কুমিল্লায় মেয়েদের মেস জীবন এ যে কঠিন বাস্তবতা!
বিল্লাল হোসেন রাজুঃ প্রথমে অনেক কষ্ট হচ্ছিল মাকে ছেড়ে আসতে । কিন্তু কিছুই করার নেই। এ যে কঠিণ বাস্তবতা। এখন মাঝে মাঝে চিল্লিয়ে বলতে ইচ্ছে করে ‘মা’ একটুও খেতে ইচ্ছে করছে না। তুমি আমায় লোকমা দিয়ে খাইয়ে দাও। পড়তে ইচ্ছে করছেনা। জানো মা ! এখানে বকুনি দেওয়ার মত কেউ নেই। তুমি আমায় বকুনি দাও। মা একটু ইচ্ছে মত শাসন করে দাওনা আমায়। গত বছর কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজে বিবিএ ভর্তি হয় ইমা।
ইমার মতো মেসে থাকা কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় ও কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া সরকারি কলেজসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে অধ্যয়নরত কয়েকজন শিক্ষার্থীর ভাষ্যমতে, শহুরে জীবনের সাথে মানিয়ে নিতে কিংবা নিজের পড়া-লেখাকে টিকিয়ে রাখতে তারা বিভিন্ন ধরণের কাজ করছে। এর মধ্যে রয়েছে বিভিন্ন পণ্যেও মার্কেটিং, ইপিজেডে চাকরি, বিভিন্ন পণ্যের হোম সার্ভিস দেওয়া এবং হাসপাতাল ও বিভিন্ন অফিসের অভ্যর্থনা বিভাগে চাকুরি। তাছাড়াও তারা বিভিন্ন এমএলএম কোম্পানীতে চাকরি করাসহ বিভিন্ন প্রাইভেট প্রতিষ্ঠানে ফুলটাইম কিংবা পার্টটাইম চাকরি করেন। আর এসব কাজ করতে গিয়ে নানা বিড়ম্বনায় পড়তে হয় তাদের।
মেসে থাকা নিয়ে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের শিক্ষার্থী রুমি, কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজ অর্থনীতি বিভাগের শিক্ষার্থী মনিরা মনি নিশাত, গণিতের শিক্ষার্থী লায়লা নুর ও ইংরেজি বিভাগের শিক্ষার্থী আমেনা আক্তার জানায়, তাদের মেস জীবনে রয়েছে নানা সমস্যা। এদের মধ্যে পুষ্টিকর খাবারের অভাব, প্রায়শই ব্যক্তিগত জিনিস চুরি হওয়া, পরীক্ষার সময় রুমে আড্ডায় মেতে উঠা, বিশুদ্ধ পানির সমস্যা, পরিবারের কাউকে আনতে না পারা, নির্দিষ্ট সময় বাসায় আসার বাধ্যবাধকতা, বুয়ার সমস্যা ও রাস্তায় ইপটিজিং এর শিকার অন্যতম।
অন্যদিকে একাধিক শিক্ষার্থীর ভাষ্যমতে, মেসে থাকা ৫০-৬০ শতাংশ ছাত্রী টিউশনির উপর নির্ভরশীল। বিভিন্ন কাজে নির্ভরশীল ২০-৩০ শতাংশ। বাকী ৫-১০ শতাংশ ছাত্রী পরিবারের কাছ থেকে পুরোপরি অর্থ সহায়তা পেয়ে থাকে। বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, এদের মধ্যে বিভিন্ন চাকুরী ক্ষেত্রে যৌন হয়রানির শিকার হয় ৩৫-৪০ শতাংশ। টিউশনিতে প্রতারণার শিকার ২৫-৩০ শতাংশ এবং ১৫-২০ শতাংশ ছাত্রী কোন না কোন ভাবে হয়রানির শিকার হয়ে থাকে ।
মেয়েরা কোমল প্রকৃতির। বাবা মায়ের ছায়াতলে থাকা তাদের পছন্দ। কিন্তু উচ্চ শিক্ষা গ্রহণের জন্য অনেকেই ভর্তি হতে হয় দেশের বিভিন্ন বিদ্যাপীঠে। আবাসনের জন্য কলেজের ছাত্রীনিবাসে পর্যাপ্ত আসন না থাকায় অনেকেরই ঠাঁই হয় শহরের বিভিন্ন মেসে । আবার কখনো কখনো শিক্ষার জন্য ছুটে আশা এসব শিক্ষার্থীদের পড়তে হয় নানা ঝক্কি-ঝামেলায়। এর মধ্যে রয়েছে, নতুনরা বড়দের সাথে মানিয়ে ওঠতে না পারা, সিনিয়র সদস্যদের অতিরিক্ত প্রভাব এবং ছোটদের উপর কর্তৃত্ব খাঁটানো। এক্ষেত্রে গ্রাম থেকে আশা শিক্ষার্থীরা প্রচুর চাপের মুখে পড়ে। যা রীতিমত অস্বস্থিকর মনে করছেন ভিক্টোরিয়া কলেজ অর্থনীতি বিভাগের শিক্ষার্থী মনিরা মনি নিশাত।
অন্যদিকে বেশির ভাগ শিক্ষার্থী মধ্যবিত্ত ও নিম্নবিত্ত পরিবার থেকে আসা। যার ফলে খাবারের টাকা ও মেস ভাড়া যথাসময়ে পরিশোধ না করতে পেরে অনেকেই র্পাটটাইম কাজ ও টিউশনি করে নিজেরদের খরচ চালায়। এতে তাদের পড়া লেখায় নেতিবাচক প্রভাব পড়ে। যা অনেকে মানিয়ে নিতে পারে না।