করোনার কম পরীক্ষা-ধীরগতি নিয়ে কুমিল্লা জুড়ে ক্ষোভ
নাঙ্গলকোটে করোনা ভাইরাসে প্রথম দিকে আক্রান্ত দুজন রোগীর নমুনা সংগ্রহ করা হয় ২৪ দিন আগে। ফলাফলে ২০ দিন পূর্বে তাদের করোনা পজিটিভ আসে। কিন্তু বিশ দিন অতিবাহিত হওয়ার পর রবিবার পর্যন্ত তাদের দ্বিতীয়বার নমুনা সংগ্রহ করা হয়নি। ওই পরিবারের এক সদস্যের সাথে কথা হলে তিনি জানান, ‘ফল পজিটিভ আসলেও প্রথমদিন থেকেই তারা সুস্থ ছিলেন। করোনার কোনো উপসর্গ তাদের ছিলো না। ফল আসার চৌদ্দ দিন পর নমুনা সংগ্রহকারী কর্তৃপক্ষ যোগাযোগ করা হয়েছে। তারা আসবে আসছে বলে আর আসেনি। এদিকে সামাজিকভাবে আমরা ভীষণ চাপের মধ্যে আছি। তাই চিন্তা করলাম, আর পরীক্ষা করাবো না।’ একই অবস্থা কুমিল্লার একটি বেসরকারি হাসপাতালের ডাক্তারের। এগারো দিন পূর্বে তার করোনা শনাক্ত হলেও দ্বিতীয়বার আর নমুনা নেওয়া হয়নি বলে তিনি জানান। জেলার একজন সংবাদকর্মী পাঁচদিন আগে নমুনা দিলেও কোন খবর নেই।
এদিকে কোটবাড়ি বসবাস করা কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক ছাত্রী জানান, ‘আমার মামার পরিবারে পাঁচজনের করোনা উপসর্গ আছে। ঈদের পর এক মামার অবস্থা খারাপের দিকে চলে যায়। বিভিন্নভাবে উপজেলা পর্যায়ে যোগাযোগ করে বাসায় তার করোনা পরীক্ষার চেষ্টা করি। কিন্তু ব্যর্থ হই। উপায় না পেয়ে তাকে সদর হাসপাতালে নেওয়ার পর কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রেফার করা হয়। সেখানে ভর্তি করালে তিনদিন পর নমুনা পরীক্ষা করা হবে জানানো হয়। এদিকে অবস্থা খারাপ দেখে আমরা বাধ্য হয়ে ওপর মহলে যোগাযোগ করলে শনিবার মামার নমুনা সংগ্রহ করা হয়। বাকি চারজনের নমুনা সংগ্রহ করা হয়নি।’ আমি মনে করি, ‘এ অবস্থায় আমাদের মতো সাধারণ মানুষের সেবা পাওয়ার কোনো অধিকার নেই!’ স্বাস্থ্যবিভাগের এমন সমন্বয়হীনতার কারণে কুমিল্লা জেলার মানুষ চরম ঝুঁকিতে রয়েছে।
বিভিন্ন সূত্রে জানা যায়, প্রবাসী ও বিভিন্ন জেলায় কর্মরতদের বাদ দিলেও কুমিল্লায় স্থিতিশীল জনসংখ্যা ৫০ লাখের মতো। দেশে প্রতি দশলাখ জনসংখ্যায় করোনা সন্দেহে রবিবার পর্যন্ত ১৮৭৭ জনের নমুনা সংগ্রহ করা হলেও কুমিল্লায় নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে ১৮৪১ জনের। মোট নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে নয় হাজার ২০৩ জনের। ফল এসেছে আট হাজার ২৯৫টির।
কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, পিসিআর ল্যাব স্থাপনের পর দুই শিফটে প্রতিদিন ন্যূনতম যদি ১৫০ জনের নমুনা পাঠানো হয়, তাহলে গত মে মাসে শুধুমাত্র এ প্রতিষ্ঠান থেকেই সাড়ে চার হাজারের বেশি নমুনা সিভিল সার্জন কার্যালয়ের মাধ্যমে সংগ্রহ করার কথা। কোনো কোনো দিন তিন শিফটে নমুনা সংগ্রহ করা হয়। শনিবার একদিনে মেডিকেল কলেজ থেকে ২৭১ জনের নমুনা সংগ্রহ করে কর্তৃপক্ষ। জেলার ১৭ উপজেলা থেকে করোনা সংক্রমণের শুরু থেকে নমুনা সংগ্রহ করা হচ্ছে। কয়েকদিন বিলম্বে সিটি করপোরেশন থেকেও নমুনা সংগ্রহ শুরু হয়। কিন্তু বিপুল জনসংখ্যার এ জেলা থেকে গত দুইমাসে মাত্র নয় হাজারের কিছু বেশি নমুনা সংগ্রহে জনমনে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। এদিকে জেলায় গণহারে ডাক্তার ও স্বাস্থ্যকর্মী আক্রান্ত হলেও আনুপাতিক হারে সাধারণ জনগণ কম আক্রান্ত হওয়ায় নমুনা সংগ্রহ সঠিকভাবে হচ্ছে কিনা তা নিয়ে জেলার বিভিন্ন মহলে তুমুল আলোচনা চলছে।
দ্বিতীয়বার নমুনা সংগ্রহের ক্ষেত্রে বিলম্ব হওয়ায় ঠিক কী পরিমাণ মানুষ সুস্থ হচ্ছে তা জানা যাচ্ছে না। একইভাবে পরীক্ষা অনেক কম করায় নীরবে সংক্রমণ ঘটাচ্ছে আক্রান্ত ব্যক্তিরা। নীরব বাহক হয়ে উপসর্গবিহীন রোগীরা আতঙ্ক ছড়াচ্ছে।
সচেতন নাগরিক কমিটি কুমিল্লার সভাপতি বদরুল হুদা জেনু বলেন, আমাদের স্বাস্থ্যকর্মকর্তারা কাজ করছেন। কিন্তু সবক্ষেত্রে সমন্বয়ের অভাব আছে। স্ব-স্ব উপজেলায় ঠিকঠাক মতো নমুনা সংগ্রহ করা হলে গ্রাম থেকে কারও কুমিল্লা মেডিকেলে আসার কথা নয়। নমুনা কম সংগ্রহ ও দ্বিতীয়বার পরীক্ষা না হওয়ায় জনগণ ঝুঁকির মধ্যে আছে। আক্রান্ত ব্যক্তিদের আলাদা না করা গেলে বিপদ বাড়বে।
কুমিল্লার সিভিল সার্জন ডা. মো. নিয়াতুজ্জামান জানান, ধরেন একলাখ ব্যক্তি হটলাইনে ও বিভিন্নভাবে নানা উপসর্গের কথা বলে আমাদের সাথে যোগাযোগ করলো, একলাখ ব্যক্তিকেতো পরীক্ষা করা সম্ভব হবে না। সুনির্দিষ্ট উপসর্গ যাদের আছে,তাদের পরীক্ষা হচ্ছে। কারও সমস্যা থাকলে উপজেলা পর্যায়ে যোগাযোগ করলে সমস্যা সমাধান করবে। দ্বিতীয়বার পরীক্ষাও উপজেলা পর্যায়ে হবে।’ আক্রান্ত ডাক্তারের দ্বিতীয়বার নমুনা সংগ্রহের বিষয়ে তিনি বলেন, একজন ডাক্তার নিশ্চয় জানেন, কোন প্রক্রিয়া মেনটেইন করে তিনি দ্বিতীয়বার পরীক্ষা করবেন। তাকে যোগাযোগ করতে বলুন।
যদি উপজেলা পর্যায়ে পরীক্ষার ক্ষেত্রে অবহেলা হয় তবে কী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে জানতে চাইলে তিনি ফোন রেখে দেন।