কুমিল্লা সিটিতে সাক্কুর দুই মেয়াদের ৭৭৭ কর্মীর বেতন স্থগিত
কুমিল্লা সিটি করপোরেশনে সাবেক মেয়র মনিরুল হক সাক্কুর সময়ে দৈনিক হাজিরার ভিত্তিতে অস্থায়ী নিয়োগ পাওয়া ৭৭৭ কর্মীর বেতন স্থগিত করা হয়েছে। এগুলো যাচাই-বাছাই করে প্রয়োজনের অতিরিক্ত কর্মী ছাঁটাই করা হবে বলে জানিয়েছেন নতুন মেয়র আরফানুল হক রিফাত।
তিনি জানিয়েছেন, কুসিকে বর্তমানে স্থায়ী কর্মকর্তা ও কর্মচারী রয়েছেন ৮৩ জন। সেখানে ৭৭৭ জন অস্থায়ী কর্মচারী প্রয়োজনীয়তা যাচাই-বাছাই করে দেখা গেছে। প্রয়োজনের বেশি সংখ্যক লোক থাকলে তারা বাদ পড়বেন।
২০১১ সালের ১০ জুলাই কুসিক প্রতিষ্ঠা লাভ করার পর ২০১২ সালের ৫ জানুয়ারি এবং ২০১৭ সালের ৩০ মার্চ পরপর দুই নির্বাচনে মেয়রের আসনে বসেন বিএনপি থেকে সম্প্রতি বহিষ্কৃত নেতা মনিরুল হক সাক্কু।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, দৈনিক হাজিরাভিত্তিক ওই ৭৭৭ জন কর্মচারী অস্থায়ী নিয়োগ পেয়েছেন মনিরুল হক সাক্কুর দুই মেয়াদে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে কুসিকের কয়েকজন হাজিরাভিত্তিক অস্থায়ী নিয়োগ পাওয়া কর্মচারী বলেন, আগের মেয়র ছিলেন বিএনপির। তিনি কর্মী নিয়োগে বিএনপির সমর্থক বা তার নিজের লোকদের বেশি প্রাধান্য দিয়েছেন। বর্তমান মেয়র আওয়ামী লীগের, এজন্য তিনি আগের মেয়রের বিপরীত কাজ করবেন বলে সবার মধ্যে ধারণা তৈরি হয়েছে। তাই কর্মীদের মধ্যে ছাঁটাই আতঙ্ক বিরাজ করছে।
অরেকজন বলেন, অনেকে গত ৮-১০ বছর ধরে দৈনিক হাজিরাভিত্তিক অস্থায়ী নিয়োগে কাজ করেছেন এক সময় স্থায়ী হওয়ার আশায়। এখন সেই সম্ভাবনাও কমে গেছে এই ৭৭৭ জনের ক্ষেত্রে। কাজ হারালে অনেকে পরিবার নিয়ে বিপদে পড়বেন।
কুসিকের তৃতীয় নির্বাচনে বিজয়ী হয়ে ৭ জুলাই নতুন মেয়রের দায়িত্ব নিয়েছেন কুমিল্লা মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আরফানুল হক রিফাত।
নির্বাচনের শুরু থেকেই রিফাতের অভিযোগ ছিল, সাক্কু কুসিককে দুর্নীতি ও অনিয়মের আখড়া বানিয়েছেন। এরই মধ্যে রিফাত কুসিকের সব বিষয়ে নজর দিতে শুরু করেছেন বলে জানা গেছে। এরই ধারাবাহিকতায় সাক্কুর আমলে অস্থায়ী নিয়োগ পাওয়া ওই ৭৭৭ জন কর্মীর জুলাই মাসের বেতন স্থগিত করা হয়েছে।
সূত্র জানায়, কুসিকে বর্তমানে ৮৩ জন স্থায়ী কর্মকর্তা ও কর্মচারী রয়েছেন। তাদের প্রতি মাসে ৪৪ লাখ ২৭ হাজার ৫৫ টাকা বেতন-ভাতা দেওয়া হচ্ছে। দৈনিক হাজিরাভিত্তিতে ৭৭৭ জন কর্মচারী রয়েছেন। এদের জন্য প্রতি মাসে খরচ হচ্ছে ৭২ লাখ ৩৪ হাজার ৬৯০ টাকা। আগে ওই কর্মচারীরা দৈনিক ৩০০ টাকা করে মজুরি পেতেন।
চলতি বছরের মে মাসে সাক্কুর মেয়াদ শেষ হওয়ার আগে তাদের হাজিরা ৩০০ টাকার পরিবর্তে ৩৫০ টাকা করা হয়। কুসিকের অর্গানোগ্রাম অনুযায়ী বর্তমানে ৫৯০টি পদ সৃজন করা হয়েছে। এর মধ্যে ২৭৯ জনকে নিয়োগ দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। এই নিয়োগপ্রক্রিয়া শুরু হলে লোকবলসংকট দূর হয়ে স্থায়ী জনবল বাড়বে এবং দৈনিক হাজিরাভিত্তিক কর্মীর সংখ্যা কমবে।
কুসিক মেয়র আরফানুল হক রিফাত বলেন, সিটি করপোরেশনের স্থায়ী কর্মকর্তা-কর্মচারীর চেয়ে নয়গুণের বেশি দৈনিক হাজিরাভিত্তিক কর্মী, এটা মেনে নেওয়া যায় না। অন্য কোথাও এমন পরিস্থিতি নেই। আগে প্রয়োজনের তুলনায় অনেক বেশি অস্থায়ী লোকবল নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। এদের বেশির ভাগেরই কাজ নেই। এতে সিটি করপোরেশনের বিপুল অঙ্কের টাকা বেতন দিতে হচ্ছে। তাই এসব কর্মীর জুলাই মাসের বেতন সাময়িক স্থগিত করা হয়েছে। আমরা বিষয়টি যাচাই-বাছাই করছি। তালিকা করে প্রয়োজনীয় সংখ্যক লোক রাখবো। প্রয়োজনীয়তা না থাকলে অন্যরা বাদ যাবে।
কুসিকের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) ড. সফিকুল ইসলাম বলেন, আমাদের সাধারণ ওয়ার্ড ও সংরক্ষিত ওয়ার্ডে মোট কাউন্সিলর আছেন ৩৬ জন। তাদের প্রত্যেকের ওয়ার্ডে দৈনিক হাজিরাভিত্তিক ৫ জন করে কাজ করছে। ৩৬ জনের আওতায় প্রতিটি ওয়ার্ড পরিচ্ছন্নতার কাজে ২০ জন করে রয়েছে। আমাদের ময়লা ফেলার ট্রাক আছে ২০টি। প্রতিটিতে কাজ করে ৫ জন করে। এছাড়া পার্ক, বাজার, মার্কেট, সিটি করপোরেশনের প্রধান ও দক্ষিণের কার্যালয়ে লোকবলের সঙ্কট থাকায় দৈনিক হাজিরাভিত্তিক এসব কর্মচারীরা বিভিন্ন দপ্তরে কাজ করছেন। আর মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন এখনো চূড়ান্তভাবে না পাওয়ায় স্থায়ীভাবে লোকবল নিয়োগ দীর্ঘদিন ধরে বন্ধ রয়েছে। শুধু কুমিল্লা না, দেশের প্রতিটি সিটি করপোরেশনে এভাবে দৈনিক হাজিরাভিত্তিক লোক দিয়ে কাজ করানো হয়। আমাদের এখানে আরও লোক প্রয়োজন আছে।
কর্মীদের বেতন স্থগিত প্রসঙ্গে তিনি বলেন, বর্তমান মেয়র মহোদয় দায়িত্ব গ্রহণের পর সিদ্ধান্ত নিয়েছেন দৈনিক হাজিরাভিত্তিক এতো লোকের প্রয়োজন আছে কি-না, তারা ঠিকভাবে কাজ করে কি-না এবং তারা সরকার বিরোধী কোনো রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড করছে কি-না, এসব বিষয় যাচাই-বাছাই করা জরুরি। কারণ দৈনিক হাজিরাভিত্তিক কর্মীরা তো সরকার বিরোধী কোন রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে থাকতে পারবে না। মেয়র মহোদয় এসব বিষয় বিষয় যাচাই-বাছাইয়ের জন্য তাদের জুলাইয়ের বেতন সাময়িক স্থগিত রাখার নির্দেশ দিয়েছেন।