কুমিল্লা মহানগর আ.লীগের সম্মেলন ঘিরে দুই পক্ষের কোন্দল প্রকাশ্যে
কুমিল্লা সিটি করপোরেশন প্রতিষ্ঠার ছয় বছর পর প্রথমবার ২০১৭ সালের ২২ জুলাই মহানগর আওয়ামী লীগের কমিটি ঘোষণা করা হয়। আর আগামীকাল শনিবার প্রথমবারের মতো কুমিল্লা মহানগর আওয়ামী লীগের আনুষ্ঠানিক সম্মেলন হতে যাচ্ছে। এত দিন প্রকাশ্যে কোনো দ্বন্দ্ব দেখা না গেলেও সম্মেলন ঘিরে কুমিল্লা নগরীতে আওয়ামী লীগের দুই গ্রুপের (আফজল-বাহার) বিভক্তি ও কোন্দল প্রকাশ্য হয়ে উঠেছে। ফলে আগামীকালের সম্মেলনে শেষ পর্যন্ত কী হয়, সর্বত্র এখন সেই আলোচনা।
দলটির নেতাকর্মীরা বলছেন, সম্মেলন ঘিরে এরই মধ্যে দুই গ্রুপের পুরনো দ্বন্দ্ব ও কোন্দল চাঙ্গা হয়ে উঠেছে। সম্মেলন নিয়ে এক গ্রুপের নেতাকর্মীদের মধ্যে উচ্ছ্বাসের পাশাপাশি অন্য গ্রুপের নেতাকর্মীদের মধ্যে চাপা ক্ষোভ বিরাজ করছে।
দলের অন্তত ১০ জন নেতাকর্মীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, কুমিল্লার বর্ষীয়ান আওয়ামী লীগ নেতা অধ্যক্ষ আফজল খানের সঙ্গে মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি ও কুমিল্লা সদর আসনের সংসদ সদস্য আ ক ম বাহাউদ্দিন বাহারের রয়েছে দীর্ঘদিনের রাজনৈতিক বিরোধ। আফজল খান মারা যাওয়ার পর তাঁর মেয়ে সংরক্ষিত নারী আসনের সংসদ সদস্য ও মহানগর আওয়ামী লীগের সহসভাপতি আঞ্জুম সুলতানা সীমা এখন ওই গ্রুপের নেতৃত্ব দিচ্ছেন। পাশাপাশি সীমার ভাই আওয়ামী লীগ নেতা মাসুদ পারভেজ খান ইমরানও বাবার ধারা অব্যাহত রাখার চেষ্টা করছেন। এমপি বাহারের সঙ্গে তাঁদের পুরনো রাজনৈতিক বিরোধ এখনো অব্যাহত আছে। আগামীকালের সম্মেলন ঘিরে এই বিরোধ এখন প্রকাশ্যে।
সম্মেলনকে কেন্দ্র করে ব্যাপক প্রস্তুতি নিয়েছে এমপি বাহারের নেতৃত্বাধীন মহানগর আওয়ামী লীগ। প্যান্ডেল করা, ডেলিগেটদের দাওয়াত দেওয়া এরই মধ্যে শেষ হয়েছে। তবে আফজল গ্রুপের কাউকে দাওয়াত দেওয়া হয়নি। এর আগে গত ৩১ অক্টোবর এমপি বাহার ও এমপি সীমা পৃথক প্রস্তুতিসভা করেছেন। সম্মেলনে প্রয়াত আফজল খান গ্রুপকে উপেক্ষা করার অভিযোগ করেছেন তাঁর অনুসারীরা। আর সম্মেলনে আফজল গ্রুপকে দাওয়াত দেওয়ার বিপক্ষে এমপি বাহারের অনুসারীরা। এ পরিস্থিতিতে সম্মেলনের আগমুহূর্তে দুই গ্রুপের মধ্যে উত্তেজনা বিরাজ করছে।
আগামীকাল কুমিল্লা টাউন হল মাঠে মহানগর আওয়ামী লীগের ত্রিবার্ষিক সম্মেলন হবে। এতে প্রধান অতিথি থাকবেন আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য শেখ ফজলুল করিম সেলিম। সম্মেলন উদ্বোধন করবেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। প্রধান বক্তা হিসেবে উপস্থিত থাকবেন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবউল আলম হানিফ। সম্মেলনে সভাপতিত্ব করবেন কুমিল্লা মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি আ ক ম বাহাউদ্দিন বাহার। কুমিল্লা মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সিটি করপোরেশনের মেয়র আরফানুল হক রিফাতকে করা হয়েছে সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটির আহ্বায়ক।
সম্মেলন ঘিরে এমপি বাহার গ্রুপের নেতাকর্মীদের মধ্যে উচ্ছ্বাস বিরাজ করলেও আফজল গ্রুপের মধ্যে রয়েছে ক্ষোভ। গত ৩০ অক্টোবর টাউন হল মাঠে কুমিল্লা সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলনে প্রতিপক্ষকে উদ্দেশ করে এমপি বাহার বলেছেন, ‘৫ নভেম্বর মহানগর আওয়ামী লীগের সম্মেলন হবে, কেউ সেখানে দখল করতে আসবেন না। ’
আগামীকালের সম্মেলন নিয়ে আ ক ম বাহাউদ্দিন বাহার এমপি বলেন, ‘সম্মেলন ঘিরে দলের নেতাকর্মীরা ঐক্যবদ্ধ, উল্লসিত ও উজ্জীবিত। নগরীর ২৭টি ওয়ার্ডেই আওয়ামী লীগ ও অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরা সম্মেলন সফল করতে ব্যাপক প্রস্তুতি নিয়েছে। মহানগর আওয়ামী লীগের সম্মেলন একটি উৎসবে পরিণত হবে বলে আশা করছি। ’
আঞ্জুম সুলতানা সীমা বলেন, ‘৫ নভেম্বরের সম্মেলনের বিষয়ে আমাদের কিছু জানানো হয়নি। সম্মেলনকেন্দ্রিক প্রস্তুতিসভায়ও আমাদের কাউকে রাখা হয়নি। বিষয়টি কেন্দ্রীয় নেতাদের জানানো হয়েছে। ’
কেন ডাকা হয়নি—এমন প্রশ্নের জবাবে সীমা বলেন, ‘সেটা উনারা ভালো বলতে পারবেন। তবে আমি সম্মেলনে যাব। কারণ আমি আওয়ামী লীগের একজন কর্মী। সেখানে কেউ বাধা দিলে তখন দেখা যাবে। ’
সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটির আহ্বায়ক আরফানুল হক রিফাত বলেন, ‘পত্রিকায় প্রেস বিজ্ঞপ্তি দিয়ে সম্মেলনের বিষয়ে জানানো হয়েছে। এটা জনসভা নয়, সম্মেলন। সেখানে কাউন্সিলররা আসবেন, ভোট দেবেন। লুকোচুরির কিছু তো এখানে নেই। এখন কেউ যদি দাওয়াতের বিষয়টি অস্বীকার করেন, তাহলে আমরা কী করতে পারি?’
অন্যদিকে মহানগর আওয়ামী লীগের সহসভাপতি ওমর ফারুক বলেন, ‘আমি সম্মেলনের বিষয়ে কিছু জানি না। সম্ভবত আমাদের (আফজল গ্রুপের) কেউই কিছু জানেন না। দাওয়াত না দিলে কি জোর করে যাওয়া যায়?’
সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক মহানগর আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আতিক উল্লাহ খোকন বলেন, ‘তারা (আফজল গ্রুপ) কয়েকজন ঘরে বসে অভিযোগের বাক্স খুলে রাখেন। আমার ঘরে আমি যাব, সেখানে দাওয়াতের কী আছে? সম্মেলনের আয়োজন তারাও তো করতে পারত। তা না করে ঘরে বসে বসে অভিযোগ করছে। সম্মেলনের বিষয়ে পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি দিয়ে স্পষ্ট করে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে। ’
জেলহত্যা দিবসে আফজল গ্রুপের শোডাউন : গতকাল জেলহত্যা দিবসে শোডাউন করে শোক মিছিল করেছেন আফজল খান গ্রুপের নেতাকর্মীরা। আঞ্জুম সুলতানা সীমার নেতৃত্বে গতকাল নগরীর নজরুল এভিনিউয়ের মডার্ন কমিউনিটি সেন্টার থেকে মিছিলটি বের হয়ে নগরীর বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে কান্দিরপাড় পূবালী চত্বরে এসে শেষ হয়। তবে এতে বাহার গ্রুপের কেউ অংশ নেয়নি।