কুমিল্লায় সবাই যখন পরীক্ষার হলে, তামান্না তখন মর্গে
কুমিল্লার চান্দিনা উপজেলার দোল্লাই নবাবপুর সরকারি কলেজের শিক্ষার্থী তামান্না আক্তার লিজা। সদ্য শুরু হওয়া এইচএসসি পরীক্ষার পরীক্ষার্থী ছিলেন তিনি। পরীক্ষার রুটিন অনুযায়ী বৃহস্পতিবার (০২ ডিসেম্বর) ছিল তার প্রথম পরীক্ষা। এদিন সকাল ১০টায় শুরু হওয়া পদার্থ বিজ্ঞান পরীক্ষায় অংশ নেওয়ার কথা ছিল তার। কিন্তু বিধিবাম! বৃহস্পতিবার সকালে পরীক্ষা কেন্দ্রে যাওয়া হয়নি তার। এইচএসসি পরীক্ষার প্রথম দিনে তার ঠিকানা হয়েছে চান্দিনা থানার লাশ ঘরে।
কলেজে অধ্যয়নরত অবস্থায় ভালবেসে বিয়ে করেন মাহবুব আলম নামের এক ছেলেকে। সেই স্বামীর বসত ঘরে ফ্যানের সঙ্গে ঝুলে থাকা তামান্না আক্তারের মরদেহ উদ্ধার করে থানায় নিয়ে আসে পুলিশ। এক সন্তানের জননী তামান্নার মৃত্যু নিয়ে রহস্য দেখা দিয়েছে। স্বামীর পরিবারের আত্মহত্যা দাবি করলেও তামান্নার পরিবার বলছে এটি হত্যাকাণ্ড। ঘটনাটি ঘটেছে কুমিল্লার চান্দিনা উপজেলার নবাবপুর ইউনিয়নের বিচুন্দাইর গ্রামে। নিহত তামান্না আক্তার লিজা একই উপজেলার গল্লাই ইউনিয়নের সোনাকান্দা গ্রামের প্রবাসী আবুল কালাম আজাদের মেয়ে।
নিহতের মা মাহিনূর আক্তার বলেন, তামান্নার স্বামীর পরিবার যৌতুকের জন্য আমার মেয়েকে বিভিন্ন ভাবে চাপ প্রয়োগ করতো। বুধবার রাতেও মেয়ে ফোন করে আমাকে জানায়, ‘মা আগামীকাল (বৃহস্পতিবার) আমার পরীক্ষা দোয়া করবেন। তারা (স্বামীর পরিবার) আমাকে টাকা আনতে বলছেন।’ এই বলে আমার মেয়ে কান্না করতে থাকে।
পরদিন সকালে তারা আমার মেয়েকে হত্যা করে মরদেহ ফ্যানের সাথে ঝুলিয়ে রেখে আত্মহত্যা বলে চালিয়ে দেওয়ার অপচেষ্টা করা হচ্ছে বলে দাবি তার। নিহতের স্বামী মাহবুব আলমের ব্যক্তিগত মোবাইল ফোনে একাধিকবার ফোন করলেও তার ব্যবহারৃত নম্বরটি বন্ধ পাওয়া যায়। তবে মাহবুব আলমের বাবা জাকারিয়া বলেন, সকালে আমরা কেউ বাড়িতে ছিলাম না। আমার স্ত্রী (মাহবুব এর মা) বাড়ি এসে দেখে তামান্না ঘরের দরজা বন্ধ করে ফাঁসিতে ঝুলে আছে।
চান্দিনা থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) গিয়াস উদ্দিন জানান, খবর পেয়ে আমরা দুপুর সাড়ে ১২টায় বিচুন্দাইর গ্রামের মাহবুব আলমের বসত ঘর থেকে ঝুলন্ত অবস্থায় মরদেহ উদ্ধার করেছি। নিহতের স্বামীর পরিবারসহ আশপাশের লোকজন বলছেন ঘরের দরজা ভেতর থেকে বন্ধ করে আত্মহত্যা করেছে তামান্না। প্রাথমিক তদন্তেও আত্মহত্যার আলামত পাওয়া গেছে।
থানার ওসি মোহাম্মদ আরিফুর রহমান জানান, মরদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য কুমিল্লা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। ময়নাতদন্তের রিপোর্ট আসার বিস্তারিত বলা যাবে।