কুমিল্লা সিটি নির্বাচন: বিএনপির দুই গ্রুপই ‘স্বতন্ত্র’
কুমিল্লা সিটি করপোরেশন (কুসিক) নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর থেকে নগরজুড়ে এখন সর্বত্র একই আলোচনা, কে হতে যাচ্ছেন কুসিকের তৃতীয় মেয়র।
এরই মধ্যে আওয়ামী লীগ থেকে দলীয় মনোনয়ন পেতে সম্ভাব্য হাফ ডজন প্রার্থী নানা কৌশলে নগরীতে প্রচারণা চালাচ্ছেন। ইতোমধ্যে মহানগর আওয়ামী লীগ বর্ধিত সভা করে একক প্রার্থী হিসেবে মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আরফানুল হক রিফাতের নাম কেন্দ্রে পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। আওয়ামী লীগের মনোনয়ন এখন নির্ভর করছে নেত্রীর সিদ্ধান্তের ওপর। দলের সবার দৃষ্টি এখন নেত্রীর দিকে।
এদিকে এ নির্বাচনে বিএনপি দলীয় ব্যানারে অংশ নেবে না এটা অনেকটা নিশ্চিত হলেও বিএনপি সমর্থিত বর্তমান মেয়র মো. মনিরুল হক সাক্কু স্বতন্ত্র ব্যানারে নির্বাচনে অংশ নেবেন বলে জানিয়েছেন।
এছাড়া বিএনপি থেকে আরও একাধিক প্রার্থী নির্বাচনে অংশ নেবেন বলে বিভিন্নভাবে প্রচারণায় রয়েছেন। ইতোমধ্যে হাজী ইয়াসিন অনুসারী মহানগর স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি নিজাম উদ্দিন কায়সার স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে অংশ নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন।
এদিকে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) নিয়ে বিএনপি শুরু থেকেই আপত্তি জানিয়ে এলেও কুসিকের বিএনপি সমর্থিত বর্তমান মেয়র মো. মনিরুল হক সাক্কু বলেন ‘ইভিএম পদ্ধতি তো ভালো, এতে কেন্দ্র দখল করে সিল মারা সম্ভব নয়। ব্যালটে ভোট হলে ব্যালট ছিনতাইয়েরও ভয় থাকে।’
২০১২ সালের ৫ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত প্রথম নির্বাচনে বিএনপি থেকে পদত্যাগ করে নাগরিক কমিটির ব্যানারে নৌকার প্রার্থী অধ্যক্ষ আফজাল খানকে হারিয়ে প্রথম মেয়র নির্বাচিত হন কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা বিএনপির যুগ্ম সম্পাদক মো. মনিরুল হক সাক্কু। পরে ২০১৭ সালের ৩০ মার্চ বিএনপির মনোনয়নে সাক্কু নৌকার প্রার্থী আঞ্জুম সুলতানা সীমাকে হারিয়ে দ্বিতীয় বারের ন্যায় কুসিকের মেয়র নির্বাচিত হন। আগে কুসিকের দুটি নির্বাচনে আওয়ামী লীগে কোন্দলের সুযোগে বিএনপির প্রার্থী মনিরুল হক সাক্কু অনেকটা ফুরফুরে ভাব নিয়ে মেয়র নির্বাচিত হন। এবার দল থেকেই প্রতিপক্ষ গ্রুপের প্রার্থী হওয়াতে রাজনৈতিক মেরুকরণের পাশাপাশি ভোটের সমীকরণও পাল্টে যেতে পারে।
বর্তমান সরকারের অধীনে বিএনপি স্থানীয় সরকারের কোনো নির্বাচনে অংশ নেবে না এটা দলের সিদ্ধান্ত থাকলেও কুমিল্লা সিটি নির্বাচনে দলের সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়েই মেয়র পদে একাধিক প্রার্থী অংশ নেওয়ার ইঙ্গিত দিয়েছেন। কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা বিএনপিতে মেয়র সাক্কু ও দলের সাধারণ সম্পাদক হাজী ইয়াসিন গ্রুপ থেকে আলাদা স্বতন্ত্র পদে প্রার্থী দেওয়া হবে বলে দলের একাধিক সূত্রে জানা গেছে।
এ বিষয়ে কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা বিএনপির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও বর্তমান মেয়র মনিরুল হক সাক্কু বলেন, ‘গত দুই মেয়াদে আমি সফলভাবে কুমিল্লা সিটি করপোরেশনের কার্যক্রম পরিচালনা করেছি। এ সময়ে নগরীর প্রায় সাড়ে ৭০০ কোটি টাকার উন্নয়ন করেছি, নির্বাচনে আমাদের দল (বিএনপি) অংশগ্রহণ না করলেও আমার অনুসারী নেতা, কর্মী ও সমর্থকদের অনুরোধে স্বতন্ত্র পদে নির্বাচন করবো। তবে ঈদের পর এ বিষয়ে আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দিয়ে কাজ শুরু করব।’
তিনি আরও বলেন, ‘ইভিএম নিয়ে আমার কোনো ভয় কিংবা আপত্তি নেই। আমি মনে করি সঠিক সিস্টেমে ইভিএম পরিচালনা হলে এর মাধ্যমে কেন্দ্র দখল করে কেউ পছন্দের প্রার্থীর ব্যালটে সমর্থন জানানোর সুযোগ নেই। ব্যালটে ভোট হলে ব্যালট ছিনতাই হওয়ার ভয় থাকে।’
হাজী ইয়াসিন অনুসারী মহানগর স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি নিজাম উদ্দিন কায়সার বলেন, ‘বিএনপি যৌক্তিক কারণে বর্তমান সরকারের অধীনে কোনো নির্বাচনে যাবে না। কিন্তু কুসিক নির্বাচনে তৃণমূলের নেতাকর্মীরা আমাকে নির্বাচনে প্রার্থী হতে বলছেন। কারণ বিগত দিনে বিএনপির মনোনয়ন ও শহীদ জিয়া আদর্শের নামে মেয়র হয়ে বিএনপির শীর্ষ নেতৃত্ব নিয়ে কটূক্তি ও আওয়ামী লীগের সঙ্গে মিশে বিএনপির নেতাকর্মীদের নির্যাতনসহ দলবিরোধী কর্মকাণ্ড করেছেন। আমি শহীদ জিয়ার আদর্শকে লালন করে ২৫ বছর কুমিল্লায় রাজনীতি করেছি। কুসিক নির্বাচনে দলের তৃণমূলের নেতাকর্মীদের অনুরোধে নির্বাচনে স্বতন্ত্র পদে অংশ নেব।’
হাজী ইয়াসিন অনুসারী জেলা বিএনপি সদস্য শিল্পপতি কাউসার জামান বাপ্পি বলেন, আমি দল করি, তাই দলের সিদ্ধান্তের বাইরে যাবো না। দল নির্বাচনে অংশগ্রহণের সিদ্ধান্ত জানালে মনোনয়ন চাইব।
জেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক মোস্তাক মিয়া বলেন, ‘এ সরকারের অধীনে বিএনপি কোনো স্থানীয় সরকার নির্বাচনে অংশ নেবে না- এটা দলীয় সিদ্ধান্ত। তবে কেউ দলের বাইরে গিয়ে ব্যক্তিগত পর্যায়ে হয়তো নির্বাচন করবে, এটা দলীয় প্রতীকে নয়, হয়তো স্বতন্ত্র প্রতীকে হতে পারে।’
সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) কুমিল্লা শাখার সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক আলী আহসান টিটু বলেন, একটি সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমে এমন একজন মেয়র নির্বাচিত হবেন যিনি নগরীর সমস্যা নিয়ে কাজ করবেন। মনোনয়ন দেওয়ার বিষয়ে প্রধান রাজনৈতিক দলগুলোকে সৎ, যোগ্য ও জনগণের জন্য নিবেদিত হয়ে কাজ করবে এমন প্রার্থীকে মনোনয়ন দেওয়া উচিত।