ছয় দিনে জামিন বাহার-সূচনাকে ভারতে পালানোর সহায়তাকারীর, ন্যায় বিচারের শঙ্কা
গ্রেফতারের ছয় দিনের মধ্যে জামিন পেয়েছেন সাবেক সংসদ সদস্য আকম বাহাউদ্দীন বাহার ও তার মেয়ে কুমিল্লা সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র তাহসিন বাহারকে অবৈধ পথে সীমান্ত দিয়ে ভারতে পালানোর কাজে সহযোগিতার অভিযোগে গ্রেফতার সুমন মেম্বার (ইউপি সদস্য)। এ নিয়ে জেলা জুড়ে চলছে নানান বিতর্ক আর সমালোচনা। ন্যায় বিচারের শঙ্কা জানিয়েছে বিএনপি নেতাকর্মীরা।
মঙ্গলবার (৮ অক্টোবর) আদালতের মাধ্যমে জামিনে বের হন তিনি। বিষয়টি নিশ্চিত করেছে জেলা কারাগার কর্তৃপক্ষ।
এর আগে গত ২ অক্টোবর কুমিল্লা জেলা গোয়েন্দা পুলিশের একটি দল তাকে গ্রেফতার করে। পরে হস্তান্তর করা হয় কুমিল্লা কোতোয়ালি মডেল থানায়।
এর ঠিক ছয় দিন পর ৮ অক্টোবর আদালতের মাধ্যমে জামিনে বের হন বহুল আলোচিত মানবপাচারকারী সুমন।
গত ৫ আগষ্ট ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুথানের মাধ্যমে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পদত্যাগ করে দেশ ছেড়ে ভারতে চলে যান। এরপর থেকে কুমিল্লা মহানগর আওয়ামী লীগের অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠন এবং জেলা আওয়ামী লীগের অঙ্গসংগঠন ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা গা ঢাকা দেয়।
এর কিছুদিন পর কুমিল্লা-৬ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য আকম বাহাউদ্দীন বাহার ও তার মেয়ে কুমিল্লা সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র তাহসিন বাহার সূচনার ভারতে অবস্থানরত অবস্থায় দুটি ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেইসবুকে ভাইরাল হয়।
এ নিয়ে কুমিল্লার স্থানীয় একটি পত্রিকা বাহার-সূচনার অবৈধভাবে ভারতে পলায়নের বিষয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে।
সেই প্রতিবেদনে ওঠে আসে চাঞ্চল্যকর তথ্য। বের হয়ে আসে বাহার-সূচনাকে ভারতে পলায়নে সহযোগিতাকারী মেম্বার সুমনের নাম। এ নিয়ে সুমনের মানবপাচারে জড়িত থাকার নানান দিক জাতীয় ও স্থানীয় গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়।
এরপর তাকে গ্রেফতারের জন্য অভিযানে নামে জেলা গোয়েন্দা পুলিশ।
এতো দ্রুত জামিন পাওয়া নিয়ে কুমিল্লা মহানগর বিএনপির সদস্য সচিব ইউসুফ মোল্লা টিপু বলেন, আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের ভারতে পলায়নে মেম্বার সুমন সাহায্য করেছে এমন সংবাদ স্থানীয়সহ বেশ কিছু জাতীয় মিডিয়াতে প্রচার হয়েছে তা আমরা দেখেছি। তাকে আটকের ছয় দিন পর সে জামিনে বের হয়ে গেছে। এইটা সত্যিই দুঃখজনক। ন্যায় বিচার নিয়ে আমরা শঙ্কিত। এতো সহজে যদি বড় অপরাধীরা পার পেয়ে যায়, তাহলে অন্য অপরাধীরা আরো উৎসাহিত হবে। আরো অপরাধ সংঘটিত হবে।
কুমিল্লা জেলা বিএনপির আহ্বায়ক হাজী আমিন উর রশিদ ইয়াছিন বলেন, সুমন মেম্বারের জামিনের বিষয়টি শুনে আমি অনেক অবাক হলাম। মানবপাচারের অভিযোগে তাকে গ্রেফতার করা হলো, আবার ছয দিনের মাথায় জামিনও পেয়ে গেলো! মানবপাচারের সাথে সে জড়িত এমন সংবাদ আমরা অনেক পত্রিকায় দেখেছি। এতো বড় অপরাধীকে যদি বিচারের আওতায় নিয়ে আসা না হয় তাহলে সমাজে অপরাধ আরো বেড়ে যাবে ৷
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, মো. সুমন মিয়া কুমিল্লার ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলার দক্ষিণ তেথাভূমি এলাকার আলী আশরাফ মিয়ার ছেলে। তিনি শশীদল ইউনিয়নের ৯নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য। চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে জেলা প্রশাসন থেকে অনুমতি নিয়ে শশীদল ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আতিকুর রহমান রিয়াদ প্রবাসে পাড়ি জমায়। চেয়ারম্যান রিয়াদের অনুপস্থিতিতে ইউপি সদস্য সুমন ক্ষমতার প্রভাবে প্যানেল চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন। ভারত সীমান্তবর্তী এলাকায় তার গ্রাম হওয়ার কারণে দীর্ঘদিন ধরে ওই এলাকায় মাদকের সাম্রাজ্য তৈরি করেছেন এই সুমন। পরবর্তীতে হুন্ডি ব্যবসাসহ মানবপাচারের মতো বড় ধরণের অপরাধে লিপ্ত হয়। অল্প দিনের মধ্যে সম্পদ ও ক্ষমতাবানদের তালিকায় তার নাম চলে আসে।