জনবল সংকটে লাকসাম ৫০ শয্যা হাসপাতালে স্বাস্থ্যসেবা ব্যাহত

ডেস্ক রিপোর্টঃ লাকসাম উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে জনবল সংকট প্রকটাকার ধারণ করেছে। ৫০ শয্যার এ হাসপাতালে চিকিৎসকসহ জনবলের অভাবে রোগীদের স্বাস্থ্য সেবা দিতে হিমশিম খেতে হয়। এতে এ এলাকার কয়েক লাখ মানুষের স্বাস্থ্য সেবা বিঘ্নিত হচ্ছে।

জানা গেছে, চিকিৎসক ও জনবল সংকটে এ হাসপাতালের অপারেশন থিয়েটার (ওটি) চালু করা যাচ্ছে না। প্রসবজনিত সমস্যাসহ অপারেশনের রোগীদের শেষ পর্যন্ত বাধ্য হয়ে বেসরকারি হাসপাতালে যেতে হয়। এতে হতদরিদ্র, বিত্তহীন ও নিম্ন-মধ্যবিত্ত আয়ের রোগীসাধারণ আর্থিক সংকটসহ সরকারি চিকিৎসা সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।

এলাকাবাসী জানায়, লাকসামের সাড়ে ৩ লাখ লোকের একমাত্র ভরসা এই উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স। ২০০৯ সালের ২৬শে ফেব্রুয়ারি ৩১ শয্যা থেকে এটিকে ৫০ শয্যায় উন্নীত করা হয়। জনবলসহ অন্য সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধি না করায় অন্তহীন সমস্যায় হাবুডুবু খাচ্ছে চিকিৎসা সেবা।

চিকিৎসক সংকটে গুটিকয়েক ডাক্তার রোগীর চাপে হাঁপিয়ে উঠছেন। তাদের পক্ষে যথাযথ চিকিৎসা সেবা দেয়া সম্ভব হচ্ছে না। যারা কর্মরত আছেন তারাও নিয়মিত কর্মস্থলে থাকছেন না। আরএমও ডেঙ্গু রোগে আক্রান্ত হয়ে নিজেই চিকিৎসাধীন।

গত সোমবার সকাল সাড়ে ১০টায় সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, হাসপাতালে রোগীদের উপচেপড়া ভিড়। এ সময় ডাক্তার ও এসএসএমওদের স্বাস্থ্য সেবা দিতে হিমশিম খেতে দেখা যায়। এখানে শুধুমাত্র বহিঃর্বিভাগে প্রতিদিন গড়ে ৪শ রোগী চিকিৎসা নিতে আসেন। তাছাড়া, ৬০ থেকে ৭০ জন মা ও শিশু ভ্যাকসিন সেবা নিয়ে থাকেন। তবে চিকিৎসা নিতে আসা রোগীরা ব্যবস্থাপত্র নিয়ে বের হলে বিভিন্ন কোম্পানীর মেডিকেল রি-প্রেজেন্টেটিভরা ঘিরে ধরেন। তারা মোবাইলে ব্যবস্থাপত্রের ছবি তুলছেন। এতে রোগীরা অতীষ্ট হয়ে পড়লেও বিষয়টি কেউ আমলে নিচ্ছে না।

সূত্র জানায়, বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকসহ চিকিৎসা কর্মকর্তার ২৬টি পদের মধ্যে ১৬টিই শূন্য। মেডিসিন, এ্যানেসথেসিয়া, শিশু, নাক-কান-গলা, চর্ম ও যৌন রোগ, চক্ষু, অর্থোপেডিকস বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পদগুলো শূন্য থাকায় রোগী সাধারণ চিকিৎসা সেবা বঞ্চিত হচ্ছেন। ডেন্টাল সার্জনের পদও শূন্য। ১২ জন মেডিকেল অফিসার/সহকারী সার্জনের স্থলে ৪ জন অফিসিয়ালি কর্মরত থাকলেও ১ জন দীর্ঘদিন ধরে অননুমোদিত অনুপস্থিত রয়েছে। হাসপাতালে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক না থাকায় সাধারণ ডাক্তার ও এসএসএমওগণ কোনোমতে রোগীদের সেবা দেয়ার কাজ চালাচ্ছেন।

এদিকে, প্রধান সহকারীসহ ৩০টি পদের বিপরীতে কর্মরত রয়েছেন মাত্র ৩ জন। এতে হাসপাতালের চিকিৎসা সেবাসহ দৈনন্দিন কাজও ব্যাহত হচ্ছে।

সূত্র জানায়, ৩ জন অফিস সহকারী কাম কম্পিউটার অপারেটর, ক্যাশিয়ার, ভান্ডার রক্ষক, ৩ জনের মধ্যে ২ জন ল্যাবরেটরী এটেনডেন্ট, ৩ জন ফার্মাসিস্ট, কম্পাউন্ডার, কার্ডিওগ্রাফার, ইমার্জেন্সী এটেনডেন্ট, বাবুর্চি, মশালচি, ৩ জন ওয়ার্ডবয়, ২ জনের মধ্যে ১ জন আয়া, মালি, ২ জন নিরাপত্তা কর্মীর ১ জন ও ৫ জন পরিচ্ছন্নতা কর্মীর পদ শূন্য রয়েছে।

অন্যদিকে, লাকসামে ৩টি উপ-স্বাস্থ্যকেন্দ্রের প্রতিটিতে একজন চিকিৎসা কর্মকর্তা এবং একজন সহকারী চিকিৎসা কর্মকর্তা, ১ জন ফার্মাসিস্ট ও ১ জন এমএলএসস -এর পদ রয়েছে। কিন্তু চিকিৎসা কর্মকর্তাসহ জনবল সংকটে সেগুলোতে কাংখিত স্বাস্থ্য সেবা দেওয়া যাচ্ছে না। তাছাড়া, এ হাসপাতালে পার্শ্ববর্তী মনোহরগঞ্জ এবং কুমিল্লা সদর দক্ষিণ ও লালমাই উপজেলাবাসীর একাংশসহ লাকসাম রেলওয়ে জংশন দিয়ে যাতায়াতকারী চাঁদপুর, চট্টগ্রাম, ঢাকা রুটের বিভিন্ন ট্রেন এবং কুমিল্লা-নোয়াখালী, কুমিল্লা-চাঁদপুর আঞ্চলিক মহাসড়কে দুর্ঘটনাকবলিত যাত্রীদের চিকিৎসার চাপও সামলাতে হয়।

কুমিল্লা জেলা সিভিল সার্জন ডাঃ মোঃ মুজিবুর রহমান এ বিষয়ে বলেন, জেলার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সগুলোতে চিকিৎসকসহ জনবল সংকট রয়েছে। সংশ্লিষ্ট ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে বিষয়টি লিখিতভাবে অবহিত করা হয়েছে। আগামী দুই মাসের মধ্যে চিকিৎসক সংকট কাটবে। কিন্তু পুরো জেলায় তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীর প্রায় ১ হাজার পদ খালি রয়েছে। এ পদগুলো পূরণে একটু সময় লাগবে। নিয়োগ প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে।

আরও পড়ুন: রায়পুরে খেলতে গিয়ে পানিতে পড়ে প্রাণ গেলো দুই শিশুর

এ বিষয়ে লাকসাম উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাঃ মোহাম্মদ আলী বলেন, ‘চিকিৎসকসহ জনবল এবং অন্যান্য সমস্যা থাকলেও আমরা রোগীদের সেবা দেওয়ার জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করে যাচ্ছি। চিকিসৎসক ও জনবলসহ নানা সমস্যার কথা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হয়েছে। আশা করি সহসা এসব পদে নিয়োগ দেওয়া হবে। শূন্য পদগুলো পূরণ হলে আমরা সঠিকভাবে রোগী সাধারণকে উন্নত সেবা দিতে সক্ষম হবো।’

সূত্রঃ ইত্তেফাক

আরো পড়ুন