যে জানা গেছে, রোববার ভোর থেকেই সাপ্তাহিক ছুটি শেষে অনেকেই কর্মস্থলে ফিরতে কুমিল্লার ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের, চৌদ্দগ্রাম, মিয়াবাজার, সুয়াগাজী, পদুয়ারবাজার, ময়নামতি সেনানিবাস, চান্দিনা, মাধাইয়া, ইলিয়টগঞ্জ, গৌরীপুর, দাউদকান্দি এলাকায় ভীড় করে। এসময় ঘন্টার পর ঘন্টা মহাসড়কে অপেক্ষমান থাকলেও কোন যানবাহনের দেখা মিলেনি। স্বল্প দুরত্বেও লোকজন পায়ে হেটেই গন্তব্যে পৌছতে চেষ্টা করে। একই অবস্থা ছিল কুমিল্লা-সিলেট মহাসড়কের ময়নামতি সেনানিবাস, দেবপুর, কংশনগর, দেবীদ্বার, কোম্পানীগঞ্জ, কুমিল্লা-নোয়াখালী আঞ্চলিক মহাসড়কের পদুয়ারবাজার, লালমাই , বাগমারা, শানিচৌঁ, লাকসামজংশন, লাকসাম, বাইপাস, কুমিল্লা-চাঁদপুর, আঞ্চলিক মহাসড়কের মগবাড়ি, কেশনপাড়, বিজড়া, মুদাফফরগঞ্জসহ বিভিন্নস্থানে।
এছাড়া কুমিল্লা-বুড়িচং-মীরপুর সড়কেও সারাদিন বন্ধ ছিল যান চলাচল। সরেজমিন ঘুরে আরো দেখা গেছে, মহাসড়ক ও আঞ্চলিক মহাসড়কে যান চলাচল বন্ধ থাকায় অটোরিক্সা, ইজিবাইক বা ব্যাটারী রিক্সার উপর নির্ভর করে কেউ অতিরিক্ত ভাড়ায় গন্তব্যে পৌঁছার চেষ্টা চালায়। এসময় অনেকস্থানে শ্রমিকরা সড়ক-মহাসড়কের বিভিন্ন স্থানে ব্যারিকেড দিয়ে সেগুলো চলাচলেও বাধা দেয়। ফলে অবর্ণনীয় দুর্ভোগের কবলে পড়ে শত শত মানুষ। মহাসড়কে তখন আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কোন উপস্থিতি ছিলনা। এ সুযোগে আন্দোলনরত শ্রমিকরা গণপরিবহন চালানো বন্ধ রাখার পাশাপাশি ঢাকা-চট্রগ্রাম মহাসড়কের পদুয়ারবাজার, কোটবাড়ি রাস্তার মাথা, আলেখারচর, নিমসার, চান্দিনা, মাধাইয়া, ইলিয়টগঞ্জ, রায়পুর. গৌরীপুর. দাউদকান্দিসহ বিভিন্ন স্থানে অবস্থান করে অটোরিক্সা, ইজিবাইক, ব্যাটারীরিক্সা থামিয়ে যাত্রীদের নামিয়ে দিচ্ছেন। মহাসড়কের কালাকচূয়া, নিমসার, সিলেট অংশের কংশনগর এলাকায় শ্রমিকদের হাতে বেশ কিছু ছোট যানবাহন ভাংচুরের ঘটনাও ঘটে।
জানা যায়, রবিবার সকাল ৬টা থেকে ৪৮ ঘণ্টার ‘কর্মবিরতি’ শুরু করেছে মালিক শ্রমিকরা। বাসচালক অদুদ, শাহজাহান, কবির জানান, এ আন্দোলন কারো বিরুদ্ধে নয়। আমাদের স্বার্থ রক্ষার জন্যই এ আন্দোলন করছি। তারা আরো বলেন, সড়ক দুর্ঘটনার মামলা জামিন যোগ্য করতে হবে। চালকরা ৫ লাখ টাকা জরিমানা দিতে পারবে না। ৮ম শ্রেণি নয় চালকদের লাইসেন্সের জন্য ৫ম শ্রেণি পাশের আইন করতে হবে। এগুলোসহ ৮টি দাবির আদায়ে ধর্মঘট পালন করা হচ্ছে। এদিকে পূর্ব ঘোষনা থাকলেও কর্মবিরতি এত কঠোর হবে সেটা সাধারন মানুষের ধারনার বাইরে ছিল। বেসরকারী একটি এনজিও’র কর্মকর্তা মাহবুব আলম জানান,পারিবারিক কাজে কুমিল্লা এসেছিলাম। রোববার সকালে ঢাকা ফিরতে কুমিল্লা জাঙ্গালীয়া টার্মিনালে এসে দেখি বাস নেই। কিন্তু আমাকে যেতেই হবে। ফলে বাধ্য হয়ে সীটবিহীন টিকেট নিয়ে ট্রেনে ঢাকা ফিরছি। এরকম শত শত মানুষ দেখা ঢাকা-চট্টগ্রামমহাসড়কের কুমিল্লা অংশের বিভিন্নস্থানে।