প্রথম ম্যাচে হার কুমিল্লার জন্য ‘সৌভাগ্যে’র!
একটা টুর্নামেন্টের প্রথম কে হেরে যেতে চায়? বোধ-বুদ্ধিহীন কোনো ব্যাক্তিও সম্ভবত এ প্রশ্নের উত্তরে ‘হ্যাঁ’ বলবে না; কিন্তু শুনলে অবাক হবেন, বিপিএলের সবচেয়ে সফল ফ্রাঞ্চাইজি কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্স নাকি প্রথম ম্যাচ জিততেই চায় না। তারা চায় হেরে যেতে। এই হারটা নাকি তাদের জন্য সৌভাগ্যের!
অবাক করা হলেও, এমন কথাই দুর্দান্ত ঢাকার কাছে প্রথমে ম্যাচে ৫ উইকেটে হারের পর সংবাদ সম্মেলনে এসে অকপটে স্বীকার করলেন কুমিল্লার অধিনায়ক লিটন দাস। বললেন, তাদের কোচও (সালাউদ্দিন) নাকি চেয়েছিলেন প্রথম ম্যাচ হেরে যাওয়াটা দলের জন্য ভালো।
সফল অধিনায়ক ইমরুল কায়েসকে সরিয়ে এবার কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্সের দায়িত্ব দেয়া হয় লিটন দাসকে। যদিও ইমরুল দলে রয়েছেন এবং আজ ভালো ব্যাটিংও করেছেন। ৬৬ রান করে দলকে লড়াকু পুঁজি এনে দেয়ার চেষ্টা করেন। নতুন অধিনায়ক হিসেবে প্রথম ম্যাচেই হারটা কষ্টের কি না? জানতে চাইলে লিটন বলেন, ‘দেখেন, প্রত্যেকটা হারই তো কষ্টের। প্রথমবার অধিনায়কত্ব করছি, আমি তো চাইবো প্রথম ম্যাচ জিততে। এদিকে দিয়ে তো অবশ্যই খারাপ লাগবে যে, হেরে গেছি প্রথম অধিনায়কত্বের ম্যাচে। একই সঙ্গে মনের ভিতর এটাও থাকে যে, কুমিল্লা তো সবসময়ই প্রথম ম্যাচ হারে। ’
এ সময়ই প্রসঙ্গ ওঠে, গতবারও টানা তিন ম্যাচ হেরেছে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্স। এরপর চ্যাম্পিয়ন হয়েছে তারাই। এর আগেও অনেকবার প্রথম ম্যাচ হেরে গিয়েও শেষ পর্যন্ত চ্যাম্পিয়ন হয়েছে তারাই। তো এবারও প্রথম ম্যাচ হেরে যাওয়াটাও কী সৌভাগ্যের কি না। লিটন দাস বলেন, ‘আমি স্যারের (সালাউদ্দিন) সঙ্গে সেদিনও কথা বলছিলাম, স্যার বলছিল, আমরা প্রথম ম্যাচ এমনেই হেরে যাই। আর হারলেই নাকি স্যারের জন্য লাকি। ‘
তবে, হারলেও ভিন্ন একটি দৃষ্টিতে ভালো হয়েছে কুমিল্লার জন্য। দলের খেলোয়াড়দের দেখে নিতে পেরেছেন। আগামী ম্যাচের জন্য নিজেদের প্রস্তুত করারও সুযোগ পেয়েছে তারা। লিটন বলেন, ‘একটা জিনিস আমাদের ভালো হইছে যে, একটা মোটামুটি স্কোর করেও… বোলাররা আমাদের দেখিয়েছে যে আমরাও পারি। আমরা পুরো দলটা দেখতে পারলাম, কোন জায়গায় ল্যাকিংস আছে, কোন জায়গায় স্ট্রং। এখন আমরা বসে আলোচনা করে জিনিসটা তৈরি করতে পারবো। দ্বিতীয় ম্যাচ থেকে আশা করি ভালো কিছু হবে। ’
প্রসঙ্গতঃ বিপিএলের তৃতীয় আসর, ২০১৫-১৬ মৌসুমে প্রথম নাম লিখায় কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্স। মাশরাফি বিন মর্তুজার নেতৃত্বে সেবার প্রথম ম্যাচেই ঢাকা ডাইনাসমাইটসের কাছে ৬ উইকেটে হেরে বিপিএলে যাত্রা শুরু হয় কুমিল্লার। কিন্তু এরপর আর ফিরে তাকাতে হয়নি তাদের। গ্রুপ পর্বের ৯ ম্যাচে দুটিতে মাত্র গার, ৭টিতে জিতেছে তারা। শেষ পর্যন্ত তো শিরোপা জয়ী দলটি হয়েছিলো কুমিল্লাই।
পরের আসরে খুবই করুন অবস্থা হয় কুমিল্লার। শুরুতেই টানা ৫টি ম্যাচ হেরে যায় তারা। গ্রুপ পর্বে শেষের দিক থেকে হয়েছিলো দ্বিতীয়। বিপিএলের ৫ম আসরে, ২০১৭-১৮ সালে মাশরাফি ছিলেন না। তামিমকে নিয়ে আসে কুমিল্লা। কোচ সালাউদ্দিনও ফিরে আসে। কিন্তু প্রথম ম্যাচেই ৪ উইকেটে হেরে যায় তারা সিলেট সিক্সার্সের কাছে। তবে কোয়ালিফায়ারে গিয়েছিলো তারা। রংপুরের কাছে হেরে বিদায় নেয় কোয়ালিফায়ার-২ থেকে।
বিপিএলের ৬ষ্ঠ আসরে এসে প্রথম ম্যাচে জয় পেয়েছিলো কুমিল্লা। সিলেট সিক্সার্সকে ৪ উইকেটে হারিয়েছিলো তারা। ঢাকা ডাইনামাইটসকে হারিয়ে সেবার চ্যাম্পিয়ন হয়েছিলো তারা। ২০১৯-২০ সালে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্স ছিল না বিপিএলে। সেবার সবগুলো দলেরই মালিকানা রেখে দেয় বিসিবি। কুমিল্লার ফ্রাঞ্চাইজি অংশ নেয় কুমিল্লা ওয়ারিয়র্স নামে। তবে সেবারও প্রথম ম্যাচে জয় পায় তারা। রংপুর রেঞ্জার্সকে ১০৫ রানে পরাজিত করে।
২০২০ এবং ২০২১ সালে করোনা মহামারির কারণে খেলা অনুষ্ঠিত হয়নি। ২০২২ সালে পরের আসরেই ফিরে আসে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্স। প্রথম ম্যাচে সিলেট সানরাইজার্সের বিপক্ষে ২ উইকেটের ব্যবধানে জয় পায়। শেষ পর্যন্ত শিরোপাও জয় করে নেয় তারা। সর্বশেষ ২০২৩ সালের আসরে প্রথম তিন ম্যাচ টানা হেরেছিলো কুমিল্লার ফ্রাঞ্চাইজিটি। প্রথম ম্যাচে রংপুর রাইডার্সের কাছে ৩৪ রানে, পরের ম্যাচে সিলেট স্ট্রাইকার্সের কাছে ৫ উইকেটে এবং তৃতীয় ম্যাচে ফরচুন বরিশালের কাছে ১২ রানে হেরেছে কুমিল্লা।
এরপরই ঘুরে দাঁড়ায় ইমরুল কায়েসের দল। শেষ পর্যন্ত ফাইনালে মাশরাফির সিলেট স্ট্রাইকার্সকে হারিয়ে জিতে নেয় টানা দ্বিতীয় এবং সব মিলিয়ে চতুর্থ বিপিএল শিরোপা।