দেবীদ্বারে মুক্তিযোদ্ধাদের মানববন্ধন ও প্রধানমন্ত্রীকে স্মারকলিপি প্রদান
দেবীদ্বারের গেজেটভূক্ত ও ভাতাপ্রাপ্ত ১১৮৫ জন মুক্তিযোদ্ধার মধ্যে ৪৩০ মুক্তিযোদ্ধাকে ভূয়া আখ্যা দিয়ে, তাদের সনদ ও ভাতা বাতিলের আবেদন জানিয়ে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রনালয়ে অভিযোগ দায়ের করেছেন এক মুক্তিযোদ্ধা।
ওই ঘটনায় ক্ষুব্ধ স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধারা অভিযোগকারী বিএলএফ মুক্তিযোদ্ধা মোঃ আবদুল মমিন সরকার প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা কিনা তা যাচাই বাছাই সহ তার ধৃষ্ঠতাপূর্ণ কর্মকান্ডের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবীতে মানবন্ধন, প্রতিবাদ সভা ও প্রধানমন্ত্রীর বরাবররে স্মারকলিপি প্রদান করেছেন।
প্রধানমন্ত্রীর বরাবররে স্মারকলিপি গ্রহনকালে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রাকিব হাসান বলেন, যথাযথ প্রক্রিয়ায় জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে স্মারকলিপিটি প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে প্রেরনের ব্যবস্থা করব। গেজেটভূক্ত ও ভাতাপ্রাপ্ত ৪৩০ বীর মুক্তিযোদ্ধার যাচাই বাছাইয়ের জন্য মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রনালয়ের মাননীয় মন্ত্রী মহোদয় লিখিত নোট ছাড়াও সেল ফেনেও দ্রæত যাচাই বাছাইয়ের কাজ সম্পন্ন করতে আমাকে তাগাদা দিয়েছেন। বর্তমানে যেহেতু মুক্তিযোদ্ধা সংসদ নেই সেহেতু আমাকে পুনঃ যাচাই বাছাইয়ের কাজটি সরকারী কর্মকর্তাদের সমন্বয়ে সম্পন্ন করতে হবে।
সোমবার সকাল ১১টায় কয়েকশত মুক্তিযোদ্ধা উপজেলা পরিষদ চত্তরে জমায়েত হয়ে মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সভা শেষে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রীর বরাবরে ওই স্মারকলিপি প্রদান করেন।
মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রনালয়ের দপ্তরের সূত্রের আলোকে, স্মারক নং-০৫.০০.১৯৪০.০০০.৪৬.০০১. ১৯-২৪৩/ তারিখ- ২৮/০২/২০১৯ইং এর অভিযোগটি গত বৃহস্পতিবার বিএলএফ মুক্তিযোদ্ধা মোঃ আবদুল মমিন সরকার সরাসরি নিয়ে এসে দেবীদ্বার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার মাধ্যমে তদন্ত স্বাপেক্ষে যাচাই বাছাইয়ের জন্য জমা দেন। ওই সংবাদে স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধাদের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়।
মুক্তিযোদ্ধারা বলেন, ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কর্তৃক ঘোষিত ‘যার যা আছে তাই নিয়ে শত্রæর মোকাবিলা করো’, স্বাধীনতার ওই ডাকে সারা দিয়ে আমরা মহান মুক্তিযুদ্ধে জীবন বাজী রেখে যুদ্ধে নেমেছি। দির্ঘ ৯মাস শসস্ত্র মুক্তিযুদ্ধের মধ্যদিয়ে দেশমাতৃকাকে শত্রæ মুক্ত করে বীজয় ছিনিয়ে এনেছি। বিজয়ের ৪৯ বছর পর দেবীদ্বারের গেজেটভূক্ত ও ভাতাপ্রাপ্ত ১১৮৫ জন মুক্তিযোদ্ধার মধ্যে ৪৩০ বীর মুক্তিযোদ্ধাকে ভূয়া মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে আখ্যা দিয়ে তাদের সনদ ও ভাতা বাতিলের আবেদনে আমরা হতবাক হয়েছি। এতগুলো বীর মুক্তিযোদ্ধাকে সামাজিকভাবে হেয়প্রতিপন্ন ও মানহানী করায় আমরা গভীরভাবে মর্মাহত, দুঃখীত, ক্ষুব্ধ এবং এ নেক্কারজনক ঘটনার তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি এবং একই সাথে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষনে ধৃষ্টতাপূর্ণ কাজের অপরাধে মোঃ আবদুল মমিন সরকার’র দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবী সহ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহনের আবেদন জানাচ্ছি।
মুক্তিযোদ্ধারা আরো বলেন, যুদ্ধকালীন কমান্ডার কিংবা দেবীদ্বারের মুক্তিযোদ্ধা না হয়েও গত মুক্তিযোদ্ধা যাচাই বাছাই ২০১৭ইং দেবীদ্বার কমিটিতে মোঃ মমিন সরকারের অন্তর্ভূক্ত হওয়ার বিষয়টিও ছিল নিয়ম বহির্ভূত। চলতি বছরে আমাদের মুক্তিযুদ্ধের মহান নেতা বঙ্গবন্ধুর স্মরণে ‘মুজিব শতবর্ষ’ উদযাপন করতে যাচ্ছি। আর মাত্র এক বছর পর আমরা স্বাধীনতার ৫০বছর পূর্তী অনুষ্ঠান করব। সে অবস্থায় মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে বিতর্কিত, অনাকাঙ্খীত, অনুপ্রেত এ ঘটনায় আমরা ক্ষুব্ধ। ৭১’র মুক্তিযুদ্ধে দেবীদ্বার উপজেলা বাংলাদেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম মুক্তিযোদ্ধাদের এলাকা হিসেবে পরিচিত। অভিযোগকারী মোঃ আবদুল মমিন সরকার’র পৈত্রিক নিবাস দেবীদ্বার উপজেলার তুলাগাও গ্রামে হলেও মূলতঃ তিনি চান্দিনা উপজেলার কেরনখাল গ্রামে নানার বাড়িতে ছাত্র জীবন থেকেই বসবাস করে আসছেন। ১৯৭১ সালের মহান স্বাধীনতা সংগ্রামে চান্দিনা কর্মরত বিএলএফ হিসেবে মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন বলে তিনি দাবী করলেও তিনি প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা কিনা তা আমাদের কাছে এখনো পরিস্কার নয়। তা ছাড়া দেবীদ্বারের সাধারন, এফ,এফ/ এম,এফ/ ন্যাপ-কমিউনিস্ট পার্টি-ছাত্র ইউনিয়ন কর্তৃক গঠিত বিশেষ গেরিলা বাহিনী/ আর্মী গেজেটধারী ও অন্যান্য গেজেটধারী বীর মুক্তিযোদ্ধা সম্পর্কে মোঃ আবদুল মমিন সরকার জানার কথা নয়, তিনি যে অভিযোগটি মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রনালয়ে দাখিল করেছেন তা তার ব্যাক্তিগত আক্রোশের বহিঃপ্রকাশ। যা ভূয়া, ভিত্তিহীনই নয়, উদ্দেশ্যপ্রনোদীত।
মানববন্ধন চলাকালে বিক্ষোভ ও প্রতিবাদ সমাবেশে সাবেক উপজেলা কমান্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধা কাজী আব্দুস সামাদ’র সভাপতিত্বে এবং সাবেক উপজেলা ডেপুটি কমান্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধা মনিরুজ্জামান আউয়াল সরকার’র সঞ্চালনায় বক্তব্য রাখেন সাবেক উপজেলা ডেপুটি কমান্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধা ডাঃ মোঃ রফিকুল ইসলাম, বীর গেরিলা মুক্তিযোদ্ধা মুস্তাকুর রহমান ফুল মিয়া, বীর মুক্তিযোদ্ধা শাহাদাত হোসেন মাষ্টার, বীর মুক্তিযোদ্ধা আলী হোসেন, বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল আউয়াল, একাত্মতা ঘোষণা করে বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি কুমিল্লা জেলা সভাপতি কমরেড এবিএম আতিকুর রহমান বাশার, আ’লীগ উপজেলা কমিটির সদস্য মুক্তিযোদ্ধার সন্তান লুৎফর রহমান বাবুল প্রমূখ।