কুমিল্লায় নিম্নমানের ক্লিনিকে সয়লাব !
কুমিল্লার সিটি করপোরেশন ও সবগুলো উপজেলা মিলিয়ে বেসরকারি হাসপাতাল, ক্লিনিক, হেলথ ল্যাব ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার আছে মোট ৪৫৪টি। এর মধ্যে চলতি বছর ৪০৪টি স্বাস্থ্য প্রতিষ্ঠান নতুন লাইসেন্স পেতে ও পুরোনো লাইসেন্স নবায়নের জন্য আবেদন করেছে কুমিল্লা জেলা সিভিল সার্জন অফিসে। উপজেলা পর্যায়ের ৫০টি প্রতিষ্ঠান কোনো আবেদনই করেনি। সিভিল সার্জন অফিস থেকে ৪০৪টি আবেদনই সিদ্ধান্তের জন্য পাঠানো হয়েছিল স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে। মন্ত্রণালয় মাত্র ১৭৯টি প্রতিষ্ঠানের ব্যাপারে অনুমোদন দিয়ে বাকি ২২৫টি আবেদন নাকচ করে দিয়েছে। অর্থাৎ জেলার মোট ৪৫৪টি বেসরকারি স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠানের মধ্যে লাইসেন্স নাকচ হওয়া ২২৫টি ও আবেদন না করা ৫০টি, মোট ২৭৫টিই মানসম্মত নয়, তা বলাই বাহুল্য। অথচ এই নিম্নমানের হাসপাতাল, ক্লিনিক, ডায়গনস্টিক সেন্টারগুলো বহাল তবিয়তে রয়েছে কুমিল্লায়। স্বাস্থ্যসেবার নামে সেগুলো চালিয়ে যাচ্ছে রমরমা ব্যবসা।
কুমিল্লার স্বাস্থ্যসংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ মানোন্নয়ন ও লাইসেন্সের জন্য তাগাদা দিয়ে এলেও প্রতিষ্ঠানগুলোর মালিকরা তা পরোয়া করছেন না। উল্টো বাধাহীনভাবে চালিয়ে যাচ্ছেন তাদের অবৈধ ব্যবসা। মন্ত্রণালয় থেকে ১৭৯টি আবেদনের অনুমোদন পাওয়াও পর মাত্র ৩৪টির লাইসেন্স দিয়েছে জেলঅ সিভিল সার্জন অফিস। বাকিগুলোর লাইসেন্স প্রদান প্রক্রিয়াধীন রয়েছে বলে জানা গেছে। তবে উপজেলা পর্যায়ের যে ৫০টি প্রতিষ্ঠান লাইসেন্সের জন্য আবেদন করেনি, সেগুলোর বিষয়ে সিদ্ধান্ত প্রদানের জন্য সিভিল সার্জন অফিস স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে লিখিত পাঠিয়েছে। ওইসব লাইসেন্সবিহীন প্রতিষ্ঠান ও মালিকদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য ইতোমধ্যে কুমিল্লা জেলা প্রশাসক, পুলিশ বিভাগ এবং গোয়োন্দা বিভাগসহ প্রশাসনকে চিঠি দেওয়া হয়েছে।
অনুসন্ধানে দেখা গেছে, কুমিল্লার জেলা, উপজেলা ও হাট-বাজারসহ সর্বত্রই ব্যাঙের ছাতার মতো গজিয়ে ওঠা স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠানে রোগীদেও সেবাপ্রাপ্তির চেয়ে হয়রানি পোহাতে হয় বেশি। হাসপাতালের নগরী নামে পরিচিত কুমিল্লা শহরের অনেক নামি-দামি হাসপাতাল-ক্লিনিকেরও বৈধ লাইসেন্স ও অন্যান্য কাগজপত্র নেই। সেখানে গ্রামগঞ্জে গড়ে ওঠা প্রতিষ্ঠানগুলোর অবস্থা যে কী সেটা সহজেই অনুমান করা যায়।
শুধু লাইসেন্স বা বৈধ কাগজপত্র নয়, অনেক ক্লিনিক-ডায়াগনস্টিকে নেই ন্যূনতম ডাক্তার, নার্স ও টেকনিশিয়ান। চিকিৎসা না দিয়ে যেনতেন ভাবে মানুষের পকেট কেটে ব্যবসা করাই যেন তাদের মুখ্য উদ্দেশ্য। কুমিল্লার প্রশাসনকে সেইদিকে নজর দেওয়ার জন্য পরামর্শ দিচ্ছেন ভুক্তভোগীরা।
এদিকে ২০১৭ ও ২০১৮ সাল জুড়ে অবৈধ, লাইসেন্সবিহীন ও মেয়াদোত্তীর্ণ কাগজপত্র দিয়ে স্বাস্থ্যসেবার নামে ব্যবসা করার অপরাধে কুমিল্লা মহানগর ও উপজেলা পর্যায়ের বেসরকারি হাসপাতাল, ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারগুলোতে যে হারে অভিযান হয়েছে, ২০১৯-২০২০ সালে এসে তার চুল পরিমাণও হয়নি। বেসরকারী স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠানের অনিয়ম ও অপরাধের বিরুদ্ধে অভিযান চালিয়ে ব্যবস্থা নেওয়ার খবরও কারো চোখে পড়েনি কারো।
সিভিল সার্জন অফিস থেকে একাধিকবার বেসরকারি হাসপাতাল, ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারের মালিকদের লাইসেন্সের বিষয়ে বলার পরও আগ্রহ না দেখানোর ব্যাপাওে জানতে চাইলে জেলা সিভিল সার্জন ডা. মো. নিয়াতুজ্জামান বলেন, কুমিল্লার উপজেলা পর্যায়ের ৫০টির মত ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারের লাইসেন্স নেই। আর অন্যান্য ক্লিনিকসমূহের লাইসেন্স নবায়নের ব্যবস্থা করা হয়েছে। যে ৫০টি ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারের লাইসেন্স ইেন, সেগুলোর বিষয়ে সিদ্ধান্ত প্রদানের জন্য স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে চিঠি পাঠানো হয়েছে। ওই সব লাইসেন্সবিহীন ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
তিনি আরো বলেন, লাইসেন্স প্রদান ও নবায়নের আবেদন পেয়ে আমরা ৪০৪টি বেসরকারি হাসপাতাল, ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারের আবেদন মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছি। এরমধ্যে ১৭৯টি আবেদনের অনুমোদন পাওয়ার পর ৩৪টির লাইসেন্স প্রদান করা হয়েছে। বাকিগুলোর লাইসেন্স প্রদানের প্রক্রিয়া ডিসেম্বরের মধ্যেই সম্পন্ন করা হবে। এ কার্যক্রম শেষ হলেই অবৈধগুলোর নবিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে। সেইসাথে আইনের আওতায় আনা হবে প্রতিষ্ঠানের মালিক পক্ষকেও।