কুমিল্লায় হাজার কোটি টাকা নিয়ে শতাধিক কোম্পানি উধাও
কুমিল্লায় সমবায় ও কো-অপারেটিভ প্রতিষ্ঠানের আদলে গড়ে উঠা অন্তত শতাধিক মাল্টি লেভেল মার্কেটিং (এমএলএম) কোম্পানি গত প্রায় ১০ বছরে শত শত গ্রাহকের আমানত ও বিনিয়োগের কয়েক হাজার কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। প্রতি মাসে ১ লাখ টাকায় ২ হাজার টাকা করে মুনাফা (লভ্যাংশ) দেওয়ার প্রলোভন দেখিয়ে তাদের নিকট থেকে টাকা সংগ্রহ করে এসব প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা কার্যালয়ে তালা লাগিয়ে উধাও হয়ে গেছে। এমএলএম কোম্পানিগুলোর এমন প্রতারণার ফাঁদে পড়ে নিঃস্ব হওয়া গ্রাহকদের স্বপ্ন এখন চোখের পানিতে ভাসছে।
ভুক্তভোগী গ্রাহক ও বিভিন্ন সূত্রে জানা যায়, ২০১০ সালের দিকে কুমিল্লা শহর ও বিভিন্ন উপজেলা এলাকায় হঠাত্ করে ব্যাঙের ছাতার মতো সমবায়ের আদলে কো-অপারেটিভ প্রতিষ্ঠান গজিয়ে উঠে এবং তারা দৃষ্টিনন্দন প্রধান ও শাখা কার্যালয় স্থাপনের মাধ্যমে ব্যাংকের মতো লেনদেনসহ আমানত ও বিনিয়োগ কার্যক্রম শুরু করে। এর মধ্যে আইডিয়াল কো-অপারেটিভ সোসাইটি লি. (আইসিএল), রুরাল কো-অপারেটিভ সোসাইটি লি. (আরসিএল), আইডিএল, এফআইসিএল, এফআইবিএল, প্রিভেইল, কনজারভেটিভ, মাল্টিভিশন, গ্লোবাল, রাজগঞ্জ প্রাইম, বন্ধন, নিউ মডেল বহুমুখী সমবায় সমিতি, সেমা, ওয়াইডিসিএল, সিসিএল, এসডিসিএল, আরডিসিএল, রিলেশন এবং যমুনা, জাগো ও খিদমাহ্ মাল্টিপারপাসসহ বিভিন্ন নামে অন্তত শতাধিক প্রতিষ্ঠান রয়েছে। গ্রাহকদের অভিযোগ প্রতিষ্ঠানগুলো প্রতি মাসে লাখে ২ হাজার টাকা লভ্যাংশ দেওয়ার প্রলোভন দেখিয়ে ফাঁদে ফেলে আমানত ও বিনিয়োগের কয়েক হাজার কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়ে কার্যালয়ে তালা লাগিয়ে পালিয়েছে। এতে গ্রাহকরা নিঃস্ব হয়ে পড়েছেন।
ভুক্তভোগীরা জানান, সরকারি-বেসরকারি ও অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তা-কর্মচারী ছাড়াও প্রবাসী স্বামী, পুত্র কিংবা ভাইয়ের কষ্টার্জিত টাকা ব্যাংকের পরিবর্তে অধিক লাভের আশায় এসব প্রতিষ্ঠানে আমানত রেখেছিলেন। এ নিয়ে পারিবারিক অশান্তি, সংসার ভেঙেছে অনেক নারী গ্রাহকের। আমানত ও বিনিয়োগের টাকা ফেরত পেতে বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে আদালতে অন্তত শতাধিক মামলা হয়েছে এবং এসব মামলায় হাতেগোনা কয়েক জন ছাড়া অধিকাংশ প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তারা ধরাছোঁয়ার বাইরে রয়ে গেছেন।
সদর উপজেলা পরিষদ কোয়ার্টারের বাসিন্দা অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মকর্তা সাধন ভৌমিক জানান, অবসর জীবনে সুখের আশায় ২০১৩ সালে ৩০ লাখ ৫৭ হাজার টাকা আরসিএল প্রতিষ্ঠানের নগরীর কান্দিরপাড় শাখায় আমানত রাখি। আসল ও মুনাফাসহ আমার ৫৭ লাখ ৭১ হাজার টাকা পাওনা। তারা টাকা নিয়ে পালিয়েছে। জেলা সমবায় কার্যালয়ে অভিযোগ করেও কোনো ফল হয়নি। এখন আমি নিঃস্ব। একই প্রতিষ্ঠানের গ্রাহক মো. জামশেদ ও খোরশেদ আলমসহ অন্তত ১৭ জন আমানতকারী একইভাবে প্রতারিত হয়েছেন বলে দাবি করেন। এছাড়া আইসিএল নামের একটি প্রতিষ্ঠান জেলার বিভিন্ন স্থানে শাখা স্থাপন করে গ্রাহকদের কয়েকশ কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে বলে বেশ কয়েক জন গ্রাহক অভিযোগ করেন। অন্যসব প্রতিষ্ঠানের গ্রাহকের প্রতারিত হওয়ার গল্প একই ধরনের।
এ বিষয়ে জানার জন্য আইসিএল এমডি শফিকুর রহমান ও আরসিএল চেয়ারম্যান শাহজাহান এবং অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তাদের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেও তাদের কার্যালয় ও সেল ফোন বন্ধ থাকায় বক্তব্য নেওয়া যায়নি। জেলা সমবায় কর্মকর্তা মো. রবিউল ইসলাম জানান, জেলায় ৩ হাজার ২০০টি সমবায় ও কো-অপারেটিভ’র মধ্যে অন্তত ১৩০টি ঝুঁকিপূর্ণ তালিকায় রয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠান শত শত গ্রাহকের টাকা নিয়ে প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী মুনাফা দিচ্ছে না। এর মধ্যে অধিকাংশ প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তারা টাকা আত্মসাত্ করে কার্যালয়ে তালা লাগিয়ে পালিয়েছেন। গ্রাহকের কথা চিন্তা করে ঐসব প্রতিষ্ঠানের নিবন্ধন বাতিলও করা যাচ্ছে না।
সূত্রঃ ইত্তেফাক