কুমিল্লার লালমাই পাহাড় এলাকায় ‘কাঠ আলু’ চাষ
মহিউদ্দিন মোল্লাঃ কাসাভা। কুমিল্লার লালমাই পাহাড় এলাকায় ‘কাঠ আলু’ নামে পরিচিত। পাহাড়ে অনেক বছর ধরে চাষ হয় আলু জাতীয় এই উদ্ভিদটি। কাসাভা চাষে বদলে যেতে পারে লালমাই পাহাড়ের অর্থনীতি। এখন প্রয়োজন সরকারি ও বেসরকারি সমন্বিত উদ্যোগ।
কৃষি বিভাগের সূত্র জানায়, প্রতি একর জমি থেকে ৬-৭ টন কাসাভা পাওয়া যায়। কাসাভা দিয়ে গ্লুকোজ, বার্লি, সুজি, রুটি, নুডলস, ক্র্যাকার্স, কেক, পাউরুটি, বিস্কুট, পাপড়, চিপসসহ নানা খাদ্য তৈরি করা যায়। এ ছাড়াও কাসাভা থেকে উৎপাদিত স্টার্চের ব্যবহার হয় বস্ত্র ও ওষুধ শিল্পে। এর পাতা ও অবশিষ্ট অংশ দিয়ে জৈব সার তৈরি হয়। পোশাক শিল্প, ঔষধ শিল্প এবং খাদ্য প্রক্রিয়াজাতকরণ শিল্পে প্রতি বছর সাড়ে ৩ লাখ টন কাসাভার স্টার্চ প্রয়োজন। কিন্তু দেশে বছরে উৎপাদন হয় মাত্র ৫ থেকে ৬ হাজার টন। বাকিটুকু ভারত, থাইল্যান্ড ও ভিয়েতনামসহ বিভিন্ন দেশ থেকে আমদানি করা হয়।
সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, লালমাই পাহাড়ের কাটবাড়ি, সালমানপুর, জামমুড়া, হাজীর খামার, লালমাইসহ বিভিন্ন এলাকায় কাসাভা ফসল তোলায় ব্যস্ত কৃষক। কৃষকের হাতের টানে লালমাটি থেকে উঠে আসছে খয়েরি রঙের কাসাভা। তা পরিষ্কার করে তুলে দেওয়া হচ্ছে ট্রাকে। মূলত গাছের শিকড়টা কাসাভায় রূপান্তরিত হচ্ছে। লালমাই এলাকার এক কৃষক বলেন, তিনি আগে সবজি চাষ করতেন। রোগবালাইয়ের কারণে ফসল কম হতো। এখন কাসাভা চাষ করছেন। এই ফসলের রোগবালাই কম। কান্ড থেকে নতুন গাছ হয়। সার ও সেচ কম লাগায় পুঁজিও কম লাগে। লালমাই পাহাড়ের সদর দক্ষিণ উপজেলার জামমুড়া গ্রামের কৃষক মো. মোকসেদ আলী। তিনি ১৩ বছর ধরে কাসাভা চাষ করেন। তিনি বলেন, তার পরিবার কয়েক যুগ ধরে এখানে কাসাভা চাষ করেন। তিনি এবার ৫০ একর জমিতে কাসাভা চাষ করেছেন। প্রতি একরে ২৫ হাজার টাকার মতো খরচ হয়। ভালো ফলন হলে প্রতি একরের ফসল ৩০ হাজার টাকা বিক্রি করতে পারেন।
তিনি আরও বলেন, লালমাই পাহাড়ে কাসাভার ভালো ফলন হয়। তবে এর ক্রেতা কম। এক দুটি কোম্পানি এই ফসল সংগ্রহ করে। কোম্পানি যে দাম দেয় তা নিয়েই তাদের সন্তুষ্ট থাকতে হয়। কৃষি বিভাগ এগিয়ে এসে বাজারজাত করার বিষয়টি সম্প্রসারণ করলে কৃষকরা ভালো লাভ পেত। কাসাভায় বদলে যেত পাহাড়ের অর্থনীতি।
কুমিল্লা সদর দক্ষিণ উপজেলার উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. মহিউদ্দিন মজুমদার বলেন, লালমাই পাহাড়ে কাসাভার ভালো ফলন হয়। কৃষি বিভাগ থেকে চাষিদের কীভাবে সহযোগিতা করা যায় সে বিষয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলবেন বলে তিনি জানান।