আজ তনু হত্যার ৯ বছর, নেই মামলার অগ্রগতি

কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজের ছাত্রী এবং নাট্যকর্মী সোহাগী জাহান তনু হত্যার পর দেশজুড়ে এ নিয়ে ব্যাপক প্রতিবাদ-আলোচনা হয়েছিলো।
কিন্তু সেই ঘটনার নয় বছর পূর্ণ হয় ২০ মার্চ। অথচ আজও উদ্ঘাটন হয়নি হত্যার রহস্য, শনাক্ত হয়নি খুনি।

এমন আলোচিত একটি ঘটনার তদন্ত-মামলা-বিচারের এই হাল হওয়ায় হতাশ তনুর পরিবার। তারা হত্যার সঠিক বিচার পেতে প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে দেখা করতে চান এবং প্রয়োজনে আন্তর্জাতিক আদালতে মামলা করতে চান পরিবারের সদস্যরা।

২০১৬ সালের ২০ মার্চ কুমিল্লা সেনানিবাস এলাকায় আলোচিত এ হত্যাকাণ্ড ঘটে। তনুর স্বজনেরা জানান, চার তদন্ত সংস্থার দপ্তর বদল হয়ে মামলাটি এখন বর্তমানে তদন্ত করছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) সদর দপ্তর। কিন্তু এখন পর্যন্ত তদন্তে কোনো আশার আলো দেখাতে পারেনি বা কোনো হত্যাকারীকে শনাক্ত করতে পারেনি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।

বুধবার (১৯ মার্চ) সকালে এ বিষয়ে পিবিআইর প্রধান কার্যালয়ের পরিদর্শক মো. তরিকুল ইসলাম বলেন, মামলাটি আমরা গুরুত্ব দিয়ে দেখছি। আমাদের তদন্ত কার্যক্রম চলমান। আসামি শনাক্তের চেষ্টা চলছে।

চারটি তদন্ত সংস্থা পরিবর্তন আর পাঁচবার তদন্ত কর্মকর্তা পরিবর্তন ছাড়া কোনো অগ্রগতি দেখা যাচ্ছে না। শুরুতে থানা-পুলিশ, পরে জেলা পুলিশের গোয়েন্দা শাখার (ডিবি) পর পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। বর্তমানে মামলাটি তদন্ত করছে পিবিআই হেডকোয়ার্টার্স। দীর্ঘ সময় মামলাটি তদন্ত করেও কোনো কূলকিনারা করতে পারেনি কেউ।

নিহত তনুর মা আনোয়ারা বেগম জানান, পিবিআইয়ের তদন্তকারী দলের সদস্যরা সর্বশেষ ২০২০ সালে ঘটনাস্থল একবার পরিদর্শন করতে এসে কথা বলেছিলেন তনুর বাবা আর ভাইয়ের সঙ্গে। তার পর থেকে পরিবারের কারও সঙ্গে কোনো যোগাযোগ করে না তদন্তকারী সংস্থার কেউ; যার কারণে মামলার তদন্ত সম্পর্কে কিছুই জানেন না তনুর পরিবার। দ্বারে দ্বারে ঘুরে বিচার না পেয়ে মেয়ের হত্যাকাণ্ডের বিচারের ভার আল্লাহর কাছে ছেড়ে দিয়েছেন বলে জানালেন আনোয়ারা খাতুন।

তনুর বাবা ইয়ার হোসেন বলেন, মেয়ে হত্যার নয় বছর হলো; কিন্তু এ মামলার কোনো কূলকিনারা হয়নি। বারবার মামলার তদন্ত কর্মকর্তা বদল ছাড়া আর কোনো অগ্রগতি আমাদের চোখে পড়ছে না। পিবিআই তদন্তভার পাওয়ার পর ভেবেছিলাম হত্যার বিচার পাব। কিন্তু এখনো খুনিরাই শনাক্ত হলো না। তারা মামলাটি ফেলে রেখেছে, কোনো কাজ করছে না।

এই বাবার আক্ষেপ ও চাওয়া, আমার মেয়ে হত্যার ঘটনায় আমরা বারবার বলেছি সেনাবাহিনীর সার্জেন্ট জাহিদ ও তার স্ত্রীকে ধরা হোক, তাদেরকে আইনের আওতায় আনা হোক কিন্তু এই ১০ বছরে তাদেরকে আইনের আওতায় আনা হয়নি। উল্টো আমাদেরকে জিজ্ঞাসাবাদের নামে হয়রানী করা হচ্ছে। আমি অসহায় এবং অর্থসম্পদ নেই বলে আমার মামলার এ দুরবস্থা। মেয়ের সঠিক বিচার চাইতে আমি প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে দেখা করতে চাই এবং আমার মেয়ের হত্যার সঠিক বিচার পেতে আমরা আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে মামলা করতে চাই। দেশবাসীর কাছে বিচার চাই।

কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজ থিয়েটারের সাবেক সভাপতি তনুর সহকর্মী মো. আল আমিন বলেন, তদন্তের দায়িত্বে থাকা সংশ্লিষ্ট মহলের সদিচ্ছার অভাব না হলে এতোদিনে বের হয়ে আসতো হত্যাকারীরা, আলোর মুখ দেখত তনু হত্যা মামলা।

২০১৬ সালের ২০ মার্চ রাতে কলেজছাত্রী এবং নাট্যকর্মী সোহাগী জাহান তনুর লাশ কুমিল্লা সেনানিবাস এলাকা থেকে উদ্ধার করা হয়। সেনানিবাসের ভেতরে একটি স্টাফ কোয়ার্টারে পরিবারের সঙ্গে থাকতেন তনু। ২০১৭ সালের মে মাসে সিআইডি তনুর পোশাক থেকে নেওয়া নমুনার ডিএনএ পরীক্ষা করে তিনজনের শুক্রাণু পাওয়ার কথা গণমাধ্যমকে জানিয়েছিল।

আরো পড়ুন