কুমিল্লা-সিলেট মহাসড়ক যেন মরণফাঁদ
ডেস্ক রিপোর্টঃ দেশের অন্যতম ব্যস্ততম কুমিল্লা-সিলেট মহাসড়ক। কুমিল্লা ছাড়াও বন্দর নগরী চট্টগ্রাম, বান্দরবান, কক্সবাজার, রাঙ্গামাটি, খাগড়াছড়ি, ফেনী, নোয়াখালী, লক্ষীপুর, চাঁদপুর, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, সিলেট, ময়মনসিংহ, নেত্রকোনা,কিশোরগঞ্জ,হবিগঞ্জ থেকে যাতায়াতের একমাত্র ও প্রধান সড়ক এটি। প্রতিদিন বিপুল সংখ্যক লোক চলাচল করছে এই সড়ক পথে।
এরবাইরে কুমিল্লা ও বৃহত্তর সিলেটের বিভিন্নস্থানে চালু থাকা একাধিক গ্যাস ফিল্ডের ভারী যন্ত্রপাতি এই সড়ক পথেই বহন করা হচ্ছে। তবে সড়কটির গত একবছরে নামমাত্র ইট দিয়ে খানা-খন্দক ভরাট ছাড়া আর কোন সংস্কার নেই বললেই চলে। এতে বছরজুড়ে এই সড়কে চলাচলকারী অসংখ্য মানুষদের চরম দুর্ভোগের শিকার হতে হচ্ছে। কখনো কখনো ভাঙ্গাচোরা রাস্তায় যানবাহন উল্টে,কখনোবা বিকল হয়ে পড়লে সৃষ্ট হচ্ছে দীর্ঘ যানজট। এঅবস্থায় বর্তমানেও নামমাত্র সংস্কার কাজ হলেও কোনভাবেই জনদুর্ভোগ কমছেনা।
সরেজমিন ঘুরে পাওয়া তথ্যে জানা যায়,ব্যস্ততম মহাসড়কটিতে প্রায় পুরো বছর ধরেই চলে সংস্কারের নামে লুটপাট। কোথাও কোথাও সংস্কারের স্বল্প সময়ের মধ্যে আবারো পূর্বের অবস্থায় ফিরে যাচ্ছে সড়কের চেহারা। আর এতে প্রতিনিয়ত জনদুর্ভোগের কবলে পড়ছে যানবাহনের যাত্রীরা।
কুমিল্লা-সিলেট রুটে চলাচলকারী কুমিল্লা ট্রান্সপোর্ট’র একাধিক চালক নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, সড়কটির এমনই বেহাল অবস্থা, কুমিল্লা থেকে ব্রাহ্মণবাড়িয়া পর্যন্ত ৫০ মাইল এলাকা অতিক্রমে যেখানে এক বা সোয়া ঘন্টা লাগতো, সেখানে সড়কটির দুরাবস্থার কারণে ৩ ঘন্টায় সেই পথ অতিক্রম করা যাচ্ছেনা।
চালকরা আরো জানায়, সড়কটির ভাঙ্গাচোরার কারণে প্রায়ই গাড়ি বিকল হয়ে বা দুর্ঘটনাকবলিত হচ্ছে। এতে মহাসড়কটিতে প্রায়শই যানজট সৃষ্ট হচ্ছে। কুমিল্লা-সিলেট মহাসড়কটির কুমিল্লা অংশে রয়েছে প্রায় ৪২ কিলোমিটার অংশ। কুমিল্লার ময়নামতি সেনানিবাস থেকে কালামুড়া পর্যন্ত এই ৪২ কিলোমিটার সড়কটির কোথাও ব্যবহারের উপযোগী নেই। ব্যস্ততম সড়কটির কুমিল্লা অংশে পড়েছে কুমিল্লা সদর, বুড়িচং, দেবিদ্বার, মুরাদনগর ও ব্রাহ্মনপাড়ার অংশ বিশেষ। এসকল উপজেলার ময়নামতি সেনানিবাস, ফরিজপুর, রামপাল, সাহেবের বাজার,তুত বাগান, হরিণধরা, শরীফপুর, দেবপুর, রামপুর,পারুয়ারা, কংশনগর, বারেরা, কণ্ঠনগর, জাফরগঞ্জ, ভিরেল্লা, চরবাকর,কোরেরপাড়, ভিংলাবাড়ি, সাইলচর, চাপাঁনগর,দেবীদ্বার নিউমার্কেট,দেবীদ্বার থানা এলাকা,কোম্পানীগঞ্জসহ আরো বেশ কিছু স্থানের সড়ক ব্যবহারের একেবারেই অনুপযোগী। কোথাও বা বড় বড় গর্ত কোথাও পিচ উঠে আবার কোথাও ছোট ছোট অসংখ্য গর্ত মোট কথা মহাসড়কটি দেখার যেন কেউ নেই।
বুড়িচং এলাকার ফরিজপুর গ্রামের হাবিব, রামপাল গ্রামের কালা মিয়া জানান, সড়কটির ময়নামতি সেনানিবাস থেকে সাহেবের বাজার পর্যন্ত প্রায় দু’কিলোমিটার দীর্ঘ সড়কটি বছরে কমপক্ষে ১০/১২ বার সংস্কার হলেও অবস্থার উন্নতি নেই। ময়নামতি হরিণধরা এলাকায় অনেক সময় স্থানীয় গ্রামবাসী ইট ফেলে যান চলাচল স্বাভাবিক রাখার চেষ্টা করতে দেখা গেছে।
মহাসড়কের দেবিদ্বার এলাকার আমির হোসেন জানান, পাথরের তৈরী সড়কটির খানা-খন্দক বছরজুড়ে ইট দিয়ে ভরাট করায় ভারী যানবাহনের চাপে সেটা স্বাভাবিক থাকছে না।
দায়িত্বশীল একাধিক সুত্র জানান,দেশের অন্যতম ব্যস্ততম এই সড়ক পথে কুমিল্লা ও বৃহত্তর সিলেটের একাধিক গ্যাস ফিল্ডের যাবতীয় ভারী মালামাল বহন করা হয় । কিন্তু সড়কটি ভালো না হওয়ায় ভারী যন্ত্রপাতি বহনকরা যানবাহন চালকদের প্রতিনিয়ত দুর্ভোগের শিকার হতে হচ্ছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক দায়িত্বশীল সুত্র জানায়,সড়ক সংস্কারে সরকারী বরাদ্দ থাকলেও অসাধূ কর্মকর্তাদের গোপনে ঠিকাদারদের সাথে যোগসাজশে নাম মাত্র কাজ করে অর্থ হাতিয়ে নেওয়ায় কাজের কাজ কিছুই হচ্ছেনা। এতে সংস্কারের অল্প সময়ের ব্যবধানে আবারো পূর্বেও অবস্থায় ফিরে যাচ্ছে মহাসড়কের চিত্র।
গত বর্ষা মৌসুম শেষে কুমিল্লা সড়ক ও জনপথ বিভাগ সড়কের উল্লেখিত স্থানে সংস্কারে হাত দেয়। এসময় রাস্তার কার্পেটিং তুলে সংস্কার কাজ শুরু করলেও অজ্ঞাত কারণে গত প্রায় ৫ মাসেরও বেশী সময় ধরে অসমাপ্ত অবস্থায় পড়ে আছে।
দীর্ঘ দিনেও সংস্কার কাজ শেষ না হওয়া প্রসঙ্গে জানতে চাইলে কুমিল্লা সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী ড.আহাদুল্লাহ বলেন,টেন্ডার কাজ শেষে বরাদ্দ পাওয়া গেছে। শীঘ্রই সড়কের কাজ শুরু হবে।