কুমিল্লায় মহাসড়কজুড়ে চলছে ফিটনেস ও লাইসেন্সবিহীন শত শত গাড়ি!
![](https://dailycomillanews.com/wp-content/plugins/print-bangla-news/assest/img/print-news.png)
মারুফ আহমেদঃ কুমিল্লায় সরকারী নির্দেশনা উপেক্ষা করে দেশের জাতীয় প্রধান মহাসড়কজুড়ে অবাধে চলছে ফিটনেসবিহীন শত শত যানবাহন। আর এসব অধিকাংশ যানবাহনের চালকের আসনে রয়েছে লাইসেন্সবিহীন বা অদক্ষ চালক।
এঅবস্থায় দুর্ঘটনার ঝুঁকিতে প্রতিদিন যাতায়াত করছে হাজার হাজার মানুষ। এদিকে জনগুরুত্বসম্পন্ন বিষয়টি দিনের পর দিন চলে আসলেও অজ্ঞাত কারণে সংশ্লিষ্ট প্রশাসন নিরব রয়েছে।
দেশের জাতীয় প্রধান ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের কুমিল্লা অংশজুড়ে আছে প্রায় এক’শত কিলোমিটার অংশ। এই মহাসড়ক পথে প্রতিদিন পারাপার হচ্ছে কমপক্ষে ২৬ হাজারেরও বেশী যানবাহন। যার মাঝে রয়েছে দ্রুতগতির ট্রাক,কাভার্ডভ্যান ,লং ভেহিক্যাল, বাস , প্রাইভেটকার , মাইক্রোবাস। চট্টগ্রাম সমুদ্র বন্দর দিয়ে দেশের আমদানী রপ্তানীর সিংহভাগ হওয়ার পাশাপাশি প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের লীলাভূমি রাঙ্গামাটি , বান্দরবান , খাগড়াছড়ি , রামগড় , টেকনাফ,সেন্টমার্টিন ছাড়াও পর্যটন নগরী কক্সবাজারের সৌন্দর্য অবলোকনেও প্রতিদিন দেশ বিদেশের হাজার হাজার মানুষ এই রুটে চলাচল করছে। দ্রুতগতির এই মহাসড়কের বিষফোড়া যেন কুমিল্লার ফিটনেসবিহীন মারুতি,মাইক্রোবাস কখনোবা তিন চাকার রিক্সা,সিএনজি অটোরিক্সা বা ইজিবাইক। আর এর সবগুলোর চালকই লাইসেন্সবিহীন বা অদক্ষ।
সরকার সারাদেশে মহাসড়কজুড়ে ফিটনেসবিহীন ও থ্রিহুইলার যান চলাচল নিষিদ্ধ করলেও অজ্ঞাত কারণে কুমিল্লায় সেটা মানা হচ্ছেনা। ফলে প্রতিদিন জেলার মহাসড়কের শত কিলোমিটার অংশজুড়ে দ্রুতগতির যানবাহনের সাথে পাল্লা দিচ্ছে ফিটনেসবিহীন শত শত মারুতি,লক্করঝক্কর মার্কা মাইক্রোবাস। সরেজমিন মহাসড়কের কুমিল্লা অংশের দাউদকান্দি ,গৌরীপুর , রায়পুর , ইলিয়টগঞ্জ , চান্দিনার মাধাইয়া , চান্দিনা সদর , বুড়িচংয়ের কাবিলা ,কোরপাই,নিমসার, সদর দক্ষিনের কোটবাড়ি নন্দনপুর, পদুয়ারবাজার, সুয়াগাজী , চৌদ্দগ্রামের মিয়াবাজার ও চৌদ্দগ্রাম সদর ঘুরে দেখা যায় মহাসড়কের উল্লেখিতস্থান জুড়ে রয়েছে এসব ফিটসেনবিহীন যানবাহনের অবৈধ ষ্ট্যান্ড। অলিখিত অবৈধ এই ষ্ট্যান্ডগুলোতে সকাল থেকে রাত পর্যন্ত ফিটনেসবিহীন যানবাহন রেখে যাত্রী পরিবহন করছে প্রতিদিন। এতে করে দ্রুত গতির যানবাহনগুলো প্রায়ই উল্লেখিত স্থানগুলোতে এসে দুর্ঘটনা এড়াতে গাড়ির গতি কমাতে বাধ্য হচ্ছে।
মহাসড়কে চলাচলরত একাধিক বিলাসবহুল যাত্রীবাহী বাসের চালকরা জানান, কুমিল্লার ময়নামতি সেনানিবাস , কোটবাড়ি নন্দনপুর , পদুয়ারাবাজার এলাকায় মহাসড়কের অর্ধেক অংশ জুড়ে ফিটনেসবিহীন ছোট আকারের মহাসড়কে অবৈধ মারুতী ও লক্করঝক্কর মার্কা মাইক্রোবাসের লাইসেন্সবিহীন ও অদক্ষ চালকরা রাস্তার উপর এমনভাবে যাত্রী উঠানামা করায় যে, এতে দুর্ঘটনা এড়াতে প্রায়ই গাড়ির গতি কমাতে বাধ্য হচ্ছে, আবার যানজটও সৃষ্টি হচ্ছে।
কুমিল্লা বাস মালিক পরিবহনের এক নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী , বিআ্রটিএ বা হাইওয়ে পুলিশ নির্দিষ্ট টোকেনের মাধ্যমে ফিটনেসবিহীন এসব যানবাহন চলাচলে বৈধতা দিচ্ছে। তিনি আরো বলেন, এসব যানবাহনের অধিকাংশ চালক লাইসেন্সবিহীন বা অদক্ষ।
দায়িত্বশীল জেলা প্রশাসনের একটি সুত্রও নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, মহাসড়কে চলাচলরত এসব মারুতী বা মাইক্রোবাস থেকে প্রতিটি ট্রিপে একটি সিন্ডিকেট ২০-৪০ টাকা পর্যন্ত নেওয়ায় একদিকে যেমন অতিরিক্ত ভাড়া গুনতে হচ্ছে সাধারন মানুষদের তেমনি অনেকটা গাদাগাদি করে ৫ জনের মারুতি গাড়িতে ৮ জন , ৬-৭ জনের ধারনক্ষম মাইক্রোবাসে ১৪-১৬ জন যাতায়াত করেন। যা একেবারেই অনৈতিক। বিষয়টি সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের গোচরে থাকলেও কোন ব্যবস্থা নিচ্ছেনা। এদিকে সাধারন যাত্রীরা প্রতিবাদ করলে উল্টো হয়রানী বা হামলার স্বীকার হতে হয়। কুমিল্লা ময়নামতি সেনানিবাস থেকে কুমিল্লা শহরে আসার ৬ কিলোমিটার সড়কের ভাড়া গুনতে হচ্ছে কমপক্ষে ১৫ টাকা। রাত বাড়ার সাথে সাথে ভাড়ার পরিমানও বাড়তে থাকে।
বিআরটিএ’র নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সুত্র জানায়, সরকার প্রতি কিলোমিটার গণপরিবহনের ভাড়া এক টাকা ৪২ পয়সা নির্ধারন করলেও এই রুটে দ্বিগুনের চেয়ে বেশী ভাড়া নিচ্ছে এইসব ফিটসেনবিহীন যানবাহন কর্তৃপক্ষ। মহাসড়কের কুমিল্লা অংশে এসব ফিটনেসবিহীন যানবাহন ছাড়াও অনেক স্কুলের কোমলমতি শিক্ষার্থীদেরও স্কুল কর্তৃপক্ষ যাতায়াতে ফিটনেসবিহীন লক্করঝক্কর মার্কা মাইক্রোবাস ব্যবহার করে। যার অধিকাংশের চালকদেরও নেই কোন বৈধ লাইসেন্স। এছাড়াও অনেক এম্ব্যূলেন্সও ফিটনেসবিহীন রোগী বহন করছে মৃত্যু ঝুঁকি নিয়ে।
বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ) কুমিল্লা’র সহকারী পরিচালক এম এ আশরাফ সিদ্দিকী বলেন, ফিটনেসবিহীন যান চলাচলে নিষেধসহ আমরা প্রায়ই ম্যাজিষ্ট্রেটসহ অভিযান পরিচালনা করে এসব যানবাহন আটক করি। এছাড়াও তিনি আরো বলেন,আমরা মহাসড়কের উপর থাকা যান আটকে জরিমানাসহ ক্ষেত্র বিশেষে ডাম্পিং জোনে পাঠিয়ে দেই।
ময়নামতি হাইওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ( ওসি ) মো. আলমগীর হোসেন বলেন, আমরা অভিযান পরিচালনা করে অবৈধ পরিবহন, ফিটনেস ও লাইসেন্সবিহীন গাড়ি আটক করে মামলা দিচ্ছি, সড়কে চলাচলের অযোগ্য হলে ডাম্পিংএ দিচ্ছি।
হাইওয়ে পূর্বা ল ( কুমিল্লা)’র পুলিশ সুপার নজরুল ইসলাম বলেন, মহাসড়কে ফিটনেস ও লাইসেন্সবিহীন অবৈধভাবে যেসকল পরিবহন চলছে, এগুলোর ব্যপারে আমাদের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে।