কুমিল্লায় তরুণকে ‘তুলে নেওয়ার’ ২ সপ্তাহেও সন্ধান মেলেনি
‘মাদকের বিরুদ্ধে কথা বলায়’ কুমিল্লা নগরীর এক তরুণকে ঘর থেকে তুলে নিয়ে যাওয়ার অভিযোগে মামলা হয়েছে। ‘মাদক কারবারিরা’ তাকে গুম করেছে বলে পরিবারের শঙ্কা।
পুলিশ বলছে, মামলার প্রধান আসামিকে এরই মধ্যে গ্রেপ্তার করে আদালতের মাধ্যমে রিমান্ডে এনে জিজ্ঞাসবাদ করা হয়েছে। ওই তরুণকে উদ্ধারে পুলিশের অভিযান অব্যাহত রয়েছে।
আশিকুর রহমান ওরফে আশিক (১৮) নামের ওই তরুণ কুমিল্লা নগরীর ৭ নম্বর ওয়ার্ডের গোবিন্দপুরের একটি ভাড়া বাড়ির বাসিন্দা আলমগীর হোসেনের ছেলে। তাদের গ্রামের বাড়ি জেলার মুরাদনগর উপজেলার রতনপুর গ্রামে।
আলমগীর হোসেন কুমিল্লা নগরীতে রিকশা চালিয়ে পরিবার চালান। আর তার ছেলে আশিক টাইলসের কাজ করতেন।
আলমগীর হোসেন জানান, গত ৩১ জুলাই বেলা সাড়ে ১১টার দিকে ভাড়া বাসা থেকে আশিককে একদল লোক তুলে নিয়ে যায়। এরপর ২ অগাস্ট তার মা তাসলিমা বেগম থানায় সাত জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাতনামা আরও দুই-তিন জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেন।
মামলার এজাহারভুক্ত আসামিরা হলেন ওই এলাকার জাহের মিয়ার ছেলে মুসি মিয়া, পাশের ঠাকুরপাড়ার রায়হান, নয়ন, পলাশ, বাহারাম, অভি ও সোহাগ।
মামলায় আসামিদের ‘মাদক কারবারি’ বলে উল্লেখ করেছেন তাসলিমা বেগম।
শুক্রবার আশিকের বাবা আলমগীর হোসেন বলেন, “মামলার আসামিরা এলাকায় মাদকের ব্যবসা করে। তারা আমার ছেলেকে তাদের সঙ্গে কাজ করতে বললে আশিক মাদকের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করে। এ নিয়ে সন্ত্রাসী মুসি আমার ছেলের উপর ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠে।”
তার অভিযোগ, “আমার ছেলে টাইলসের কাজ করে। ঘটনার দিন এক আত্মীয়ের বাড়িতে যাওয়ার জন্য কাজে যায়নি। ওইদিন বেলা সাড়ে ১১টার দিকে দেশীয় বিভিন্ন অস্ত্র নিয়ে মুসির নেতৃত্বে সন্ত্রাসীরা আমার বাসায় হামলা চালিয়ে ছেলেকে এলোপাতাড়ি পেটাতে থাকে।
“এক পর্যায়ে তারা আমার ছেলেকে টেনে-হিঁচড়ে ঘর থেকে তুলে নিয়ে যায়। এরপর থেকে ছেলের কোনো খবর পাইনি আমরা।”
আলমগীর আরও বলেন, পুলিশ প্রধান আসামি মুসিকে গ্রেপ্তার করে আদালত থেকে তিন দিনের রিমান্ডে এনে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে। তবে তার কাছ থেকে কী তথ্য পেয়েছে সেটা তিনি জনেন না।
আলমগীরের ভাষ্য, বর্তমানে তার ছেলেকে উদ্ধারে পুলিশের তেমন কোনো তৎপরতা দেখছেন না। তাই তাদের শঙ্কা ওই মাদক কারবারিরা তার ছেলেকে হত্যার করে লাশ কোথাও গুম করতে পারে।
তিনি বলেন, “আমার টাকা-পয়সা নেই, তাই ছেলের জন্য তেমন কিছুই করতে পারছি না। আমি পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের কাছে আকুল আবেদন জানাই, তারা যেন জীবিত অবস্থায় আমার ছেলেকে আমাদের বুকে ফিরিয়ে দেয়।”
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে কুমিল্লা কোতয়ালি মডেল থানার ওসি মুহাম্মদ সহিদুর রহমান বলেন, “আমরা ওই তরুণকে উদ্ধারে কোনো অবহেলা করছি না। এরই মধ্যে বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালানো হয়েছে।”
“মামলার প্রধান আসামি মুসিকে গ্রেপ্তারের পর রিমান্ডে এনে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। তার দেওয়া তথ্যগুলো যাচাই করে দেখা হচ্ছে। আর মামলার বাকি আসামিদের গ্রেপ্তার এবং ওই তরুণকে উদ্ধারে আমাদের অভিযান অব্যাহত রয়েছে,” বলেন ওসি।