কুমিল্লায় বিবাহিত ‘ছাত্রলীগ’ নেতা যখন উপজেলা ‘ছাত্রদলের’ আহবায়ক!
অছাত্র, বিবাহিত এক ছাত্রলীগ নেতাকে বুড়িচং উপজেলা ছাত্রদলের আহবায়ক হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে।
গত ৩০ নভেম্বর কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা ছাত্রদলের সদস্য সচিব তোফায়েল আহমেদের স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে ৫১ সদস্য বিশিষ্ট্য বুড়িচং উপজেলা ছাত্রদলের অস্থায়ী কমিটি ঘোষণা করেন। সেখানে সাবেক বঙ্গবন্ধু ছাত্র একতা পরিষদের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক স্বপন আহমেদ পাখিকে বুড়িচং উপজেলা ছাত্রদলের আহবায়ক ঘোষণা করা হয়।
জানা যায়, বুড়িচং উপজেলা ছাত্রদলের নবগঠিত কমিটির আহবায়ক স্বপন আহমেদ পাখি বিবাহিত সাবেক ছাত্রলীগ নেতা। তিনি বিয়ে করেন কুমিল্লা আদর্শ সদর উপজেলার রত্নামতী। তার শ্বশুরের নাম মো. কবির সর্দার, স্ত্রী মোসাঃ জুলি আক্তার, ছেলে মোহাম্মদ আলিফ। এছাড়াও ছাত্রলীগ করা অবস্থায় মোটরসাইকেল চুরির ঘটনায় দীর্ঘদিন জেল খাটেন। যার কারণে জেলা ছাত্রলীগের নেতারা তাকে ছাত্রলীগ থেকে বহিষ্কার করে। বর্তমানে তার আপন দুই ভাই আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত।
বৃহস্পতিবার( ৭ ডিসেম্বর) সকালে বুড়িচং এরশাদ ডিগ্রি কলেজ ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি সাইফ আহমেদ সবুজ বলেন, আমি ১৪ বছর ধরে এ বুড়িচংয়ে ছাত্রদলের রাজনীতি করি। আমি এরশাদ ডিগ্রি কলেজের সাবেক সভাপতি ও সদস্য সচিব ছিলাম। রাজনীতি করতে গিয়ে ১৩টি মামলা খেয়েছি। ৫ বার জেলে গেছি কিন্তু দুঃখের বিষয় হলো আমাদের মতো ত্যাগী নির্যাতিত নেতারা এ কমিটিতে স্থান পায়নি। জেলা কমিটির সদস্য সচিব তোফায়েল আহমেদ নিজের স্বাক্ষরিত একটি প্যাডে এ অস্থায়ী কমিটি ঘোষণা করেন। যেখানে জেলা কমিটির সভাপতির স্বাক্ষরও নেই। এটা সাংগঠনিক ভাবে গ্রহণযোগ্য নয়। আর অস্থায়ী বলতে কোনো কমিটিই নাই। আর কমিটিতে যাকে আহবায়ক করা হয়েছে তার বিরুদ্ধে একটিও রাজনৈতিক মামলা নাই।
বুড়িচং এরশাদ ডিগ্রি কলেজ ছাত্রদলের আহবায়ক মো. জাহিদ হাসান আরিফ বলেন, বুড়িচং এরশাদ ডিগ্রি কলেজের সাবেক সভাপতি সাইফ উদ্দিন সবুজ ছাত্রদলের রাজনীতি করে ১৩টি মামলা খেয়েছে। এ কমিটিতে তার মতো ত্যাগী নেতাকর্মীদের মূল্যায়ন করা হয়নি। বুড়িচংয়ে ছাত্রদলের এতো ত্যাগী নেতাকর্মী থাকতে ছাত্রলীগের ভাড়া করা নেতা দিয়ে বুড়িচং উপজেলা ছাত্রদলের কমিটি ঘোষণা করেছে। তাই আমরা এই কমিটি প্রত্যাখ্যান করছি। এই পকেট কমিটি দ্রুত বিলুপ্ত করে ত্যাগী নেতাকর্মী দিয়ে পুণরায় কমিটি ঘোষণা করার আহবান করছি।
নিমসার জুনাব আলী ডিগ্রি কলেজ ছাত্রদলের আহবায়ক আবু নাঈম বলেন, এটা কোনো কমিটিই হয় নাই। ছাত্রলীগের বহিষ্কৃত নেতা দিয়ে ছাত্রদলের কমিটি হয় কিভাবে আমার বুঝে আসে না। এখন আন্দোলন সংগ্রামের সময় এমন পকেট কমিটি ফাইজলামি ছাড়া কিছু না।
কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা ছাত্রদলের সদস্য সচিব তোফায়েল আহমেদ বলেন, বুড়িচংয়ে ইউনিট কমিটি না থাকায় সেখানে অস্থায়ী কমিটি ঘোষণা করা হয়েছে। চলমান আন্দোলন সংগ্রামকে চাঙা করতে এই কমিটি। পরিস্থিতির কারণে সবাই এক সঙ্গে বসার সুযোগ হয়নি। তবে কমিটির বিষয়ে সিনিয়র নেতারা অবগত আছেন। যারা আন্দোলন সংগ্রামে মাঠে ছিলো তাদেরকে দিয়ে কমিটি দেওয়া হয়েছে।
এ বিষয়ে জানতে কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা ছাত্রদলের সভাপতি শিশির আহমেদকে মুঠোফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করে পাওয়া যায়নি।
বুড়িচং উপজেলা বিএনপির সভাপতি ও সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান এটি এম মিজানুর রহমান বলেন, আগে বুড়িচংয়ে বিএনপি ও তার অঙ্গ সংগঠনের যে কোনো কমিটি হলে আমরা বিএনপির সিনিয়র নেতারা জানতাম। কিন্তু এখন যে দায়িত্বে আসে সে তার মতো করে কমিটি দেয়। কমিটি ঘোষণা হওয়ার পরে জানতে পারি। বুড়িচংয়ে চলে রাজতন্ত্র যখন শওকত মাহমুদ ভাই দায়িত্বে ছিল, তখন তার নিজের মতো কমিটি দিছে। এখন জসীম ভাই দায়িত্বে আছে তাই জসীম ভাইয়ের মতো করে কমিটি দিছে। আমি কোনো কমিটির বিষয়ে অবগত নাই।