ইসলামি সংগীতের পর এবার পূজামণ্ডপে জামায়াত নেতার গীতা পাঠ
চট্টগ্রামের জেএম সেন হলের পূজামণ্ডপে চট্টগ্রাম কালচারাল একাডেমির শিল্পীদের ‘ইসলামি সংগীত’ বিতর্ক না মুছতেই এবার সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় উৎসব শারদীয় দুর্গাপূজায় গীতা পাঠ করে ভাইরাল হয়েছেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় নেতা অধ্যাপক মতিয়ার রহমান। তিনি জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় মজলিসের শুরা সদস্য।
বৃহস্পতিবার (১০ অক্টোবর) রাত ১০টার দিকে ঝিনাইদহের কোটচাঁদপুর উপজেলার বাজেবামনদাহ হরিতলা পালপাড়া পূজামণ্ডপে গীতা পাঠ করেন এ জামায়াত নেতা। তার সেই গীতা পাঠের ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়তেই দেশজুড়ে আলোচনা-সমালোচনার সৃষ্টি হয়েছে।
জানা যায়, বৃহস্পতিবার সপ্তমিতে রাত ১০টার দিকে বাজেবামনদাহ হরিতলা পালপাড়া পূজামণ্ডপ পরিদর্শনে যান কোটচাঁদপুর উপজেলা জামায়াতের নেতাকর্মীরা। অন্যান্যদের বক্তব্যের পর প্রধান অতিথি অধ্যাপক মতিয়ার রহমান তার বক্তব্য শুরু করেন। বক্তব্যে ইসলাম ও সনাতন ধর্ম সম্পর্কে নানা বিষয়ে আলোচনা করেন তিনি। বক্তব্যের একপর্যায়ে তিনি গীতা পাঠ করেন। সে সময় সনাতন ধর্মাবলম্বী নারীরা উলুধ্বনি দেন ও শঙ্খ বাজান। গীতা পাঠ শেষে আগামীতে নির্বাচিত হলে হিন্দু সম্প্রদায়ের উৎসব পালনে সহযোগিতার আশ্বাস দেন অধ্যাপক মতিয়ার।
ওই বক্তব্যের শুরুতে তিনি বলেন, ‘এই কোটচাঁদপুরে আলো-বাতাস, মাটি ও মায়া-মমতাই বেড়ে উঠেছি। ইসলামি আদর্শের একজন হলেও আমার ভেতর একজন ভালো সনাতনী হিন্দু ব্রাহ্মণ, একজন ভালো খ্রিষ্টান এবং একজন ভালো মুসলিমও বাস করেন।’
সনাতন ধর্মাবলম্বীদের উদ্দেশ্য এই জামায়াত নেতা আরও বলেন, ‘বিশ্বাস করুন হিন্দু ধর্মের আবির্ভাব হয়েছে মুসলমানদের কোরআন পাওয়ারও সাড়ে ৪ হাজার বছর আগে। এই জাতিটা বাস করতো ভারতের কালীকোটের মালমল সিন্দূর হ্রদের অববাহিকায়। আড়াই হাজার বছর পর্যন্ত ওরা সেখানে বাস করেছে।’
বাজেবামনদাহ হরিতলা পালপাড়া পূজামণ্ডপের আহ্বায়ক কমিটির সভাপতি গুরুদাস বিশ্বাস বলেন, ‘বৃহস্পতিবার রাত ১০টার পর জামায়াতের মতিয়ার রহমানসহ আরও কয়েকজন মণ্ডপে এসেছিলেন। বক্তব্যে তিনি আমাদের ধর্ম সম্পর্কে অনেক জ্ঞান দেন। পরে গীতা থেকে একটি শ্লোক পাঠ করেন।’
এ ব্যাপারে কথা বলতে অধ্যাপক মতিয়ার রহমানের মোবাইল ফোনে কল দিলে তা বন্ধ পাওয়া যায়।
এদিকে চট্টগ্রামে পূজামণ্ডপে ‘ইসলামি সংগীত’ গাওয়ার ঘটনা নিয়ে দেশজুড়ে সমালোচনা চললেও অধ্যাপক মতিয়ার রহমানের গীতা পাঠ অনেকের কাছেই প্রশংসিত হয়েছে। বিষয়টিকে ধর্মীয় সহনশীলতার এক অনন্য উদাহরণ হিসেবে বিবেচনা করেছেন কেউ কেউ। অনেকেই মনে করছেন, এ ধরনের পদক্ষেপ বাংলাদেশের ধর্মীয় সম্প্রীতির চেতনাকে আরও দৃঢ় করবে।
তবে বিপরীত চিত্রও রয়েছে। বিষয়টিকে ‘বাড়াবাড়ি’ বলে আখ্যা দিয়েছেন কেউ কেউ।
শুক্রবার (১১ অক্টোবর) সনাতন ধর্মাবলম্বীরা ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্যে দুর্গাপূজার মহাঅষ্টমী পালন করেছেন। শারদীয় দুর্গাপূজার অন্যতম জাঁকজমকপূর্ণ দিন এটি। অষ্টমী বিহিত পূজা, সন্ধি পূজা ও কুমারী পূজার মধ্যে দিয়ে উৎসবমুখর পরিবেশে মহাঅষ্টমী উদযাপন করছেন সনাতন ধর্মাবলম্বীরা।
সূত্রঃ বাংলা ট্রিবিউন